Header Border

ঢাকা, শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ৩০.৯৬°সে

চাকরি হারানোর ভয়ে শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে

সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট : তৈরী পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের দুই প্রধান সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ ঘোষণা দিয়েছিল একসাথে না খুলে এলাকাভিত্তিক পর্যায়ক্রমে সব কারখানা খোলা হবে। তাদের সে ঘোষণা কার্যকর হয়নি। অনেকটা একযোগে সব কারখানা খুলে ফেলেছেন মালিকরা। বলা হয়েছিল শুধুই নিটিং, ডায়িং ও স্যাম্পল (নমুনা) সেকশন খোলা হবে। বাস্তবে বেশির ভাগ কারখানাতেই কাজ চলছে সব সেকশনে। বলা হয়েছে কেবল কারখানার আশপাশে অবস্থানকারী শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হবে, বর্তমানে অধিকাংশ কারখানায়ই কাজ চলছে পুরোদমে। সমিতির নেতারা সরকারের কাছে কথা দিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং নিরাপদ দূরত্ব রক্ষা করে কাজ করানো হবে। বাস্তবে এটা সম্ভব হচ্ছে না। অবশ্য সব ক্ষেত্রেই মালিকপক্ষের অভিযোগের আঙুল শ্রমিকদের দিকে। তাদের দাবি, বাধা উপেক্ষা করে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছে। আর শ্রমিকরা বলছেন, চাকরি হারানো আতঙ্কে পেটের দায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে যোগদান করতে হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকাসহ এর আশপাশের সাভার, গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত তৈরী পোশাক কারখানায় খবর নিয়ে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ কারখানাতেই কাজ চলছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী পোশাকের যে চাহিদা তৈরি হবে তা পূরণে ব্যস্ত বায়িং হাউজগুলোও। তাদের হাতে প্রচুর অর্ডার। ধরতে না পারলে এ অর্ডার চলে যাবে অন্য দেশে। অর্ডার দেয়ার আগে বায়িং হাউজগুলো দেখতে চায় সংশ্লিষ্ট কারখানাটি চালু আছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক মালিক কারখানা খোলা রেখেছেন।

নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে আশুলিয়ার একটি কারখানার মালিক গতকাল সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, আমাদের হাতে এখন প্রচুর কাজ। নতুন অর্ডারও আছে। এখন যদি অর্ডার ধরতে না পারি তবে কারখানা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। সম্পূর্ণ ঋণের ওপর নির্ভর করে গড়া কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে, করোনা থেকে বেঁচে গেলেও আমি জীবিত থাকতে পারব না। কাজেই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কারখানা খুলেছি। তিনি বলেন, এমন তো নয় যে আমি ঘরে বসে আছি আর শ্রমিকদের কারখানায় এনেছি! জীবনের ঝুঁকি তো আমারও আছে? আমিও কাজ করছি, শ্রমিকরাও করছে। ওরা মারা গেলে তো আমিও মরব! তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান ধরে রাখতে না পারলে বেঁচে থাকার কোনো মানেই নেই!

প্রায় একই ধরনের মন্তব্য এসেছে শ্রমিকদের পক্ষ থেকেও। রামপুরার একটি কারখানায় অপারেটরের কাজ করেন বরিশালের মেয়ে রোকসানা। গতকাল তিনি সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, কাজে এসেছে নিজের গরজে। মালিকরা যতই বলুক চাকরি যাবে না। কারখানা রাখতে না পারলে চাকরি রাখবে কিভাবে! পেটের দায়ে চাকরি করেন জানিয়ে রোকসানা বলেন, কাজ না করলে কি চাকরি থাকবে? আর চাকরি না করলে খাবো কী? করোনার কারণে না খেয়ে বাসায় মরার চেয়ে কাজ করতে করতে কারখানায় মরাই ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ দিকে বেশির ভাগ কারখানায় ঝুঁকির মধ্যে কাজ চললেও সাভার-আশুলিয়ার কয়েকটি কারখানার মালিকপক্ষ কারখানা চালু করতে চাইলেও শ্রমিকদের অনীহার কারণে সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদ, বকেয়া মজুরি ও লে-অফ করা কারখানা খুলে দেয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকেরা নিয়মিত বিক্ষোভ করেছেন। যদিও বিজিএমইএ-বিকেএমইএ থেকে বলা হয়েছে, মালিকরা যেন আপাতত কোনো শ্রমিক ছাঁটাই না করেন। বিজিএমইএর অনুরোধ রক্ষা করা অনেক কারখানার পক্ষেই সম্ভব হবে না জানিয়ে চাকরি হারানো আতঙ্কে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন বলে জানা গেছে।

