সময় সংবাদ রিপোর্ট : রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলায় এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। রোববার (৭ আগস্ট) বিকেলে মামলাটি করেন ওই বৃদ্ধার বড় মেয়ে। মামলাটি গ্রহণ করে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৫ আগস্ট) দুপুরে তাহেরপুর পৌরসভার চৌকিরপাড়া মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে।পুলিশ ও মামলার বাদী সূত্রে জানা গেছে, চৌকিরপাড়া মহল্লার সুলতানের ছেলে লোকমান ওরফে রুকু (৪০) শুক্রবার সকালে তার প্রতিবেশী ওই বিধবা বৃদ্ধাকে তার বাড়িতে চাল ঝাড়ার জন্য ডেকে নেন। বিধবা সকাল থেকে দুপুর অবধি রুকুর বাড়িতে চাল ঝাড়ার কাজ করেন। দুপুর ১২টার দিকে রুকু তার বাড়িতে বিধবাকে রেখে পাশের মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যান।দুপুর ২টার দিকে রুকু বাড়িতে এসে বিধবাকে তার চাল ঝাড়ার মজুরি বাবদ কিছু চাল ও নগদ টাকা হাত ধরিয়ে দেন। এসব নিয়ে বিধবা বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় রুকু পেছন থেকে বিধবার হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন।
পরে তিনি বাড়িতে ফিরে এলে তার বড় মেয়ে মহল্লার পল্লি চিকিৎসক ডা. রনিকে খবর দিয়ে নিয়ে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় বিধবার ছোট ছেলে ও বড় মেয়ে বিষয়টি তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদকে অবহিত করেন। মেয়র কালাম ওই দিন রাত ৮টার দিকে তাহেরপুর হরিতলা মোড় আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে একটি সালিশি বৈঠক ডাকেন।বিধবার ছেলে বলেন, ‘ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমরা পার্টি অফিসে উপস্থিত হলে মেয়র কালাম আমাদের সামনে রুকুকে চড়-থাপ্পড় মেরে তাকে মেঝেতে বসায় এবং বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করে আমাদের ৩০ হাজার টাকা নিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। আমরা মেয়রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে পরদিন সকালেই মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করি।’ বিধবার ছেলে ও মেয়ে বলেন, ‘আমার গরিব মানুষ। রুকু মেয়রের নিজস্ব লোক। সে আওয়ামী লীগ অফিসেই দফতরির কাজ করে। তাই মেয়র তার পক্ষ নিয়েছে। আমরা নিরুপায় হয়ে ন্যায়বিচারের জন্য থানায় অভিযোগ নিয়ে এসেছি।’
স্থানীয়রা জানান, রুকু বিবাহিত।
তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। বছর দুই আগে তার স্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে রুকু আর বিয়ে করেননি। মাস দুয়েক আগে রুকু তার বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে স্বেচ্ছায় আওয়ামী লীগ অফিসের দফতরির কাজ ছেড়ে দিয়ে সংসার দেখাশোনা করতেন। এদিকে মামলার পর থেকে রুকু গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানান থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) ফরিদা ইয়াসমীন। তিনি আরও জানান, রুকুকে গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম অভিযানে নেমেছে।রুকুর নামে এমন অভিযোগকে ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেন মেয়র। তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি রুকুর নামে এমন অভিযোগ আসায় শাসন করে তাকে চড়-থাপ্পড় দেয়ার কথা স্বীকার করলেও ভিকটিম পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে দেয়ার কথা অস্বীকার করেন।এ বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে। ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।