Header Border

ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল) ১৫.৯৯°সে

সমাজের একদম নিচু স্তরে পড়ে থাকা লোকদের টেনে তোলা আমাদের লক্ষ্য -প্রধানমন্ত্রী

*সময় সংবাদ লাইভ রির্পোটঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের অর্থনীতির মূল কথাটাই হচ্ছে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে তাদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়ে, তাদের জীবনটাকে উন্নত করে দেওয়া। ক্ষমতায় বসে শুধু নিজে খাবো, নিজে ভাল থাকব, সেটি তো না। ক্ষমতায় থাকা মানে হচ্ছে মানুষের সেবা করার একটা সুযোগ।  মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ। ঘর পাওয়া মানুষের হাসিই আমার কাছে বড়।
গতকাল রোববার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশের ৪৫৯টি উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন এসব মানুষের হাতে জমির দলিল ও ঘরের চাবি তুলে দেন তিনি। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৪০ পরিবারকে দুই শতাংশ জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের উপজেলা প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের হাত থেকে জমির দলিল ও ঘরের চাবি বুঝে নেন ছিন্নমূল এসব পরিবার। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিজ কার্যালয় থেকে কুড়িগ্রাম সদর, শেরপুরের ঝিনাইগাতি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি ঘর পেয়ে দুঃখী মানুষের মুখে যে হাসি, যে আনন্দ; এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সমাজের একদম নিচু স্তরে পড়ে থাকা লোকদের টেনে তোলা, তাদের মূল সমাজের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা। অর্থনীতির নীতিমালায় আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে একেবারে গ্রাম পর্যায়ে তৃণমূল মানুষের কাছে সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। এই মানুষগুলোর জীবনমান উন্নত করতেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দলিলে জমির মালিকানা স্বামী ও স্ত্রীর যৌথ নামে করে দেওয়া হয়েছে। সেমিপাকা প্রতিটি ঘরে আছে দুটি রুম, একটি বড় বরান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট। পাশাপাশি সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও আছে। এছাড়াও আত্মনির্ভরশীল করতে এসব পরিবারের কর্মসংস্থানের জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তের আলোকে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি এবং গৃহ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এ বছরের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা বাড়ি ও ব্যারাকে ৬৯ হাজার ৯০৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ গৃহ উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের আশ্রয়ণের মধ্য দিয়ে গত ছয় মাসে মোট এক লাখ ২৩ হাজার ২৪৪ ভূমিহীন পরিবারকে ঘর দেওয়া হলো। এরও আগে জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে বহুতল ভবনে একটি করে ফ্ল্যাট প্রদানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত চার হাজার ৪০৯টি পরিবারকে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশ আমি ঘুরেছি। গ্রামগঞ্জে-মাঠে ঘাটে। আওয়ামী লীগ অধিকার নিয়ে কাজ করে। জাতির পিতা মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দিয়েছেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৪২ হাজার ৬০৮ পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছি। এরমধ্যে জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে কক্সবাজারে রয়েছে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প ও আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প। এছাড়াও আমাদের সচিবরা তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ১৬০টি পরিবারকে ঘর করে দিয়েছেন। আমাদের পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থা এ কাজে এগিয়ে এসেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি, বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করবো। এর জন্য শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছি। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং গৃহহীন মানুষকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। বস্তিবাসীর জন্য ঢাকায় ভাড়ায় থাকার জন্য ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি। অর্থনৈতিক নীতিমালায় আমরা তৃণমূলকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। গ্রাম পর্যায়ে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া, তাদের খাদ্য, শিক্ষা ও বাসস্থান নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘ক্ষমতায় থেকে নিজে খাবো, নিজে খাবো, এটা নয়। ক্ষমতা আমার কাছে মানুষকে শান্তিতে রাখা। কীভাবে মানুষকে ভালো রাখা যায় এটা হলো বড়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনও মানুষ গৃহহীন থাকবে না। কোথাও কেউ গৃহহীন থাকলে আমাদের জানাবেন। আমার লক্ষ্য এটাই, বঙ্গবন্ধুর সৃষ্ট বাংলাদেশে কোনও মানুষ ভূমিহারা, গৃহহারা থাকবে না। তবেই আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাব শেষ হচ্ছে না। টিকা নিয়ে আসছি। আরও আনবো। স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে। হাত ধোয়া, মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা দরকার। নিজে ভালো থাকবেন, অন্যকে ভালো থাকতে সহযোগিতা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির মূল কথাটাই হচ্ছে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে তাদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়ে, তাদের জীবনটাকে উন্নত করে দেওয়া। ক্ষমতায় বসে শুধু নিজে খাব, নিজে ভাল থাকব, সেটি তো না। ক্ষমতায় থাকা মানে হচ্ছে মানুষের সেবা করার একটা সুযোগ। মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ। মানুষের সেবক হিসাবে যখনি প্রথম সরকার গঠন করেছি এই ঘোষণা দিয়েছিলাম, সেবক হিসাবেই নিজেকে আমরা তৈরি করেছি এবং সেভাবে সাহায্য করে যাচ্ছি, কাজ করে যাচ্ছি।’
