সময় সংবাদ রিপোর্ট:আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত নির্বাচনের সিদ্ধান্তে জটিল সমীকরণে পড়তে হয়েছে দুদলের শতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীকে। কারণ বৃহত্তর রংপুরের পাঁচ জেলার ২২ আসনের মধ্যে ২১টিই চায় জাপা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মনে করছেন রংপুরে এখন নৌকার শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। তাই আসন ভাগাভাগির শঙ্কায় রয়েছেন দুদলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বৃহত্তর রংপুরের ২২ আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টিকে কয়টি আসন ছাড় দেওয়া হবে, এ নিয়ে চলছে সর্বত্র জল্পনা-কল্পনা। রংপুর জেলায় ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে চারটি এবং জাতীয় পার্টির কাছে রয়েছে দুটি। এর মধ্যে রংপুর সদর আসনের এমপি জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। এ আসনটি জোটগত কৌশলের কারণে এরশাদকে এবারও ছেড়ে দেওয়া হবে এটি নিশ্চিত। রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনের এমপি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা। এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। নেতাকর্মীদের দাবি, এখানে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত এই আসনটিও জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে আসনটি ছেড়ে দিলে সেখানে নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ আসনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছেড়ে দেওয়া হবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আগেই ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া রংপুর-৪ আসনের বর্তমান এমপি টিপু মুন্সীর নাম আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী মোস্তাফা মহসিন বেঙ্গল ও সিরাজুল ইসলাম ভরসা বলছেন, তারা এ আসনটি আওয়ামী লীগকে ছাড় দেবে না। কারণ এটি জাতীয় পার্টির শক্ত ঘাঁটি। রংপুর-৫ আসনের এমপি এইচএন আশিকুর রহমান। তার মনোনয়নের বিষয়টি আগে ঘোষণা হলেও এখন একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এ আসনটি ছাড় দিতে নারাজ জাতীয় পার্টি। জাপার জেলা সভাপতি ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর বলেন, মিঠাপুকুর জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। এখানে জাপা প্রার্থী বিজয়ী হবে। নীলফামারীর চারটি আসনের মধ্যে তিনটিই আওয়ামী লীগের দখলে। একটি জাতীয় পার্টির। এর মধ্যে নীলফামারী-২ আসনে আসাদুজ্জামান নূরের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি তিনটি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বসে আছেন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। এ তিনটি আসনে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী মনোনয়নের দাবিতে অনড়। লালমনিরহাটে তিনটি সংসদীয় আসনের সবই আওয়ামী লীগের দখলে। লালমনিরহাট-১ আসনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের নির্বাচন করবেন, এটি প্রায় নিশ্চিত। তাই এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। গাইবান্ধায় পাঁচটি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে তিনটি, একটি জাতীয় পার্টি ও একজন স্বতন্ত্র এমপি রয়েছেন। এই পাঁচটি আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে চলছে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। কুড়িগ্রাম জেলায় চারটি আসনের একটিও আওয়ামী লীগের হাতে নেই। একটি জাতীয় পার্টির (জেপি) দখলে। অপর তিনটি জাতীয় পার্টির (এরশাদ) দখলে। তবে এবার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কুড়িগ্রামের আসনগুলো ছাড় দিতে চাচ্ছেন না। কুড়িগ্রামের চারটি আসনে আওয়ামী লীগের অন্তত ২০ নেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান বলেন, আমি রংপুর-২, ৩ ও ৫ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। এসব আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান অনেক ভালো। জাতীয় পার্টির পরিবর্তে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আমি বিজয়ী হব। রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-ল জানান, ২০০৮ সালে রংপুর জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সঙ্গে ত্রিমুখী লড়াই করে তিনটি আসন পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এরশাদের জনপ্রিয়তা আগের মতো নেই। তার প্রমাণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ইউপি নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি হয়েছে। তাই জোটগত নির্বাচন হলেই জাতীয় পার্টিকে তাদের ইচ্ছেমতো আসন ছেড়ে দিতে হবে, এমনটি হবে বলে আমি মনে করছি না। অন্যদিকে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর বলেন, নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি। কারণ রংপুর লাঙ্গলের ঘাঁটি। এটি কেউ ভাঙতে পারবে না। রংপুর-৪ আসন মিঠাপুকুর থেকে তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।