সময় সংবাদ রিপোর্ট : দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে পাঁচ শতাধিক বোমা বিস্ফোরণের ৪৩টি মামলা আজও ফাইলবন্দি। পুলিশ সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হওয়ায় ১৭ বছরেও নিষ্পত্তি করা যায়নি মামলাগুলো।যদিও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার আশ্বাস দ্রুত সময়ে নেয়া হবে মামলাগুলো নিষ্পত্তির উদ্যোগ।২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সকাল ১১টার পর জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায়। জঙ্গিরা রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে ৪০০ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একে একে ৫০০ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। সেই সঙ্গে লিফলেট বিলি করে নিজেদের সক্ষমতা জানান দেয় জঙ্গিরা।বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে চালানো জঙ্গিদের এ সিরিজ বোমা হামলায় প্রাণ হারান ঝালকাঠি আদালতের দুই বিচারক। আহত হন অন্তত শতাধিক মানুষ। ঘটনার ভয়াবহতায় স্তম্ভিত হয় গোটা দেশের মানুষ। শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে এ জঙ্গি হামলার ঘটনায় সারা দেশে ১৫৯টি মামলা হয়। ২০০৭ সালে জেএমবির শীর্ষ নেতা আবদুর রহমান ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংলা ভাইসহ ৬ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ কার্যকর হয়। তবে এখনো ঝুলে আছে ৪৭টি মামলার কার্যক্রম।দেড় যুগের বেশি সময় পার হলেও এসব মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দুষলেন সাক্ষী হাজির করতে না পারাকে।যদিও মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাসের কথা জানান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।সিরিজ বোমা হামলার এ ঘটনায় নিম্ন আদালতে রায় হওয়া বাকি মামলাগুলোর অধিকাংশই উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ৬৩ জেলায় একযোগে ৫ শতাধিক বোমা ফাটিয়ে দেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থা পাল্টে ইসলামি আইন বাস্তবায়নের আহ্বানসংবলিত প্রচারপত্র ছড়ানো হয় বিস্ফোরণস্থলে। মানুষের তৈরি আইন বাতিল করে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা না করলে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার হুমকিও দেয় সংগঠনটি। হামলায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও এর ব্যাপকতা ছিল অনেক বেশি। এমন হামলা বিশ্বে চমক সৃষ্টি করে। অনেকে প্রশ্ন করেন, কীভাবে জেএমবি এমন হামলা করতে পারে। অনেকে এটাকে অপ্রত্যাশিত বলেও মনে করেন। অপ্রত্যাশিতভাবে নয়, বরং এমন হামলা অনেকটা প্রত্যাশিত ছিল। কেননা, ২০০১ সাল থেকে একের পর এক হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটালেও জেএমবির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অনেকবার সুযোগ পেয়েও সরকার এদের ছাড় দিয়েছে। গোপনে এবং প্রকাশ্যে জেএমবির নেতাকর্মীদের মদত দেয়া হয়েছে। ফলে জঙ্গি সংগঠনটি ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে বড় হামলার পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটে ১৭ আগস্টের এ সিরিজ বোমা হামলা।