সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্টঃ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় আসলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য উৎসবের সময় কিন্তু আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় থাকে। এটা আমাদের আল্লাহর একটা রহমত, আর বাংলাদেশের জনগণের চেতনা যে সব সময় সজাগ এবং তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শ বিশ্বাস করে, এটা কিন্তু প্রমাণিত সত্য।’
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বাধীনতা দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবির।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখের বিষয় আমরা স্কুল খুলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমরা সেটা এখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়াতে আমরা এখন না করে রোজার ঈদের পরে আবার স্কুল-কলেজ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুলে দেব।’
ইতোমধ্যে স্কুল কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সমস্ত হল-ঘরগুলি আছে সেগুলি মেরামত করা, সেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই সুযোগে সে কাজগুলি করে দিচ্ছি। তাছাড়া আমাদের উন্নয়নের কাজগুলি চলতে থাকবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, তার জন্য যা দরকার, সেটা চলবে।’
‘আমরা ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছি এবং ভারতের প্রাইম মিনিস্টার মোদি আমাদেরকে আরও ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছেন।’ এছাড়া ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়া এটা আমাদের কর্তব্য। প্রত্যেকটা মানুষ যেন মাস্ক না পরে বাইরে না যায়। সকলেই যেন মাস্ক পরে। সেটা সকলকেই অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।’
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদযাপন ক্ষমতায় থেকে উদযাপন করার সৌভাগ্যের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সত্যি আমরা খুব আনন্দিত। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে গেছেন। আমরা যে সুবর্ণজয়ন্তী পালন করার সুযোগ পেলাম এবং জন্মশতবার্ষিকীও আমরা উদযাপন করতে পারলাম।’
‘১৯৯৭ সালে স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেই কিন্তু এই উৎসবটা আয়োজন করেছিলাম। সেই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত এবং তুরস্ক (টার্কির প্রেসিডেন্ট সুলেমান) একইসঙ্গে ওইদিন বাংলাদেশে এসেছিলেন। যাদেরকে নিয়ে আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তন স্থাপন করেছিলাম।’
‘কাজেই বাংলাদেশের জনগণ আমাদেরকে সেই সুযোগ দিয়েছিলেন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করে। একটি বিষয় ঠিকই আমরা লক্ষ্য রাখি যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় আসলেও বাংলাদেশের জন্য স্বাধীনতার জন্য উৎসব সে সময়ে কিন্তু আওয়ামী লীগেই ক্ষমতায় থাকে। আওয়ামী লীগেই সরকারে আছে’-বলেন শেখ হাসিনা।
আবার করোনার একটা ধাক্কা আসছে। তাই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে এখন থেকেই আওয়ামী লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পারছি আবার সেই করোনার একটা ধাক্কা আসছে। এখন আমাদের সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এই করোনাভাইরাসে যেন মানুষের কষ্ট না হয়। কাজেই রাজনৈতিক দল হিসাবে তাদের পাশে এটা আমাদের কর্তব্য।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা যখন দেখল কোনো অপপ্রচার করে, কোনো বাধাবিঘ্ন সৃষ্টি করে অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতে পারছে না, সেই মুহূর্তে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।’
১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যখন এই হত্যাকাণ্ড ঘটল। আমরা দেখেছি কিছু মানুষ, পাকিস্তান আবার আসবে এই আশায় ছিল। জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণেই বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, দাবায়ে রাখতে পারেনি। বাংলাদেশটাকে একটা ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরে আমরা যখন দেশ পরিচালনা করা শুরু করলাম এবং ইতিহাসকে আবার মানুষের সামনে তুলে ধরলাম। চক্রান্ত তারপরেও আবার হল। মাত্র ৫ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। আরেক চক্রান্ত করে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। ফল তো শুভ হয়নি। ৫টি বছর আবার বাংলাদেশ পরপর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হলো। সন্ত্রাস সৃষ্টি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বাংলা ভাই সৃষ্টি হলো।’
২০০৮ সালের নির্বাচনের ভোটে নির্বাচিত করার জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকারে আসার পর থেকে এই পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকারে আছে। এই ১২ বছরের বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এটা হতে পেরেছে একারণে, যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, যে আদর্শ জাতির পিতা আমাদের দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই আদর্শ নিয়েই আমরা দেশ পরিচালনা করেছি। এখানে নতুন কিছু না, ম্যাজিক কিছু না। এটা হচ্ছে সেই আদর্শ নিয়েই দেশ চালানো এবং আদর্শকে বাস্তবায়ন করা। যার ফলাফল আজকের বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা এখন এগিয়ে যাচ্ছি, সামনের দিকে। জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ রেখেছিলেন, আমরা এখন উন্নয়নশীল এ দেশকে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি।’ এসময় জাতির পিতার পদাঙ্ক করে মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীনদের মানুষদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কথাও তুলে ধরেনে প্রধানমন্ত্রী।
এগিয়ে যাচ্ছি দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস হয়তো আমাদের সাময়িকভাবে কিছু বাধা সৃষ্টি করেছে। তারপরও কিন্তু আমরা থেমে যায়নি। আমাদের কাজগুলি অব্যাহত রয়েছে এবং অব্যাহত থাকবে। আবার সেই করোনার একটা ধাক্কা আমরা দেখতে পারছি আসছে। এখন আমাদের সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এই করোনাভাইরাসে যেন মানুষের কষ্ট না হয়। কাজেই রাজনৈতিক দল হিসাবে তাদের পাশে এটা আমাদের কর্তব্য। ঠিক আগের মতো আপনাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’ সেই সঙ্গে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরাকরের দেওয়া আগের নির্দেশনাগুলো পালন করারও আহ্বান জানান তিনি।
পাশাপাশি সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার পাশাপাশি দরিদ্র্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাদেরকে সব রকম সহযোগিতা করার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।