সময় সংবাদ লাইভ রির্পোটঃ ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই যাত্রা শুরু করেছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। আজ মঙ্গলবার (৬ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়টির ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দীর্ঘ ৬৮ বছরের পথ চলায় নিজের আলোয় আলোকিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে গৌরব ও ঐতিহ্যে আন্তর্জাতিকভাবে উদ্ভাসিত।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ছয় দফা, গণআন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে রাবির শিক্ষক ও ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ছাত্রদের জীবন বাঁচাতে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেন তৎকালীন প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা। এছাড়াও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হবিবুর রহমান, অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দার, মীর আবদুল কাইয়ুমসহ অনেক ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারী।
আজকের এ অবস্থানে আসতে দীর্ঘ কণ্টকময় পথ পাড়ি দিতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়কে। ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন আগ থেকেই মূলত রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজ প্রাঙ্গনে সমবেত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাস করার দাবি তোলে। এই দাবির পক্ষে আন্দোলন ক্রমস তীব্র হতে থাকে। এক পর্যায়ে এই আন্দোলনে যোগদানের ফলে কয়েকজন ছাত্র নেতা কারারুদ্ধ হন। পরবর্তীতে ছাত্রনেতাদের দাবির পক্ষে থাকায় ডেলিগেশন পাঠানো হয়। এভাবে একের পর এক চাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব দেয় আইন পরিষদ। এই আন্দোলনে একাত্ব হন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখশ।
১৯৫৩ সালের একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাদার বখশ সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, ‘যদি রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না হয় তবে উত্তরবঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে আমরা বাধ্য হব। ’ মাদার বখশের এই বক্তব্যে সাড়া পড়ে দেশের সুধী মহলে এবং সাথে সাথে টনক নড়ে সরকারেরও। অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাশ হয়। নতুন উপাচার্য প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকেসঙ্গে নিয়ে মাদার বখশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। ওই বছর ৬ জুলাই প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকে উপাচার্য নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে।
শুরুতে ১৬১ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ৩০৩ দশমিক ৮০ হেক্টরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ১ হাজার ১৭৭ জন শিক্ষক ও ২ হাজার প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৩৩০ জন (বিদেশি শিক্ষার্থী ৫৮ জন)। ১২ অনুষদের অধীনে বিভাগ রয়েছে ৫৯টি। ১২টি একাডেমিক ভবনসহ বর্তমানে রাবির ছাত্রদের থাকার জন্য আবাসিক হল রয়েছে মোট ১১টি ও ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ৬টি। এছাড়া গবেষক ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক ডরমিটরি।
সুদীর্ঘ সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নিয়ে অনেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছেন। দীর্ঘ এ সময়ে রাবি তৈরি করেছে ভাষা বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সেলিনা হোসেন, ইতিহাসবিদ আব্দুল করিম, তাত্ত্বিক ও সমালোচক বদরুদ্দীন উমর, চলচ্চিত্র পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম, নাট্যকার মলয় ভৌমিক, মাসুম রেজা ও জাতীয় ক্রিকেটার আল আমিন হোসেনদের মতো অসংখ্য গুণীজনকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘বিগত প্রায় সাত দশক ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এর স্নাতকরা দেশ-বিদেশে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সাফল্য ও উৎকর্ষের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। আগামী দিনগুলোতেও সে ধারা অক্ষুণ্ন থাকবে বলে আমি আশা রাখি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এখানে অবকাঠামোগত উন্নয়নের এক গতিশীল ধারা চলছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠছে। এজন্য সরকারের প্রতি আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী জ্ঞানকেন্দ্র।’
দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভিন্ন বিভাগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও লকডাউনের কারণে বড় পরিসরে কোনো কর্মসূচির আয়োজন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার সীমিত পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে।
সময় সংবাদ লাইভ।