সময় সংবাদ রিপোর্ট:একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে আজ বৃহস্পতিবার। সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে এক ভাষণের মাধ্যমে এ তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। সিইসির ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে একযোগে সম্প্রচার করা হবে।
এই ঘোষণার পর দেশে যেন কোনো ধরনের সংঘাতময় পরিবেশ তৈরি না হয় তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গত ১ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বরের সংলাপে ঐক্যফ্রন্টে নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তফসিল ঘোষণা না করতে দাবি জানিয়েছেন। তাদের সাত দফা দাবির মধ্যে তফসিল ঘোষণা না করাও একটি।
গত ১ নভেম্বরের পর গতকাল বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সংবাদ সম্মেলন করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তফসিলের সঙ্গে আলোচনার কোনো সম্পর্ক থাকবে না। প্রয়োজনে তফসিল আবার পরেও ঘোষণা করা যাবে। ওটাকে রিসিডিউল করা যেতে পারে।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্ববায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা সেখানে তফসিল ঘোষণা করতে মানা করেছি। তারপরও যদি তারা করে, তাহলে সেটা আমরা পছন্দ করবো না। আমরা আমাদের কর্মসূচিতে আগে বলেছিলাম, আমরা পদযাত্রা করবো নির্বাচন কমিশন অভিমুখে। এবং আমরা বলেছি, এটা বিরোধিতা, আমরা মানছি না। তফসিল তো আবারও করা যেতে পারে। রিসিডিউল করা যেতে পারে। সেই দাবি করা হয়েছে।’
এদিকে উল্টো পথে হাঁটছে জাতীয় পার্টি ও নেতৃত্বাধীন নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। গতকাল বুধবার বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে তারা বৈঠকে বসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে। বৈঠক শেষে জাপা মহাসচিব এ. বি. এম. রুহুল আমিন হাওলাদার তাদের ৮ দফা দাবির কথা গণমাধ্যমে জানান।
এই দাবিগুলোর মধ্যে তাদের এক নম্বরে রয়েছে ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা। এ. বি. এম. রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, আর কোনো সংলাপ হবে না। সুতরাং সংলাপের অজুহাত দিয়ে কমিশনের তারিখ পেছানোর দাবির পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। সুতরাং, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ৮ই নভেম্বর তারিখে করতে হবে।
এছাড়া আজকের দিনেই তফসিল ঘোষার দাবি জানিয়েছে বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি. চৌধুরী) নেতৃত্বাধীণ যুক্তফ্রন্ট। গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন তারা। সেখানে নির্বাচনী তফসিল নিয়ে আলোচনা করেন তারা। পরে গত মঙ্গলবার ইসির সঙ্গে বৈঠকে বসে যুক্তফ্রন্ট।
ইসির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের তফসিল পেছাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবির প্রেক্ষাপটে কারও চাপে কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানায় যুক্তফ্রন্ট।
বিকল্প ধারা মহাসচিব আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন ভবনে সিইসি কে এম নূরুল হুদাসহ নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে ইসিকে বলা হয়েছে, নির্বাচন তফসিল অকারণে বিলম্ব হলে জাতির মধ্যে সংশয়, বিভ্রান্তি ও হতাশার সৃষ্টি হবে, যা কোনক্রমেই কাম্য নয়। এ সময় সংবিধান মেনেই ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণায় মত দেন তারা।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আপত্তি জানালেও আগামীকাল বৃহস্পতিবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় সমর্থন জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপের পর এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এ কথা জানান।
ব্রিফিংয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। নির্বাচন কবে হবে, তফসিল ঘোষণার সেই এখতিয়ার কেবল নির্বাচন কমিশনের। আমরা তাদের বলেছি, এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সমর্থন রয়েছে।’
নির্বাচন কমিশন ও কমিশনের কর্মকর্তারাও তফসিল পেছানোর ব্যাপারে অমত পোষণ করেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল পেছানোর কোনো উপায় নেই বলে জানিয়েছেন সিইসি কে এম নুরুল হুদা। গত মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ইটিআই ভবনে সাংবাদিকদের সিইসি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘তফসিল পেছানোর কোনো উপায় নেই। আমরা তফসিল পেছাবো না। রাজনৈতিক দলগুলোতো একক মতামত দেবে না যে পিছিয়ে যেতে হবে। সব রাজনৈতিক দল যতগুলো আছে দেশে একমত হলে নির্বাচন (ভোটের তারিখ) পেছানো হবে। তবে সংবিধানের বাধ্যবাধকতা আছে সেটার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’