সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট : দেশে এখনো ৩৩ লাখের মতো শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরে রয়েছে। বিদ্যালয়ের গমনোপযোগী হলেও বিভিন্ন কারণে তারা স্কুলে যাচ্ছে না। এদেরকে বিদ্যালয়ে নেয়ার জন্য চলমানের পাশাপাশি নতুন করে প্রাইমারি স্কুল ফিডিং কর্মসূচির পরিকল্পনা প্রস্তাব করা হয়েছে।এই শিশুদের খাবার দেয়ার জন্যই খরচ হবে পাঁচ বছরে ১ হাজার ৭১৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ৬ কাটি টাকা ব্যয়ে কর্তারা বিদেশ প্রশিক্ষণে যাবেন। পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পাঠানো ১৯ হাজার কোটি টাকা বিশাল ব্যয়ের এই কর্মসূচির প্রস্তাবনা থেকে তথ্যগুলো পাওয়া গেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো কর্মসূচির প্রস্তাবনার তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের শিশুদের তালিকাভুক্তি এবং উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও এখনো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি, তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টি রয়েই গেছে। শিশু অপুষ্টি গ্রাসে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে, যদিও শিক্ষাসহ শিশু বিকাশের জন্য এখনো এটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। একইভাবে প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
এইচআইইএস প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ৮৮ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সমাপ্তির হার ৮০ দশমিক ৮ শতাংশ এবং প্রাথমিক শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা অর্জিত হয়েছে।
তবে ৩৩ লাখ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরে রয়েছে এখনো। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কারিগরি সহায়তায় ২০১১ সাল থেকে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যা চলতি বছর ডিসেম্বরে সমাপ্ত হওয়ার কথা। এই কর্মসূচির মাধ্যম দেশের ১০৪টি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দৈনন্দিন উপস্থিতির ভিত্তিতে প্রতি স্কুল দিবসে ৭৫ গ্রাম ওজন বিশিষ্ট একটি প্যাকেট করে উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন বিস্কুট সরবরাহ করা হয়।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ১৯ হাজার ২৮২ কোটি ৭২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ের এই কর্মসূচির মাধ্যমে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থীকে খাদ্য সরবরাহ করা হবে। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ফরটিফাইড বিস্কুট এবং পুষ্টিকর রান্না করা খাবার- এই দুই ধরনের খাবারের মডালিটিজ কার্যকর করা হবে।
জাতীয় ও মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, প্রোগ্রাম পর্যালোচনা কর্মশালা, ওরিয়েন্টেশন ওয়ার্কশপ এবং ইস্যুভিত্তিক প্রযুক্তিগত সেমিনার, প্রকল্পভুক্ত প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় খাদ্য এবং বিস্কুট সংরক্ষণ, বিতরণ ও মনিটরিংয়ের জন্য বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) নিয়োগ করা হবে। সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তাদের দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ।
ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, মোট কর্মসূচির খরচ ১৯ হাজার ২৮২ কোটি ৭২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। যার পুরোটাই সরকারি। এর মধ্যে খাদ্য ক্রয় বাবদ ১৭ হাজার ১৮৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আর এই খাদ্য বিতরণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭১৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ৬ কোটি টাকা খরচ করতে হবে পরামর্শক সেবা নিতে।
প্রকল্প কর্মকর্তা, অধিদফতরের কর্মকর্তা এবং এনজিও কর্মকর্তাদের দেশে ও বিদেশে সরকারি টাকায় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। আর এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে মেটি ১৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে দেশে প্রশিক্ষণে ১০ কোটি টাকা এবং বিদেশে ৫ কোটি টাকা। করোনার কারণে বর্তমানে বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। তারা এই খরচটি বাদ দেয়ার জন্য বলেছেন।
পরিকল্পনা কমিশনের শিক্ষা উইং বিভিন্ন খাতে খরচের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে। সোস্যাল মোবিলাইজেশন খাতে সাড়ে ৭ কোটি টাকা, খাদ্য বিতরণে প্রায় ১৮ শ’ কোটি টাকা, ৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র খাত ৮ লাখ টাকা পরামর্শক খাতে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণের রূপরেখাও জানতে চেয়েছে। সেটা না হলে যথাসম্ভব সীমিত পরিসরে ব্যয়ের সংস্থান রাখতে হবে।
কমিশন বলছে, ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যেসব স্কুলে রান্না ঘর তৈরি করবে এবং রান্নার সরঞ্জামাদি সামাজিকভাবে জোগাড় করবে সেখানেই কেবল রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হবে। এ ক্ষেত্রে কতগুলো স্কুল তা করতে পারবে সে ধরনের কোনো তথ্যও এখানে উল্লেখ নেই।