Header Border

ঢাকা, শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ৩৬.৯৬°সে

বিকল্প ফর্মুলা নিয়ে ভাবছে আ’লীগ!

সময় সংবাদ রিপোর্টঃ আদালতের আদেশে এক দশক হয়ে গেল নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়েছে। সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী, দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দুটো নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশ-বিদেশে বিতর্ক এখনো রয়ে গেছে। এ জন্য সরকারকে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রতিনিয়ত নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে সেই প্রশ্ন ও বিতর্ক কাটিয়ে উঠতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। একই সাথে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে মনোযোগ রয়েছে সরকারের। এ জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ অনড় অবস্থানে থাকলেও ভেতরে ভেতরে বিকল্প ফর্মুলা নিয়ে নতুন করে ভাবছে। দলের ভেতর এমন অনানুষ্ঠানিক আলোচনার গুঞ্জন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আগামীতে নিবন্ধিত সব দলের অংশগ্রহণে বিতর্কমুক্ত একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে চান বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করার জন্য সরকারের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নয়ন সহযোগী প্রভাবশালী কয়েকটি রাষ্ট্র ও সংস্থার জোরালো চাপ রয়েছে। অবশ্য আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করার জন্য আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে ক্ষমতাসীনরা। এ দিকে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে অনড় অবস্থানে থাকা দলটির নীতিনির্ধারণী মহল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি কেমন হতে পারে তা নিয়েও ইতোমধ্যে ভাবতে শুরু করেছে। অতীতের বিতর্ক এড়িয়ে কিভাবে বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা যায় সে চিন্তাও করছে ক্ষমতাসীনরা।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইতিবাচক চিন্তা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা বলেছেন। সম্প্রতি গণভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংসদীয় দলগুলোকে নিয়ে আগামী নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে, যদিও ব্রিটেনের ওয়েস্ট মিনিস্টারের গণতন্ত্র অনুসরণ করে দেশে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের উদারতা দেখাতে পারি যে, সংসদে যেসব দল রয়েছে তাদের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে কেউ নির্বাচনকালীন সরকারে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করলে, আমরা তাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এর আগেও এমন উদারতা দেখিয়েছে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে ওই নির্বাচনকালীন সরকারে তার দলের প্রতিনিধি দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা করেনি।

নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে সংবিধানে মন্ত্রিসভা গঠনের ব্যাপারে একক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। এ জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা, এর আকার ও কাকে নেয়া হবে আর কাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়া হবে, তা একান্তই প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে। ২০১৩ সালের শেষের দিকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আগে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপিকে প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে একক ক্ষমতা দেয়া আছে। অতীতের বিতর্ক ঘোচাতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর বড় ধরনের ছাড় দেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকার ব্যাপারে বিএনপির ঘোর আপত্তি রয়েছে। যার ফলে এটি নিয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছতে না পারলে প্রধানমন্ত্রী একক ক্ষমতা বলে নির্বাচনকালীন একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে দিতে পারেন। ওই উপদেষ্টা পরিষদ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালীন দায়িত্ব পালন করবেন। ওই উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা থাকবেন। এ ছাড়া ২০১৩ সালের মতো নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সময় বিএনপিকে আহ্বান করা হতে পারে। দুটো বিষয় নিয়েই দলের মধ্যে আলোচনা আছে। তবে এটি নির্ভর করছে বিএনপির আন্দোলনের গতি এবং আন্তর্জাতিক মহলের চাপও সদিচ্ছার ওপর।

সূত্রে জানা গেছে, এখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প ফর্মুলা দেবে না আওয়ামী লীগ। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিকল্প কোনো প্রস্তাব করা হলে বিএনপি সেটা নাকচ করে দিতে পারে, যেটা সরকারের জন্য অস্বস্তি তৈরি হবে। এ জন্য আগে বিএনপির পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে প্রস্তাব আশা করছে। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল না করার ব্যাপারে এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর সংশোধিত সংবিধানের আলোকে দলীয় সরকারের অধীনে ইতোমধ্যে দুটো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম নির্বাচনে বিএনপি ও তার মিত্ররা অংশগ্রহণ না করলেও দ্বিতীয়বার বিএনপি ও তার মিত্ররা ঠিকই অংশ নিয়েছিল। একাদশ জাতীয় সংসদে তাদের এমপিরাও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। বিএনপির তরফ থেকে বিকল্প কোনো প্রস্তাব না গেলে কিংবা আন্তর্জাতিক মহল থেকে কোনো গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি তুলে না ধরলে সংবিধান অনুযায়ী অতীতের মতোই যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে।

এ দিকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আলোচনা-সমঝোতার মাধ্যমে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকার ও বিরোধী দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের নজির এ দেশে আছে। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে গণ আন্দোলনে তৎকালীন সরকারের পতন হলে ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। সরকার ও বিরোধী দলের সমঝোতায় ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে সংবিধান সংশোধনের (দ্বাদশ সংশোধন) মাধ্যমে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল করা হয়। অবসান ঘটে রাষ্ট্রপতি সরকার পদ্ধতির। তা ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা আছে, জাতীয় সংসদ প্রয়োজন মনে করলে, সামনের আরো দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলো পূর্বশর্ত ছাড়াই আলোচনায় বসে আগামীতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছতে পারলে দেশের রাজনীতিতে আরেকটি উদাহরণ সৃষ্টি হবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল হয়ে গেছে। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সংবিধান সম্মতভাবে যেভাবে বলা আছে সেভাবেই করতে হবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আর ফিরে আসবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে অনেক কিছুই করা সম্ভব। তবে সেটাও সংবিধান অনুযায়ী, সংবিধানের মধ্যে থেকে হতে হবে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়।

নির্বাচনকালীন সরকার গঠন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। আর নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়টি একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারে কাকে রাখবেন কাকে বাদ দেবেন তা তিনিই নির্ধারণ করবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবেই বলেছেন, বিএনপিকে আর ডাকা হবে না। এটাই শেষ কথা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আদালতের রায়ে বাতিল হয়েছে, সেটা আর ফিরে আসবে না। যারা বলছে নতুনভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করা হবে সেটা সঠিক নয়। মানুষের মধ্যে বিভ্রান্ত তৈরি করার জন্য এগুলো বলা হচ্ছে। তাদের বিষয়ে সময় হলে জবাব দেয়া হবে। তবে এটা বলবো, নতুন কোনো পদ্ধতিতে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ চিন্তা করছে না।

অবশ্য গতকাল বুধবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। সংলাপ চলমান থাকবে। আমরা মনে করি, সব কিছুই সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়াল সরকার
উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা
সব বিরোধী দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন
৯৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ আবেদন শুরু, যেভাবে করবেন আবেদন
৯৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ আবেদন শুরু, যেভাবে করবেন আবেদন
মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

আরও খবর