সময় সংবাদ রিপোর্ট : গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে নাশকতা মামলার আসামি এবং সাবেক শ্রমিকদলের সহসাধারণ সম্পাদক ছিলেন সুরুজ হক লিটন এখন শ্রমিক লীগ নেতা। সোমবার( ১১ এপ্রিল) জাতীয় শ্রমিক লীগ গাইবান্ধা জেলার সভাপতি খাইরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শুধাংশু কুমার রায়ের স্বাক্ষরিত দলীয় পত্রে পলাশবাড়ী উপজেলা শাখার ২১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে।দলীয় পত্রে জানানো হয় সংগঠনটি চলমান কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশক্রমে নবগঠিত কমিটির অনুমোদন করা হয়েছে৷এ কমিটির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক হিসাবে মনোনীত করা হয় সুরুজ হক লিটনকে । যিনি শ্রমিকদলের গাইবান্ধা জেলা শাখারসহ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ও পলাশবাড়ী উপজেলা শাখার জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাবেক সদস্য। এদিকে লিটনকে শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক করায় গাইবান্ধার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওয়াজেদ হাসান শাওন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাস এখন ভাইরাল। তিনি লেখেছেন, হত্যা মামলায় ৩০ বছর সাজাপ্রাপ্ত আসামি। জেলা শ্রমিকদলের সহসাধারণ সম্পাদক। নাশকতা মামলার দাগি আসামি। তখন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায়। ২০০৪ সালে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া গণঅনাস্থা মানবপ্রাচীর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই কর্মসূচি সফল করতে পলাশবাড়ীতে এসেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু,সহসভাপতি (কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক) সাখাওয়াত হোসেন শফিক, সমাজসেবা সম্পাদক মমিন পাটোয়ারী, ধর্মীয় সম্পাদক ভোলার হিমুভাইসহ একদল কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতারা।
সেদিন সকালে আমাদের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতারাসহ আমরা জেলা ছাত্রলীগ পলাশবাড়ি চৌমাথা পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছিলাম। এই সুরুজ হক লিটন তখন বিএনপি নেতা। চৌমাথা মোড়ের কাছে বাটা শোরুমের পাশে তখন তাদের অফিস। সেই অফিস থেকে লিটন এবং তার ভাইয়ের নেতৃত্বে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া গণঅনাস্থা মানবপ্রাচীর কর্মসূচিতে পলাশবাড়ী চৌরাস্তায় আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা করেছিল চার দলীয় জোটের সন্ত্রাসীরা। সেদিনের হামলার ঘটনায় আমি ওয়াজেদ হাসান শাওন সাক্ষী।যুবলীগ কর্মী সুভাষ দা’র পা এবং আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ আবদুল্লাহ হারুন বাবলু’র হাত ভেঙে দিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। আহত দুজনকে আমি রংপুর মেডিকেলে নিয়ে গিয়েছিলাম। আজকে সেই সুরুজ হক লিটনকে ফুলের মালা পড়ানো হলো। এই দূঃখ আমরা রাখব কোথায়?তিনি আরও লিখেছেন, পলাশবাড়ী থানায় একাধিক নাশকতা ও সহিংসতা, পুলিশের ওপর হামলার মামলা চলমান রয়েছে। এ ছাড়া একটি হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর প্রকাশ্যে হামলা, দলীয় অফিস ভাঙচুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সফল সভাপতি মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ সাকোয়াতজ্জামান বাবু চেয়ারম্যানের ওপর হামলাকারীদের গডফাদারখ্যাত সুরুজ হক লিটন। প্লাবন হত্যা মামলার জেলা দায়রা জজ আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও লুপু হত্যা হত্যা মামলার আসামি যে মামলাগুলো এখনো চলমান। চতুর এ ব্যক্তি রাজনৈতিক সব আদর্শকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বর্তমান পলাশবাড়ী উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ন আহ্বায়ক।
এদিকে লিটনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করায় পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতারা ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ বিষয়ে জানতে জাতীয় শ্রমিক লীগের গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি খাইরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শুধাংশু কুমার রায় এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের ব্যবহৃত নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপাধ্যক্ষ শামিকুল ইসলাম সরকার লিপন বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার সুপারিশপত্র দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগে যে নব্য অনুপ্রবেশ তা মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমরা ভুলে যাইনি মানবপ্রাচীরের হামলার সেদিনের কথা, এর প্রতিবাদ জানাবো এবং ওই কমিটির বাতিলের আহ্বান জানাব।