সময় সংবাদ রিপোর্টঃ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চারদিক থেকে ঘেরা খাঁচার মতো। সেখানে নেতাকর্মীরা নিরাপদ মনে করছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘নয়াপল্টনেই বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চারদিক থেকে ঘেরা খাঁচার মতো। সেখানে নেতাকর্মীরা নিরাপদ মনে করছেন না। নয়াপল্টনকেই নিরাপদ মনে করেন। সরকার বা পুলিশের পক্ষ থেকে যা-ই বলা হোক না কেন, বিএনপির সমাবেশ নয়াপল্টনেই হবে।’
‘শেখ হাসিনার মর্জিমাফিক আর কিছুই হবে না। বিরোধীদের আন্দোলনের ঝোড়ো হাওয়া তিনি আর থামাতে পারবেন না। নতুন নতুন প্রহসন ও নাটক করে শেষ রক্ষা হবে না।’
রাজশাহীর গণসমাবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ প্রচণ্ড রকম বাড়াবাড়ি করেছে। তিন দিন আগে থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশের মূল মাঠে ঢোকার চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদের ঢুকতে দেয়নি এবং ভীষণ হয়রানি করেছে।’
‘প্রশাসন ও সরকারি দলের নির্দেশেই গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার পর গতকাল থেকে তিন চাকার পরিবহনও বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়। পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, দাবি-টাবি কিছুই না, বিএনপির সমাবেশ বন্ধ করতেই গরিবের পেটে লাথি মারা। এর মধ্যেও কিছু কিছু সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক তাদের গাড়ি বের করলে পুলিশ হয়রানি ও মারধর করেছে।’
সমাবেশে মানুষের উপস্থিতির বিষয়ে রিজভী বলেন, ‘সব বাধা, হামলা-মামলা ভেদ করে রাজশাহীর সমাবেশে লাখ লাখ জনতা যোগ দিয়েছে। গতকাল পর্যন্ত তারা সমাবেশের মাঠে ঢুকতে না পারলেও চাল-ডাল-মুড়ি-চিড়া-গুড় সঙ্গে নিয়ে পাশের ঈদগাহ মাঠ, রাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় থেকেছেন। খিচুড়ি রান্না করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষের মাঝে বিতরণ করেছেন।
‘এ এক বিস্ময়কর, অভূতপূর্ব দৃশ্য; যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। গতকাল গোটা রাজশাহী ছিল মিছিলের নগরী। আজকে রাজশাহীর ভোর ছিল জনমানুষের কোলাহলে পূর্ণ এক অনন্য ভোর। রাজশাহীর মানুষ কতটা অতিথিপরায়ণ, তা তারা প্রমাণ করে দিয়েছে।’
পরিবহন ধর্মঘট চলায় বিকল্প উপায়ে আসা নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আশপাশের জেলাগুলো থেকে ট্রেনে, মোটরসাইকেলে, প্রাইভেটকারে, হেঁটে দলে দলে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেয়। পথে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নাটোরে তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়।’
‘বিভিন্ন জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে পুলিশ সড়ক আটকে দিলেও বা মিছিলে বাধা দিলেও জনতার স্রোত রোধ করা যায়নি। বিএনপির চলমান এই ধারাবাহিক সমাবেশগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় প্রমাণ করে জনগণ সরকারকে আর এক মুহূর্তের জন্য ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘অর্থনৈতিক ধাক্কা ও দুঃশাসনের কশাঘাতে ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বেসামাল হয়ে গেছে। সরকারবিরোধী হাওয়া প্রবল আকার নিচ্ছে। তাই ছলে-বলে-কৌশলে ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশজুড়ে পুলিশ, র্যাবকে দিয়ে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কো-অপারেটিভ ফ্যাসিজম রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে।’
‘এক ধরনের দুর্ভাবনা থেকেই স্বাধীন কণ্ঠস্বরকে নিবৃত করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা ও গণগ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে। পথে-ঘাটে চলছে পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের মিলিত অপমান, অত্যাচার এবং সহিংস পৈশাচিকতা। মিথ্যা ককটেল বিস্ফোরণ মামলা, কবর থেকে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে হাস্যকর মামলা, অক্ষত গাড়ি ভাঙচুর মামলা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা মিছিল করে নিজেরা ককটেল ফাটিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা করে। কোনো ঘটনা না ঘটলেও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাদের বাদী করে সমানতালে মিথ্যা ককটেল বিস্ফোরণের মামলা দিচ্ছে। গত তিন দিনে ৭৭৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’