সারাাদেশে গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষের ক্যাটাগরি করে ধীরে ধীরে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে যত আমাদের স্বাবলম্বিতা আসবে আমরা মানুষের জন্য তত বেশি করতে পারব, তত বেশি দিতে পারব। আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা দিয়ে ধীরে ধীরে আমরা যেভাবে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি পাশাপাশি আমাদের সমস্ত সম্পদগুলো চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষ তৃণমূল মানুষ তাদের কাচে পৌঁছাতে তাদের হাতে দিতে এবং তাদের জীবনমান উন্নত করতে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য আমরা সেটাই করে যাচ্ছি।’
২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুনর্ণজয়ন্তীতে মুজিববর্ষ উদযাপন করার কথা প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা এদেশ স্বাধীন করে করেছেন, আমাদের লক্ষ্য তার সৃষ্ট এই বাংলাদেশ এই বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষ একটা ঠিকানা পাবে এবং সেইভাবে বাঁচবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা তার কাজ করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরইমধ্যে আমরা সেমিপাকা ঘর প্রায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি পরিবারকে দিতে সক্ষম হয়েছি। প্রায় ৬৬ হাজার আমরা আলাদা ঘর দিয়েছি বাকিটা ব্যারাক করে দিয়েছি। আজকে আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবারকে দুই শতক খাস জমিসহ সেমিপাকা ঘর ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারগুলোকে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য সুযোগ করে দিচ্ছি।’
সংসদ সদস্য, দলীয় নেতাকর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই কর্মসূচিতে এগিয়ে এসেছেন সেজন্য সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি খুব আনন্দিত যে কমিটিটা তৈরি করার পর সমাজের অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। আমাদের অনেক সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তারাও এগিয়ে এসেছেন। সেখানে তারা অনুদান দিয়েছেন। যেখানে আমরা জমি পাব না, সেখানে এই তহবিল থেকে জমি কিনে দেব, সেখানে আমরা ঘরে করে দেব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবেই আমরা চাচ্ছি যে বাংলাদেশের কোন মানুষ গৃহহারা থাকবে না। তাই আমি দেশবাসীকেও আহ্বান জানাব, আপনারারও নিশ্চয় অবশ্যই দেখবেন, কোন মানুষ যদি গৃহহীন ভূমিহীন থাকে অবশ্যই সেটা আমাদের জানালে আমরা তাদের জন্য ঘর বাড়ির ব্যবস্থা করে দেব।‘আমি মনে করি যে অন্তত এইটুকু করলে পরে আমার বাবার আত্মটা তো শান্তি পাবে। তিনি তো খুশি হবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করি, সেই উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে যাদের আমরা জমি নেই তাদেরও আমরা ঘরবাড়ি করে দেওয়া হয় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তাদেও জমি নেওয়া হয়েছে তাদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। অর্থ্যাৎ কোনো মানুষ যেন একেবারে কষ্টে না থাকে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তাছাড়া আপনারা জানেন যে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় আামাদের কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষষ্ঠীও আছে তাদের জন্য আলাদাভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এটাই আমার লক্ষ্য, যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তার সৃষ্ট বাংলাদেশে একটি মানুষ গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। এই নীতি নিয়েই আমরা চলছি এই নীতি নিয়েই চলব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস, এর প্রভাবটা কিন্তু শেষ হয়ে যাচ্ছে না। আমরা ভ্যাকসিন কিনে নিয়ে আসছি,ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছি এবং আরও ব্যাপকভাবে করবো আরও আনব। কিন্তু সকলের কাছে আমার অনুরোধ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিমালাটা মেনে চলা, মাস্ক পরে যাওয়া, হাত ধোয়া দুরত্ব বজায় রাখা, যেন একজনের দ্বারা আরেকজন সংক্রামিত না হয়। এই ব্যাপারে সবাই একটু সচেতন থাকবেন। সেই অনুরোধ জানাচ্ছি কারণ অনেককে হারিয়েছে এটি আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। আমি সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি, শান্তি কামনা করি। সেই সঙ্গে বলি, আর আমরা আপনজন হারাতে চাই না। কাজেই সবাই যেন একটু স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলেন। আমি মনে করি নিজেসহ ভালো থাকবেন, অপরকে ভালো থাকতে সাহায্য করবেন।’
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মাহবুব হোসেন বলেন, ‘একসঙ্গে এত মানুষকে জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর দেওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল। তিনি মনে করেন, আশ্রয়ণে ছিন্নমূল বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী স্থায়ী আবাসনের পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানেরও সুযোগ পাচ্ছে। এতে দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে।’

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

অভ্যুত্থানের ৪ মাস পেরোতেই ঐক্যে ফাটলের সুর
হঠাৎ উধাও বোতলজাত সয়াবিন তেল, বিপাকে ক্রেতারা
চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস ও সবজি
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা নিয়ে সেনা প্রধানের সাক্ষাৎ
সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় !
সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় !

আরও খবর