Header Border

ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল) ১৩.০৮°সে

৩৯ থানা ফাঁড়িসহ তিন জেলার শতাধিক স্থাপনায় সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন

আলমগীর পারভেজ: ৩৯ থানা ফাঁড়িসহ তিন জেলার শতাধিক স্থাপনায় সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।কয়েকটি স্থানে হেফাজতে ইসলামের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের পর এবার তিন জেলায় কঠোর অবস্থানে পুলিশ। সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়নবগঞ্জের ৩৯ থানা এবং ফাঁড়িসহ শতাধিক স্থাপনায় মেশিনগান চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও মজুদ করা হয়েছে সাউন্ড গ্রেনেডসহ ভাড়ি আগ্নেয়াস্ত্র। বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় প্রস্তুত রয়েছেন। থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও প্রশাসনের কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সশস্ত্র পুলিশ সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামসহ আরো কয়েকটি জেলায় এ ধরণের শতর্কতা জারি করা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯ থানা, পুলিশ ফাঁড়িসহ ২৭টি বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় এবং এর আগে সিলেটের ১৭টি থানাসহ পুলিশ ফাঁড়ি ও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র এবং নারায়ণগঞ্জের সব থানা, ফাঁড়ি, তদন্তকেন্দ্র ও স্থাপনাগুলোতে এলএমজি পোস্ট স্থাপনের তথ্য জানিয়েছে স্ব স্ব জেলা পুলিশ। এসব জেলার থানা, ফাঁড়িতে ভাড়ি মেশিনগানসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়। পুলিশ জানায়, গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নাশকতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সরকারি-বেসরকারি অফিস, রেলস্টেশন, ভূমি অফিস, প্রেস ক্লাব, সঙ্গীত বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা। এমনকি থানায় পর্যন্ত হামলা চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এরপর থেকে এসব নাশকতা এবং জ্বালাও-পোড়াও ঠেকাতে প্রয়োজনে রাবার বুলেট ছাড়াও ভারি অস্ত্র ব্যবহার করা হবে বলে নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। মাঠ পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এমন নির্দেশনা দেওয়ার পরই থানায় থানায় নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ: হেফাজত ইস্যুতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও সহিংসতা রোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে পুলিশ। জেলার সাত থানা, ১৩টি ফাঁড়ি ও তদন্ত কেন্দ্রের সামনে বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বসানো হয়েছে স্বয়ংক্রিয় অত্যাধুনিক লাইট মেশিনগান (এলএমজি)। বুধবার রাত থেকে থানায় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে গুরুত্ব অনুসারে থানা, ফাঁড়ি ও তদন্তকেন্দ্রে এলএমজি পোস্ট ও সিমেন্টের বস্তা দিয়ে বিশেষ ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে পুলিশ সদস্যের সংখ্যা। এসব চৌকিতে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্বপালন করছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, সোনারগা, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার ছাদের ওপর গোল করে সিমেন্টের বস্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে চৌকি। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের এক সদস্য এলএমজি তাক করে বসে আছেন। থানা ও ফাঁড়ির ফটকের সামনেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনায় জেলার সাত থানা ১৩টি ফাঁড়ি ও তদন্তকেন্দ্রে ওই বিশেষ চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। তিনি জানান, বাড়তি নিরাপত্তার অংশ হিসেবে পুলিশের আওতাধীন সব থানা, ফাঁড়ি, তদন্তকেন্দ্র ও স্থাপনাগুলোতে ২০টি এলএমজি পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এখন থেকে এসব জায়গায় ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।

