সময় সংবাদ রিপোর্ট : নতুন করে আবারও লাগামহীন বাড়ছে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম। গত এক মাস ধরে অন্তত ৫০ ধরনের ওষুধের দাম ৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল, ডায়াবেটিস রোগের ইনসুলিন ও ইনজেকশনের দাম। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল যেগুলোর পিসপ্রতি দাম বেড়েছে ১২-২০ টাকা পর্যন্ত। দুদিন আগে যে অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুলের বক্স বিক্রি হতো ৫০০ টাকা, দুদিন পর তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা। একটি কোম্পানির ডায়াবেটিসের ওষুধ প্রতি ইনসুলিনের দাম বেড়েছে ১০০-১৫০ টাকা। অর্থাৎ আগের মূল্যের চেয়ে ৪০ শতাংশ দাম বেড়েছে। এ ছাড়া হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধের দামও প্রতি পিসে বেড়েছে ৫০ পয়সা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। বাদ যায়নি ভিটামিন, জ্বর-সর্দির ট্যাবলেট-ক্যাপসুল এবং বিভিন্ন রোগের সিরাপের দামও।
গত কয়েক দিন ধরে সরেজমিন রাজধানীর বড় পাইকারি ওষুধের বাজার মিটফোর্ড, ফার্মগেট, শাহবাগ এবং বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকান ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গত দুই বছরে নানা অজুহাতে ক্রমাগত বেড়েছে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম। ২০২২ সালে দুই দফায় প্যারাসিটামল, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসহ বিভিন্ন ওষুধের দাম ১৩ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল।
যদিও খুচরা দোকানগুলোয় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক ওষুধের দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। নতুন করে আবার দাম বাড়ায় বাড়তি চাপে সাধারণ মানুষ। নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের যেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে নাভিশ্বাস অবস্থা সেখানে নতুন করে ওষুধের দাম বাড়ায় অনেকে বাধ্য হয়ে নিত্যপ্রয়োজনের চাহিদায় কাটছাট করে ওষুধ কিনছেন, অনেকে বাধ্য হয়ে ওষুধ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন।
ওষুধের দোকানিরা বলছেন, যে ওষুধগুলোর দাম এখনও বাড়েনি, নতুন করে সেগুলোর দাম বাড়ানোর জন্য ওষুধ কোম্পানিগুলো থেকে ম্যাসেজ পাঠানো হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় বাকি ওষুধগুলোর দামও বাড়বে।
ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি বলছেন, দাম বাড়ানো ছাড়া অন্য বিকল্প নেই। কারণ ডলারের দর চড়া, ব্যাংক ঋণের সুদ, জ্বালানি খরচ এবং ওষুধের উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। ফলে ওষুধের দামও বাড়াতে হচ্ছে। তবে নতুন করে ওষুধের দাম বাড়ার বিষয়ে কিছু জানে না ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর।ওষুধের দাম বাড়ানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবে যৌক্তিক নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওষুধের দাম যাতে সমন্বয় করা হয়, সে বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সরেজমিন ওষুধের বিভিন্ন মার্কেট ও দোকান ঘুরে দেখা গেছে-এরিস্টোফার্মা লিমিটেডের অ্যান্টিবায়োটিক অপটিমক্স ৪০০ মি.গ্রা. ১০টি ক্যাপসুল গত শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকা। গতকাল রোববার বিভিন্ন ওষুধের দোকানে ওই ওষুধ বিক্রি ৭০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ প্রতি পিসে দাম বেড়ে ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শতাংশের হিসেবে বেড়েছে ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সেফিক্সিম অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল গত ৫ জানুয়ারি বিক্রি হয়েছে প্রতি পিস ৬০ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে পিসপ্রতি ৭২ টাকা। এক বক্সের (৫ পাতা) দাম ছিল ৬০০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭২০ টাকা। অর্থাৎ ৩৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। অ্যান্টিবায়েটিক ডেনভার (১৮টি ক্যাপসুল) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০ টাকায়। গত জানুয়ারির ৫ তারিখে বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকায়। প্রতি ট্যাবলেট বিক্রি হতো ৬০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা। ট্যাবলেটপ্রতি বেড়েছে ১২ টাকা। দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
শিশুদের নিউমোনিয়া, সাইনুসাইটিস, টনসিলাইটিস ও শ্বাসনালির সংক্রমণে ব্যবহৃত এসিআই লিমিটেডের ফ্লুক্লক্স ১২৫ মি.গ্রা. অ্যান্টিবায়োটিক সিরাপ ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৯৫ টাকা হয়েছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকট্রোসিন অয়েনমেন্ট ১৪০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা করা হয়েছে।
ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন ইনজেকশন হুমালগ মিক্স ৫০০ (এক প্যাকেট ৫টি) ৩ এমএলের দাম গত জানুয়ারি মাসে ছিল ৪ হাজার টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৭৫০ টাকা। প্রতি ইনজেকশনের দাম ছিল ৮০০ টাকা এখন তা বেড়ে হয়েছে ৯৫০ টাকা। অর্থাৎ দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এটি বাংলাদেশে আমদানি করে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সিজ (বাংলাদেশ) লিমিডেট।
একইভাবে ডায়াবেটিস রোগীর ইনজেকশন হিউমুলিন ৭০/৩০ (এক প্যাকেট ৫টি) ১০ এমএলের দাম ছিল ৬০০ টাকা। বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯৯৬ টাকায়। বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। নরমিক্স সিক্স (এক প্যাকেট ৫টি) আগের ৯৮০ টাকা থেকে দাম বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকায়। এ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীর বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেটের দামও বেড়েছে।
শিশুদের সর্দিজনিত সমস্যা, অতিরিক্ত হাঁচি, এলার্জি ও গলা ব্যথায় ব্যবহৃত ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ফেনোফেক্স ১২০ মিলি গ্রামের এক পাতা ১০টির দাম ৭০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা। শতাংশের হিসেবে বেড়েছে ৩০ শতাংশ। এরিস্টোফার্মা লিমিটেডের ঠান্ডাজনিত নাকের ড্রপ আফরিন ৪৫ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে।
ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ইউনিক্স-সি লোশন ৬০ এমএল বোতলের দাম ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা হয়েছে। এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ভিটামিন বি-১, বি-৬ এবং বি-১২ নিউরোজেন ট্যাবলেটপ্রতি বক্সের দাম ৪০০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকা হয়েছে। এরিস্টোফার্মা লিমিটেডের হৃদরোগীদের জন্য ব্যবহৃত নাইট্রোকার্ড এসআর ২.৬ মি. গ্রামে (এক পাতা ১০টি) ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যথা নিরাময়ের ক্লোফেন্যাক ৫০ এমজি ট্যাবলেট ৪ টাকা বেড়ে ৫ টাকা করা হয়েছে। মাইকোরাল জেল ১৫ গ্রাম ৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০ টাকা করা হয়েছে।
শাহবাগের বিভিন্ন ওষুধের দোকানে ওষুধ কিনতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের ওষুধের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন রোগী মাজহার হোসেন (৬০)। ১০ বছর ধরে তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শাহবাগ বিপণিবিতানের আবিদ ড্রাগসে আসেন ডায়াবেটিসের ইনসুলিন কিনতে। এ সময় তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
তিনি বলেন, আমার নিয়মিত ইনজেকশন প্রয়োজন হয়। এক মাস আগে এক প্যাকেট হুমালগ মিক্স কিনেছি ৪ হাজার টাকায়। এখন দাম চাইছে ৪ হাজার ৭৫০ টাকা। অর্থাৎ এক ইনজেকশনের দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা। এটি ভাবা যায় না। এভাবে দাম বাড়লে তো ওষুধ না খেয়ে মরতে হবে।
