সময় সংবাদ রিপোর্ট:নির্বাচনের আগে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর আসছে। উন্নত দেশের মতো সরকারি চাকরিজীবী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য চিকিৎসা বীমা চালু করছে সরকার। এর আওতায় কোনো সরকারি চাকরিজীবী কিংবা তার পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হলে তাদের পুরো চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হবে। এজন্য বেতন থেকে যৎসামান্য অর্থ কেটে নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গত মঙ্গলবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসের মধ্যে এ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি হতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের মুক্ত আলোচনায় সরকারি চাকরিজীবীদের চিকিৎসা বীমা চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্নিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠায়। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, এটি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম সময় সংবাদ কে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য চিকিৎসা বীমা চালুর কাজ চলছে। এ-সংক্রান্ত ফাইল প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্য শিগগির অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রী অনুমোদন করলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে। তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপনে চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত সব সুবিধার কথা উল্লেখ থাকবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আকস্মিক দুরারোগ্যে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা ব্যয় বহন করার মতো পৃথক কোনো হাসপাতাল নেই। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে নিজ খরচে চিকিৎসা নিতে হয়। দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে পরিবারগুলো আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সব গ্রেডের কর্মচারীর চিকিৎসার জন্য মাসিক দেড় হাজার টাকা খুবই অপ্রতুল। আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা বীমার আওতায় আনা যেতে পারে। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথাও উল্লেখ রয়েছে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এটি ভালো উদ্যোগ। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এমন সুযোগ থাকা উচিত। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনেক সুবিধা বেড়েছে। সে হিসেবে চিকিৎসা বীমা দ্রুত হওয়া প্রয়োজন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও গবেষণা সেলের তথ্যানুযায়ী, দেশে সরকারি চাকরির প্রথম শ্রেণিতে কর্মরত রয়েছেন এক লাখ ৪৬ হাজার ৭৯১ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে এক লাখ ১৭ হাজার ৭৬১ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে আট লাখ ২৬ হাজার ৫১৭ জন এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ২ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৪ জন কর্মকর্তা। এতে সারাদেশে মোট সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন ১৩ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৩ জন। চিকিৎসা বীমা চালু হলে এদের প্রত্যেকের চিকিৎসা ব্যয় জোগান দেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ূয়া বলেন, দেশে যেভাবে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে, তাতে বীমা পদ্ধতি চালু হলে অবশ্যই ভালো হবে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত কর্মচারীদের মধ্যে একটা মানসিক চাপ কমবে। এমনকি টাকার অভাবে কারও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। বিশ্বের অনেক দেশেই চিকিৎসা বীমা চালু আছে। এজন্য বীমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে একটা চুক্তি করতে হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী তারা ব্যয় বহন করে। এতে কর্মচারীদেরও প্রতি মাসে নির্দিষ্ট কিছু টাকা জমা রাখতে হয়। তিনি আরও বলেন, এমন ভালো উদ্যোগের সঙ্গে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাওয়া রোধ করার দিকেও সরকারকে নজর দেওয়া উচিত। এজন্য একটা নীতিমালা করা যেতে পারে। কারণ, প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালগুলো ইচ্ছামতো চিকিৎসা ব্যয় বাড়াচ্ছে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
চিকিৎসা বীমার রূপরেখা সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, এজন্য সবাইকে নির্ধারিত হারে প্রিমিয়াম দিতে হবে। এর সুবাদে যখন যার চিকিৎসার প্রয়োজন হবে, তখন তিনি প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা পাবেন। যার চিকিৎসার প্রয়োজন পড়বে না, তিনি ওই বীমার কোনো সুবিধাও ভোগ করতে পারবেন না, কিন্তু প্রিমিয়াম ঠিকই দিতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় একজনের টাকায় অন্যরাও চিকিৎসা পাবেন। বিশেষ করে নিম্নবিত্তদের চিকিৎসায় উচ্চবিত্তদের আর্থিক অংশগ্রহণমূলক সহায়তার বাধ্যবাধকতা থাকবে।