সময় সংবাদ রিপোর্ট:জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর বিচারিক আদালতের দেয়া পাঁচ বছরের সাজা বহাল চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মামলার আপিল শুনানির যুক্তিতর্কে এ প্রার্থনা করেন।
পরে আদালত আসামিপক্ষের করা সময় আবেদনের বিষয়ে আদেশের জন্য আগামীকাল বুধবার দিন ঠিক করে দিয়েছেন।
আজ দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান, রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী সময় চেয়ে আবেদন করলে আদালত সময় মঞ্জুর না করলে তারা আদালত থেকে বেরিয়ে যান।
পরে আদালত দুদক ও রাষ্টপক্ষকে যুক্তি উপস্থাপন করতে বললে তারা যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।
শুনানি শেষে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তিতর্কে দুদকের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন চেয়েছি। আইন অনুযায়ী বিচারিক আদালতের ৫ বছর সাজা দেয়া ঠিক হয়নি বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, জিয়া অরফানেজ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার করা আপিলসহ চারটি আবেদনের আজকেসহ ২৮ দিনের মতো শুনানি হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ কার্যদিবসে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অতিরিক্ত সাক্ষ্য দেয়ার জন্য একটা দরখাস্ত নিয়ে এসেছিল। গতকাল তাদের ওই দরখাস্ত শুনে দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের পরে আদেশ দেবেন বলে আদালত নথিভুক্ত করে রাখেন। আজকে সকালে তাদের আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন আদালতে এসে বললেন, তাদের সেই দরখাস্তের বিষয়ে আদেশ দেয়ার জন্য। কেননা তারা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবেন। তখন আদালত বললেন, সেটা আপনাদের ব্যাপার। এ সময় তারা যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য সময় চাইলেন। আদালত সময় আবেদনের বিষয়ে নামঞ্জুর করলে তারা আদালত থেকে বের হয়ে চলে যান।
অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, জিয়া অরফানেজ মামলায় নিম্ন আদালত যে সাজা দিয়েছে তা সঠিকভাবেই দিয়েছে। ওই সাজা যাতে বহাল থাকে আমি সেই মর্মে আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছি।
যেহেতু এই রায়ের বিরুদ্ধে সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করেছেন দুদক। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করিনি। সেজন্য সাজা বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনো বক্তব্য রাখার সুযোগ আমার ছিল না।
তিনি বলেন, আমি আমার বক্তব্যে বলেছি, বিদেশ থেকে যে অর্থ এসেছে। সে অর্থটা ইয়াতিমদের জন্য এসেছে। সেখানে লেখা ছিল প্রাইম মিনিস্টার অরফানেজ ট্রাস্ট। সেই অর্থটা পরবর্তী সময়ে দুইটা এতিমখানায় দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটা হলো বাগেরহাটে জিয়া ম্যামোরিয়াল ট্রাস্ট ও বগুড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে। কাজেই টাকা যে সরকারি টাকা এবং রাষ্ট্রের অর্থ, জনগণের অর্থ এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। নিম্ন আদালত সঠিকভাবেই সাজা দিয়েছে। এই কারণে এ সাজা বহাল থাকে সেটি আমি প্রার্থনা করেছি।
এর আগে সোমবার অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অর্থের উৎসের বিষয়ে পরিষ্কার হওয়ার জন্য অতিরিক্ত সাক্ষ্যগ্রহণ চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে ওই আবেদনের ওপর মামলার আপিলের শুনানি শেষে আদেশ দেয়া হবে বলে অভিমত দেন। পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী তাদের আবেদনের ওপর আদেশ দেয়ার আবেদন করলে আদালত বিষয়টি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন।
আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অর্থ ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা কুয়েতের আমির শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতি রক্ষার্থে এতিমখানা করতে দিয়েছেন বলে খালেদা জিয়ার পক্ষে দাবি করা হয়েছে। অপর দিকে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই অর্থ এসেছে সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে।
সোমবার শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অ্যাডিশনাল এভিডেন্সের জন্য কুয়েতের আমির যে অর্থ পাঠিয়েছেন এটা প্রমাণের জন্য যে ব্যাংকের মাধ্যমে (সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক) অর্থ পাঠানো হয়েছে তার কাগজপত্র চেয়ে আবেদন করেন। ফৌজদারি কার্যবিধি ৪২৮ ধারা অনুযায়ী আপিলেট কোর্টও প্রয়োজনে অতিরিক্ত সাক্ষ্য নিতে পারেন। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন রেফারেন্স দেখান। তারা বলেন, এই মামলার অর্থের উৎস পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। অর্থের উৎস পাওয়া গেলে মামলার মূল বিবেচ্য বিষয় ট্রাস্টের অর্থ পাবলিক ফান্ড না প্রাইভেট ফান্ড তা পরিষ্কার হতো।
অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেছেন, এই মামলার অর্থের উৎস সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে। এ বিষয়টি মামলার ২৬তম সাক্ষীর মাধ্যমে পরিষ্কার হয়েছে। এই পর্যায়ে ২৬ বা ২৭ দিন যুক্তি উপস্থাপনে শেষে অতিরিক্ত সাক্ষ্যগ্রহণের এই আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান, এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের ২৬তম সাক্ষী ও তৎকালীন বাংলাদেশের সৌদি রাষ্ট্রদূত খন্দকার আবদুস সাত্তার সাক্ষ্যে বলেছেন, সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক সাম্বা গ্রুপে একীভূত হয়েছে। তিনি অর্থের উৎসের বিষয়ে সাম্বা গ্রুপের মি. তালাতের কাছে চিঠি লিখেছেন। তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এবং তা পাওয়া মাত্র দেয়া হবে। তবে এরপর অর্থের উৎসের বিষয়ে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ জন্য আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অর্থের উৎস নিশ্চিত হতে হলে অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে।