সময় সংবাদ রিপোর্ট : নারায়ণঞ্জের সোনারগাঁওয়ে বিখ্যাত লিচু পাকতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বাজারে বিক্রিও শুরু হয়েছে। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে। লিচু বাগানের চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান। বিভিন্ন বাগানের লিচু বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। অনেকে সরাসরি বাগান থেকে লিচু কিনছে। সোনারগাঁওয়ে এখন লিচু বাগানে কাঁচা-পাকা লিচু ঝুলছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন লিচু গাছে রঙ ধরেছে। সোনারগাঁওয়ের লিচু আগাম বাজারে আসে বলে দেশের বিভিন্ন স্থানের লিচুর তুলনায় এ লিচুর চাহিদা থাকে বেশি। সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হিসেবে সোনারগাঁওয়ের লিচু সারা দেশে বেশ পরিচিত। বৈশাখের শেষ সময়ে এ লিচু প্রথম বাজারে আসে। এবার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় লিচু বাগানী ও ব্যবসায়ীরা লিচু বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।লিচু চাষিরা জানান, এ বছর দেশের আবহাওয়া লিচু চাষের অনুপোযোগী হওয়ার পরও ভালো ফলন হয়েছে। ফলে এ বছর লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাবেন বলে জানিয়েছেন। এখন ব্যস্ত সময় কাটচ্ছে ব্যবসায়ীরা। লিচু গাছগুলোকে দেয়া হয়েছে ভিন্ন সাজ। কাক ও বাদুড়ের উপদ্রপ থেকে লিচুকে রক্ষার জন্য ইলেকট্রিক বাতি, বাঁশ ও টিনের তৈরি বাজনা স্থাপন করা হয়েছে প্রতিটি গাছে। এরই মধ্যে প্রতিটি লিচু গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে কাঁচা ও অর্ধ পাকা লিচু। বাগানগুলোতে ক্ষণে ক্ষণে বেজে উঠছে টিন ও বাঁশের তৈরি বাজনা। সোনারগাঁওয়ের লিচু দেশের অন্যসব অঞ্চলের লিচুর আগে বাজারে আসে বলে এ লিচুর প্রতি ক্রেতার আগ্রহ বেশি।সোনারগাঁওয়ে বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখে যায়, এখন প্রতিটি বাগানের লিচু গাছে থোকায় থোকায় কাঁচা পাকা লিচু ঝুলছে। ঝাকড়া গাছের ডালে ডালে ঝুলন্ত লাল টকটকে রঙের ছোট ফলের গুচ্ছ লিচুর দৃশ্য খুবই মনোরম। ব্যবসায়ীরা প্রতিটি গাছে বৈদ্যুতিক বাতি, টিনের বাজনা বাজিয়ে উচ্চ শব্দ করে বাদুড় ও কাকের উপদ্রপ থেকে লিচুকে রক্ষা করতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। রাতে এভাবে পাহারা দেয়ার সময় প্রতিটি বাগানে উৎসবের আমেজ লক্ষ করা যায়। লিচু চাষিরা জানিয়েছেন, সোনারগাঁওয়ের লিচু বর্তমানে কদমী, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩ ও এলাচি, পাতি এ পাঁচ ধরনের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য লিচু থেকে বর্তমানে কদমী লিচু চাষের প্রতি চাষিরা মনোযোগী হয়ে পড়েছেন। সোনারগাঁওয়ে অন্যান্য ফসলের চাষ বাদ দিয়ে চাষিরা এখন লিচু চাষে আগ্রহী হয়েছেন। প্রতি বছর এক একটি বাগান চার-পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। তাই চাষিরা কোথাও একটু খালি জায়গা পেলেই সেখানেই কদমী লিচুর বাগান তৈরি করছেন।
এ দিকে সোনারগাঁওয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানে বেশির ভাগই কদমী লিচু চাষ হচ্ছে। এ বছর কদমী লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি শ’ ৪০০-৫০০ টাকায়। পাতি লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি শ’ ২০০-৩০০ টাকায়। এ বছর লিচু চাষের জন্য আবহাওয়া ভালো না থাকায় লিচুর গুটি ও মুকুল নষ্ট হয়ে যায়। তারপরও লিচুর বেশ আশানুরূপ ফলন হয়েছে।জানা গেছে, উপজেলার সোনারগাঁও পৌরসভার, বৈদ্যেরবাজার, মোগরাপাড়া, বারদী, সনমান্দি ও সাদিপুর ইউপির বিভিন্ন স্থানে লিচু বাগান রয়েছে। তবে পৌরসভার সর্দার বাড়ি, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, দুলালপুর, বাড়ি মজলিশ, দীঘিরপাড়, পানাম, অর্জুন্দি, বাগমুছা, দত্তপাড়া, ইছাপাড়া, কৃষ্ণপুরা, হাড়িয়া, পানাম গাবতলী, ষোলপাড়া, ভট্টপুর এলাকায় উৎকৃষ্ট মানের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। সোনারগাঁওয়ের লিচু রঙে ও স্বাদে অতুলনীয়।সাহাপুর গ্রামের লিচু চাষি মোবারক হোসেন জানান, এ বছর লিচুর মুকুল অতিরিক্ত খরায় নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ফলন ভালো হওয়ায় এ বছর আড়াই লাখ টাকা মূল্যের বাগান প্রায় চার লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে।পানাম গাবতলী গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী বাদশা ও মাসুদ বলেন, আমরা লিচুর ফলন না দেখেই বাগান মালিকের কাছ থেকে লিচু বাগান ক্রয় করে থাকি। লিচু ব্যবসায়ীরা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে লিচু ব্যবসা করে। তুলনামূলকভাবে সোনারগাঁওয়ের লিচু দাম বেশ ভালো। কৃষকরা অন্যান্য বছর ক্ষতি পূরণ করতে পারবেন।স্থানীয়রা জানান, অন্যান্য এলাকার লিচুর চেয়ে সোনারগাঁওয়ের লিচু আকারে একটু বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় এ লিচুর চাহিদাও তুলনামূলকভাবে দাম বেশি।লিচু ব্যবসাীয় মুকুল মিয়া জানান, লিচুর ফলন না দেখেই বাগান মালিকের কাছ থেকে ক্রয় করে থাকি। এ বছর ফলন গত বছর থেকে ভালো হয়েছে। সোনারগাঁও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মনিরা আক্তার বলেন, সোনারগাঁওয়ের আবহাওয়া লিচু চাষের জন্য চাষিদের অনুকূলে ছিল না। হঠাৎ খরার কারণে লিচুর অনেক গুটি গাছ থেকে ঝড়ে পড়েছে। তারপরও এ বছর সোনারগাঁওয়ের লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। লিচু চাষিরা বেশ খুশি।