সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্টঃবঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে আনা সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই । তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার বিকল্প দেখি না। তাকেই এ দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে।’ প্রসঙ্গত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায় বলে মন্তব্য করেছেন রওশন এরশাদ বলেন, দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা তিনি দেশ নিয়ে কাজ করছেন, করেই যাবেন। উনি ছাড়া বিকল্প কেউ নেই। বিকল্প কাউকে দেখি না।’
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, ‘আমরা সংসদ থেকে বাসায় গিয়েই শুয়ে পড়ি। আর প্রধানমন্ত্রী রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করে চলেছেন। এটা কী করে সম্ভব তা ভেবে আশ্চর্য হয়ে যাই। তিনি দেশ ও দেশের জনগণের জন্য এত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, দেশ অনেক এগিয়েই গেছে। তার নেতৃত্বে আরও এগিয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শভিত্তিক জাতি গড়তে পারলে দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে বড় কোনো বাধা থাকবে না।’
বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে রওশন এরশাদ বলেন, ‘হাজার বছরের পরাধীনতার গ্লানি থেকে দেশ মুক্ত হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীন দেশ দিয়েছেন। তিনি স্বাধীন না করলে স্বাধীন দেশ পেতাম না। সংসদে এসে আমরা সংসদ সদস্য হতাম না। বক্তব্যও দিতে পারতাম না। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে পেয়েছি, ৫৫ বছর ৫ মাস বাঁচতে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘাতকের নিষ্ঠুর বুলেটের আঘাতে প্রাণ না হারালে শতায়ু হতে পারতেন।’
‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ গোটা জাতির জন্য আননন্দঘন সময়। জাতি আজ শ্রদ্ধাভরে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করছে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার স্থপতি হওয়া আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। বিষয়টি এমন নয় যে, বাঙালি হঠাৎ করে স্বাধীনতা পেয়ে গেছে। ছাত্র অবস্থা থেকে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ৬৬’র ছয় দফা দিয়ে স্বাধীনতার সাকো তৈরি করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযদ্ধ, প্রতিটি গণতন্ত্রিক আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছিল কিংবদন্তিতুল্য।’
বঙ্গবন্ধুকে যারা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল, তারাই ইতিহাস থেকে মুছে গেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
রওশন এরশাদ বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখতে পাবো, বাংলাদেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই চূড়ান্ত গন্তব্য থেকে এখনও অনেক দূরে আমরা অবস্থান করছি। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে দুর্গমগীরি পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। উল্লেখযোগ্য বহু অর্জন আমাদের আছে। বড় বড় আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নজর বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধিতে চীন, ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ হচ্ছে পদ্মা সেতু ও নদীগর্ভে টানেল। তবুও বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য অর্জনে আমাদের বহুদূর হাঁটতে হবে।’
‘আমরা রাজনীতি করি, আমাদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শন ও দলীয় আদর্শ থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। এটা আমাদের গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। রাজনৈতিক পথ-মত ভিন্ন হলেও আমরা বঙ্গবন্ধুর দেখিয়ে দেওয়া পথে হাঁটছি’, বলেন তিনি।
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সাথে একই বিমানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রওশন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সাথে সেদিন দেখা না হলে অনুভূতি অসমাপ্ত থেকে যেত। তিনি কতবড় মহান ব্যক্তি তা তুলনা করা যায় না।’
বিরোধী দলীয় নেত্রী জানান, ‘বিমানে বঙ্গবন্ধু তাকে (রওশনকে) ডেকে পাঠিয়েছিলেন। গিয়ে দেখেন বঙ্গবন্ধু শুয়ে আছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।
রওশন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে কত না ভালো হতো। এত কাছ থেকে দেখেছি। আমার অনুভূতি আছে। সেটা ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারব না।’