*সময় সংবাদ লাইভ রির্পোটঃ গতকাল বৃহস্পতিবার ‘ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার, ২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শেখ কামাল অডিটোরিয়ামে যুক্ত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার আব্বা যেমন সারাজীবন এই দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সন্তান হিসেবে আমরাও। একদিকে যেমন পিতৃস্নেহ বঞ্চিত হয়েছি, কিন্তু আমরা কখনও সেটাকে কষ্ট মনে করিনি। আমার মা সেটা করতে দেননি।
তিনি বলেন, কোনও হা-হুতাশ বা অতিরিক্ত চাওয়া- সেগুলো আমাদের ছিল না। খুব সাধারণভাবে জীবন-যাপন করা, একটা আদর্শ নিয়ে চলা, দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসা এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করা- এটাই আমাদের শিক্ষা। সেই শিক্ষাই কামাল সবসময় অনুসরণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটা চক্রান্ত করে কামালকে গুলী করা হয়। তাকে হত্যারও চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সে যখন বেঁচে যায়, তখন তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, অথচ শেখ কামাল রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, জাতির পিতার ছেলে। অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন-যাপন করতো সে। কখনও বাবা প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি সে জন্য অর্থ সম্পদের দিকে তার কোনও দৃষ্টি ছিল না। ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকেও তার কোনও দৃষ্টি ছিল না।
তিনি বলেন, দেশকে গড়ে তোলা, দেশের মানুষের পাশে থাকা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক অঙ্গন; এসব কিছুই ছিল শেখ কামালের কাছে সব থেকে বড়। সে একজন সংস্কৃতিমনা আবার রাজনীতিবিদ। কখনও বিলাস-ব্যসন- এসব দিকে তার দৃষ্টি ছিল না। এটা আমার বাবা-মায়ের শিক্ষা ছিল। তাছাড়া একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ, সেখানে তো বিলাসিতা করার সুযোগ নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে জাতির জন্য আমার বাবা এত ত্যাগ স্বীকার করলেন, বছরের পর বছর জেল খাটলেন; সেখানে এই দেশের কিছু সংখ্যক মানুষই ষড়যন্ত্র করে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করলো।
তিনি বলেন, নূর আর কামাল একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে কাজ করেছে। যখন বাসা আক্রমণ করে কামাল নিচের বারান্দায় চলে যায়। সে যখন দেখে নূর-হুদা একসঙ্গে ঢুকছে, তাদেরকে তখন বলেছিল যে; আপনারা এসে গেছেন? খুব ভালো হয়েছে। দেখেন বাসা কারা আক্রমণ করেছে। এই কথা শেষ করতে পারেনি ওই নূরের হাতের অস্ত্রই গর্জে ওঠে। ওরা ওখানেই কামালকে নির্মমভাবে গুলী করে হত্যা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, এত বড়ো বিশ্বাসঘাতকতা এই বাংলাদেশে ঘটে গেছে। ১৫ আগস্ট যদি আজকে বাঙালির জীবনে না ঘটতো তাহলে এই জাতি অনেক আগেই বিশ্বে একটা মর্যাদা নিয়ে চলতো। এই হত্যার পর বাংলাদেশকে ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। যদিও সেটা টিকেনি। কাজেই চক্রান্তটা কোথায়, কীভাবে ছিল সেটা নিশ্চয়ই দেশের মানুষ এত দিনে উপলব্ধি করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আর রেহানা দুজনে বিদেশে ছিলাম তাই বেঁচে গিয়েছি। কিন্তু হারিয়েছি আমাদের সবাইকে। তবুও দেশের মানুষের জন্য যদি কিছু করে যেতে পারি সেটাই হবে সব থেকে বড় পাওয়া।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের বহুমুখী প্রতিভার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, দেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতির বিকাশে তার বিরাট অবদান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাংস্কৃতিক দিক থেকে ও ক্রীড়ার দিক থেকে আজকে যে উৎকর্ষতা, স্বাধীনতার পর বিশেষ করে, সেখানে শেখ কামালের একটা বিরাট অবদান রয়েছে।’
তিনি বলেন, শেখ কামালের সাদাসিধে জীবনে দেশকে গড়ে তোলা, দেশের মানুষের পাশে থাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক অঙ্গন বা ক্রীড়া অঙ্গন-এইসব কিছুর উন্নতি করা, এটাই ছিল তার কাছে সব থেকে বড় কথা।
শেখ হাসিনা বলেন, শেখ কামাল বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তন করে, খেলাধূলাকে উন্নত করে এবং আবাহনী ক্রীড়া চক্র গড়ে তোলে। ঠিক এরপূর্বে আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা করা হয়।
তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটা করার পেছনে একটা উদ্দেশ্য ছিল ধানমন্ডি এলাকায় তখন খেলাধূলা বা শিশুদের প্রতিভা বিকাশের কোনো সুযোগ ছিল না। তাই, অঞ্চলের শিশু এবং তরুণদের জন্য একটা খেলাধূলার পরিবেশ তৈরি করাই ছিল কামালের উদ্দেশ্য এবং সে এ ব্যাপারে আলোচনা করেই প্রতিষ্ঠানটা গড়ে তোলে। কাজেই তার সাথে এবং পাশাপাশি আমরা সবাই ছিলাম, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, কামাল যেমন খেলাধূলার দিকে থেকে তেমনি সাংস্কৃতিক চর্চার দিকেও ছিল। চমৎকার গান গাইতে পারতো। স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী সে গড়ে তোলে। নাট্যচর্চার সঙ্গেও সম্পৃক্ততা ছিল। সুরেলা গানের গলার সঙ্গে সে চমৎকার সেতার বাজাতে পারতো।
ক্রীড়া সংগঠনগুলোকে আরো ভালোভাবে গড়ে তোলা শেখ কামালের লক্ষ্য ছিল উল্লেখ করে স্বাধীনতার পর দেশের ক্রীড়া অঙ্গনকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে শেখ কামালের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে আধুনিক ফুটবল খেলা বা ক্রিকেট খেলা বা এই যে খেলাধুলা সেটাকে একটা আধুনিকতার ছোঁয়াটা এবং সংগীত জগতে বা সাংস্কৃতিক জগতে সেখানেও তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে সে অনেক অবদান রেখে গেছে আমাদের সমাজের জন্য।
ক্রীড়াবিদ হিসেবে রোমান সানা (আরচ্যারি), মাবিয়া আক্তার সীমান্ত (ভারত্তোলন), মাহফুজা খাতুন শিলা (সাঁতার), ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে মনজুর কাদের (শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব) এবং ক্যা শৈ ল হ্ন (কারাতে ফেডারেশন), উদীয়মান ক্রীড়াবিদ হিসেবে আকবর আলী (ক্রিকেট) ও ফাহাদ রহমান (দাবা), উন্নতি খাতুন (ফুটবল), ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশন/সংস্থা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, আজীবন সম্মাননায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন এবং ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ওয়ালটন শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার লাভ করেন। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যককে ১ লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ দেয়া হয়।