সময় সংবাদ রিপোর্ট : সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা না থাকায় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের ’৯১ সালের রূপরেখাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। এই রূপরেখা অনুযায়ী ঐকমত্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতেও রাজি বিএনপি। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ওই সরকারকে দলটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের রোল মডেল মনে করছে।এ অবস্থায় দলগতভাবে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখার খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। এটি ‘গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার’ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা ঐকমত্যের ভিত্তিতে চ‚ড়ান্ত করা হবে। সরকার পতন আন্দোলন চলাকালে বিএনপি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের চুড়ান্ত রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবে বলে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন।
প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত নেতারা বলেন, এই রূপরেখা বাস্তবে রূপ দিতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের কোনো বিকল্প নেই। যেমনটি হয়েছিল ১৯৯০ সালে। সেবার গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়ে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। সংবিধানে না থাকলেও জনগণের চাহিদা অনুযায়ী ১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন- এটি এখন জাতীয় দাবি। সেই নির্বাচন কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সম্ভব নয়। এ জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ’৯১ সালে এরশাদের পতনের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ওই সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করে।সম্প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকার ও জাতীয় সরকারের ফর্মুলা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ সরকার, নির্বাচনের পরে গণতন্ত্রের পক্ষের দল ও ব্যক্তিদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। দলটির নেতারা জানান, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় সরকার গঠনের যে ফর্র্মুলা বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে তা বিস্তারিত জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। সেখানে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা কী হবে তারও খসড়া তৈরির কাজ চলছে। সেখানে দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। একটি হচ্ছে- ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। এটিকে মূল ভিত্তি ধরেই রূপরেখা তৈরি হবে।
২০১১ সালের ৩০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেন সুপ্রিমকোর্ট। এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করলেও সরকার চাইলে পরবর্তী দুটি নির্বাচন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হতে পারে বলে মতামত দেন আদালত। এ বিষয়টিও নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা তৈরিতে কাজে দেবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। সেদিক থেকে সরকার বলতে পারে সংবিধানে নেই, তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে কোনো আলোচনা হতে পারে না। তখন বিএনপি পক্ষ থেকে বিকল্প প্রস্তাবও দেওয়া হবে। সবশেষ ’৯১-এর ফর্মুলা অনুযায়ী জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা তুলে ধরবে বিএনপি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংসদ বহাল রেখেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি নেতারা বলেন, এটিই তাদের মূল অস্ত্র। ওই দুটি নির্বাচনই দেশে ও দেশের বাইরে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। অন্যদিকে ’৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে যোগ হওয়ার পর এর অধীনে ওই বছর অনুষ্ঠিত সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম ও ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচন হয়। ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রশ্ন থাকলেও অন্য নির্বাচনগুলো নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। এই চারটি নির্বাচনের মধ্যে ’৯১-এর নির্বাচনকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের রোল মডেল মনে করে বিএনপি।