সরকারের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে বিকেএমইএ গত শনিবার তাদের সব সদস্য কারখানাকে স্যাম্পল, নিটিং ও ডায়িং সেকশন পরদিন রোববার থেকে চালুর নির্দেশনা দেয়। পাশাপাশি বলা হয়, সুইংসহ (সেলাই) অন্যান্য সেকশন ২ মে থেকে খোলা যাবে। তবে জরুরি রফতনি ক্রয়াদেশ থাকলে সংশ্লিষ্ট কারখানা তাদের প্রয়োজনীয় সেকশনগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখনই চালাতে পারবে। অন্য দিকে বিজিএমইএর নির্দেশনা ছিল, রোববার ও সোমবার ঢাকার ২১৩ কারখানা চালু হবে। আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের কারখানা খুলবে ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল। এ ছাড়া রূপগঞ্জ, নরসিংদী ও কাঁচপুরের কারখানা ৩০ এপ্রিল এবং গাজীপুর ও ময়মনসিংহের কারখানা ২ ও ৩ মে চালু হবে। তবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত শুধুই নিটিং, ডায়িং ও স্যাম্পল (নমুনা) সেকশন, ২ মে কাটিং এবং ৩ মে থেকে সেলাই বা সুইং সেকশন চালু করতে পারবে কারখানাগুলো। বাস্তবে এর কোনোটিই মানা হচ্ছে না।

প্রায় সব কারখানায় এবং প্রায় সব শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো প্রসঙ্গে কারখানার মালিকদের দাবি, শ্রমিকরা চাচ্ছে কাজ করতে। কারণ, কাজ না করে সম্পূর্ণ বেতন পাবে এমন আশা তারা করতে পারছে না। এক অংশকে কাজে নিলে অন্যদের চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে। এ কারণে যারা কাজ করতে চায় আমরা সবাইকেই কাজের সুযোগ দিচ্ছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রসঙ্গে তাদের দাবি, বেশির ভাগ কারখানাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন চালাচ্ছে। তবে কারখানার বাইরে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা কঠিন। সে জন্য স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিভিন্ন পরামর্শের আলোকে বিজিএমইএ সদস্য কারখানাগুলোর জন্য একটি গাইডলাইন তৈরি করে সেটি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে। তাতে কারখানায় প্রবেশের সময় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, কর্মীদের জুতায় জীবাণুনাশক স্প্রে ও শরীরের তাপমাত্রা মাপতে থার্মোমিটার ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কারখানার ভেতরে কর্মীদের পরস্পরের কাছ থেকে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, প্রতিবার টয়লেট ব্যবহারের পর তা জীবাণুমুক্ত করা, প্রতিদিন মেশিন জীবাণুমুক্ত করা, খাবারের সময় শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতের নির্দেশনা দেয়া হয়। বিকেএমইএ অনুরূপ কিছু নির্দেশনা তাদের সদস্যদের দিয়েছে।

যদিও বাস্তবে এগুলো অনেকাংশেই মানা হচ্ছে না। কারখানাগুলোয় কাজ চলছে অনেকটা আগের মতোই। কিছু কারখানা শ্রমিকদের অবস্থানগত দূরত্ব একটু বাড়ালেও বেশির ভাগ কারখানায় তা করা হয়নি। অনেক কারখানায় শ্রমিকদের হাত সেনিটাইজ করা এবং মাস্ক সরবরাহের কাজটিও যথাযথভাবে করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। গার্মেন্ট শ্রমিকরা রাস্তাঘাটেও চলাফেরা করছে দলবেঁধে। ফলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েই যাচ্ছে। সেইসাথে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও।

বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ প্রসঙ্গে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে চলা কঠিন। আমরা দেখেছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেষ্টা করেও রাজধানীর বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেনি। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়াল সরকার
উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা
সব বিরোধী দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন
৯৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ আবেদন শুরু, যেভাবে করবেন আবেদন
৯৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ আবেদন শুরু, যেভাবে করবেন আবেদন
মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

আরও খবর