সিলেট:  সিলেটের ১৭টি থানাসহ পুলিশ ফাঁড়ি ও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নগরের ছয়টি থানা, চারটি ফাঁড়িসহ প্রতিটি পুলিশ স্থাপনায় বাঙ্কার তৈরি করে সেখানে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক অটোমেটিক লাইট মেশিনগান (এলএমজি) পোস্ট। পাশাপাশি জেলার ১১টি থানায় এই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি বসানোর কাজ চলছে। একই সঙ্গে, ঝুঁকি বিবেচনায় প্রতিটি থানায় অতিরিক্ত ৩০ থেকে ৫০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
চলমান পরিস্থিতিতে যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনায় এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিটি স্থাপনায় বালু ও মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বাঙ্কার। সেই বাঙ্কারে এলএমজি পোস্ট বসিয়ে পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করছেন। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিবি ও গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের জানান, এসএমপির সব থানা, ফাঁড়ি ও স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি স্থাপনার সামনে বালুর বস্তা দিয়ে বাংঙ্কার তৈরি করে এলএমজি পোস্ট বসানো হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া:  জেলার থানা, পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সংঘর্ষের পর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ। পুলিশের অধীনস্থ সব স্থাপনায় ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করতে অন্তত ২৭টি লাইট মেশিনগান পোস্ট (এলএমজি) স্থাপন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সহিংস ও ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে জেলার বিভিন্ন থানা, ফাঁড়িসহ পুলিশের অন্যান্য স্থাপনায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এলএমজি চেকপোস্ট স্থাপন করা থানাগুলো হলো- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা, আশুগঞ্জ, সরাইল, নাসিরনগর, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর, কসবা, আখাউড়া, বিজয়নগর। পুলিশ ফাঁড়ি ও তদন্তকেন্দ্রগুলো হলো- ১নং শহর পুলিশ ফাঁড়ি, ২নং শহর পুলিশ ফাঁড়ি, ইসলামপুর পুলিশ ফাঁড়ি, ধরখার পুলিশ ফাঁড়ি, চাতলপাড় তদন্ত কেন্দ্র, আউলিয়া বাজার তদন্ত কেন্দ্র। ছয়টি পুলিশ ক্যাম্প- সার কারখানা পুলিশ ক্যাম্প, পিডিবি পুলিশ ক্যাম্প, টোলপ্লাজা পুলিশ ক্যাম্প, শিবপুর পুলিশ ক্যাম্প, ছলিমগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্প, চম্পনগর পুলিশ ক্যাম্প। এছাড়া জেলা পুলিশ লাইন্সে চারটি ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটিসহ মোট ২৭টি এলএমজি চেকপোষ্ট স্থাপন করা হয়েছে। এসব নিরাপত্তা পোস্টে আধুনিক ও ভারি অস্ত্রসহ প্রশিক্ষিত পুলিশ সদস্যদের নিয়োজিত করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, প্রত্যেকটি থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্পে ইতোমধ্যেই জনবল বৃদ্ধিসহ পর্যাপ্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক প্রেক্ষপটে কোনো দুষ্কৃতিকারী যেন পুলিশ স্থাপনায় হামলা বা সহিংস ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত মনিটরিংয়েল ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) রইছ উদ্দিন জানান, হেফাজতে ইসলাম যে তাণ্ডব ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চালিয়েছে, তাতে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায়ও রক্ষা পায়নি। এজন্য আমরা পুরো শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি পুলিশের স্থাপনাগুলোতেও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। যেন পুলিশের স্থাপনাগুলো আক্রান্ত না হয়। কারণ পুলিশ আক্রান্ত হলে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল থাকবে। পুলিশের স্থাপনায় ফের হামলার কোনো তথ্য আছে কি-না এমন প্রশ্নে রইছ উদ্দিন বলেন, আমরা কিছুদিন আগে যে ঘটনা দেখেছি, তা থেকেই মূলত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। তারা (হেফাজত কর্মীরা) থানায় আক্রমণ করেছে, ফাঁড়িতে আক্রমণ করেছে, পুলিশ অফিসে হামলা করেছে। সুতরাং এখন ম্যাসেজ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকার আর সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে তারা যেন এ ধরনের কাজ না করতে পারে, সেজন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

অভ্যুত্থানের ৪ মাস পেরোতেই ঐক্যে ফাটলের সুর
হঠাৎ উধাও বোতলজাত সয়াবিন তেল, বিপাকে ক্রেতারা
চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস ও সবজি
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা নিয়ে সেনা প্রধানের সাক্ষাৎ
সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় !
সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় !

আরও খবর