সময় সংবাদ রিপোর্ট:গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমি এখনও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে এই মুহূর্তে দেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি ও গ্রেফতার, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। তবে এ অনুষ্ঠানে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিনের জাতীয় ঐক্যফন্টে যোগ দেয়ার কথা জানান হয়।
একই অনুষ্ঠানে সাবেক অর্থমন্ত্রী এস এম কিবরিয়া ছেলে রেজা কিবরিয়ার গণফোরামে যোগ দেয়ার কথাও জানান ড. কামাল। তবে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ার আগে গণফোরামে যোগ দেন তারা। গণফোরাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি শরিক দল।
সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের পক্ষ থেকে একটি লিখিত বক্তব্যে দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। এতে বলা হয় গণভবন, মন্ত্রীদের বাসভবন, সরকারী অফিস ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাবহার করা হচ্ছে। এগুলো আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন নীরব ভুমিকা পালন করছে। নির্বাচনকালীন সময়ে দেশের প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের পুরোপুরি কর্তৃত্বের মধ্যে থাকলেও আজ অবধি প্রশাসনির কর্মকর্তা, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা আইন বর্হিভূতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিরোধী পক্ষের ওপর হাজার হাজার হামলা-মামলা, গ্রেফতার, বাড়িতে তল্লাশি অব্যহত রেখেছে। এমনকি নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবে তাদেরকেও উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় গ্রেফতার করা হচ্ছে, মামলা দেয়া হচ্ছে। উক্ত ব্যক্তিরা যাতে স্বল্প সময়ে জামিন পেতে না পারে, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সে ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
সরকারি দলের প্রার্থী ও মন্ত্রীরা দাপটের সাথে নির্বাচনী প্রচার ও ভোটারদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরছে। আইন শৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসন তাদের প্রোটোকলসহ সার্বিক সহযোগিতা করছে। অন্যদিকে বিরোধী দলের প্রার্থীদের যার যার নির্বাচনী এলাকায় নিজ বাড়িতে কর্মীদের সাথে ঘরোয়া বৈঠক ও মতবিনিময়ের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করছে। সভার ওপরে বিধি নিষেধ দিচ্ছে এবং নেতাকর্মীদের এসব সভা থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
এরপর ড. কামাল হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, দেশে পাইকারী হারে অ্যারেস্ট বন্ধ হওয়া দরকার। পুলিশকে বুঝিয়ে দেয়া উচিত একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা দরকার। প্রার্থীরা যেন মুক্ত পরিবেশে বক্তব্য রাখতে পারে। তারা যেন তাদের সমর্থকদের কাছে যেতে পারে বিনা বাঁধায়।
তিনি বলেন, পুলিশের কাজ হল এ ব্যাপারে সহযোগিতা করা। কেননা পুলিশ সকলের, শুধু সরকারের বাহিনী না। এটা তাদের প্রমাণ করতে হবে। আমরা যারা বিরোধী দলের আছি আমরা যেন সুশাসনের আওয়তায় আসতে পারি। সুশাসন ভোগ করতে পারি।
তিনি বলেন, আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনের সাথে কথা বলে সন্তুষ্ঠ হতে পারিনি। তিনি এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনকে আহবান জানিয়ে বলেন, আপনার ব্যাপারে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। তিনি বলেন, আগে যা করেছেন তা ভুলে যেতে চাই। এখন নিরপেক্ষ হউন।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনি (সিইসি) এখন যা করছে তা কি আদিষ্ট হয়ে করছেন? কেন আপনি যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া লোকদের ধরাচ্ছেন সে ব্যাপারে তথ্য সহকারে বলেন। নাকি সরকারের সহায়ক হিসাবে কাজ করছেন? যদি তা না হয় আমরা যা করার করব।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ড. কামাল বলেন, আমরা তো কথা বলার আগেই বলেছি প্রধান নির্বাচন কমিশনকে রিমুভ না রিপ্লেস করান। ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা রিলাইয়েবল নয়। অনেক দেশে এজন্য এ প্রদ্ধতিতে ভোট দেয়া বাদ দেয়া হযেছে। এ ব্যাপারে সব দলই বলেছে বাদ দিতে।
সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, মোস্তফা মোহসীন মন্টু, সুলতান মনসুর আহমদ, মফিজুল ইসলাম খান কামাল, এডভোকেট এস এম আলতাফ হোসেন, মোকাব্বির খান, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক আহমেদ, রফিকুল ইসলাম পথিক, মুহম্মদ রওশন ইয়াজদানী, ফরিদা ইয়াছমীন, সাইদুর রহমান সাইদ, আ.ও.ম শফিক উল্লাহ, মোশতাক আহমেদ, খান সিদ্দিকুর রহমান, এম শফিউর রহমান খান বাচ্চু, রফিকুল ইসলাম পথিক, মোহাম্মদ উল্লাহ মধু প্রমুখ।