ইনজেকশনের দাম বাড়া সম্পর্কে আবিদ ড্রাগসের স্বত্বাধিকারী বিপ্লব হাসান বলেন, ‘নতুন বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডায়াবেটিসের রোগীর ইনসুলিন, ইনজেকশন, ট্যাবলেটসহ প্রায় প্রতিটি ওষুধের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে যেসব ওষুধ বাইরে থেকে আমদানি করা হয়, তার সবই দাম বেড়েছে। অনেক ইনসুলিন রয়েছে যেগুলোর দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। আর যেসব কোম্পানির এখনও বাড়েনি তাদের প্রতিনিধিরা বাড়াবে বলেও জানিয়েছেন। কোম্পানি দাম বাড়ালে তো আমাদেরও বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
গতকাল দুপুরে ফার্মগেটের সুনান ফার্মা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গিয়ে কোন কোন ওষুধের দাম বেড়েছে জানতে চাইলে ফার্মেসির মালিক সৈয়দ সাদিকুল ইসলাম বলেন, আমি যে ওষুধের দিকে তাকাই সেদিকেই দেখি দাম বাড়ছে। কোনটা রেখে কোনটা বলব। নতুন বছরে অনেক ওষুধেরই দাম বেড়েছে। আবার যেসব কোম্পানির দাম বাড়ায়নি তারাও মোবাইলে দাম বাড়ানোর জন্য মেসেজ পাঠাচ্ছে। কারণ সবকিছুর দাম বাড়ছে। তাই ওষুধের দামও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।
ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রায় দেড় হাজারের বেশি অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগের (জীবন রক্ষাকারী ওষুধ) ২৭ হাজারেরও বেশি ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় রয়েছে ২১৯টি। তার মধ্যে ১১৭টি ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সরকার। অন্য সব ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। অথচ একসময় দুইশর বেশি ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দিত সরকার। কিন্তু সেই সংখ্যা এখন কমে গেছে। অধিদফতরের তথ্য মতে ২০২২ সালে দুই দফা বাড়ানো হয় বিভিন্ন ওষুধের দাম। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বহুল ব্যবহৃত ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়। তার মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার প্যারাসিটামলের দাম ৫০ থেকে শতভাগ বাড়ানো হয়।
নতুন করে ওষুধের দাম বাড়ার যুক্তি তুলে ধরে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব এসএম শফিউজ্জামান বলেন, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে ডলারের দাম। ব্যবসায়ীরা ওষুধের কাঁচামাল কিনতে ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছে না। একসময় ডলারের মূল্য ছিল ৮৬ টাকা। এখন ডলারের দাম বেড়ে অফিসিয়ালি ১১০-১১১ টাকা হয়েছে। আমরা ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করতে ১১৯-১২০ টাকায় ডলার কিনছি। স্বাভাবিকভাবেই ওষুধের কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন ব্যয়, প্যাকেজিং মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ বেড়েছে। ফলে কিছু কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে এমনিতেই ওষুধের দাম অনেক বেশি। গত দুই বছরে ওষুধের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এতে অনেক রোগী, যারা ক্রনিক রোগে ভোগে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা ধরনের রোগের ওষুধ খেতে হয়, তারা নিয়মিত ওষুধগুলো খেতে পারছে না। ফলে দাম বাড়ার কারণে মানুষের মধ্য এক ধরনের নাভিশ্বাস উঠেছে। কারণ একজন মানুষের যে পরিমাণ পুষ্টির প্রয়োজন দাম বাড়ার কারণে রোগীরা ওষুধ খেতে পারছে না। তাতে করে মানুষের স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাবে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মুখপাত্র ও উপপরিচালক মো. নূরুল আলম বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বাজারে প্রায় ১ হাজার ৭০০ জেনেরিক ওষুধ রয়েছে। এর মধ্যে ১১৭টি জেনেরিকের ৪১৭ অত্যাবশকীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ করে সরকার। দাম বাড়াতে হলে কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। যেমন কোম্পানি কাঁচামাল, উৎপাদন খরচ, প্যাকেজিং খরচের বিষয়ে জানিয়ে ভ্যাট প্রদানের নিমিত্তে মূল্য নির্ধারণের জন্য ঔষধ প্রশাসনে দাখিল করে। পরে ঔষধ প্রশাসন যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদন করে। তবে নতুন করে ওষুধের দাম বাড়ানোর বিষয়ে অথেনটিক কোনো প্রমাণ নেই। ফলে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’