Header Border

ঢাকা, শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ২৯.৯৬°সে

ঈদের বাজারে জাল টাকার আতঙ্ক ।।

Computer generated 3D photo rendering.

আলমগীর পারভেজ: ঈদের বাজারে জাল টাকার আতঙ্ক। শক্ত আইন হলেও থামছে না জাল টাকার কারবারি। মুদ্রা বা নোট জালকারী, জাল নোট সরবরাহ, পাচার, লেনদেন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা তৎপরতা রয়েছে। এরপরও থেমে নেই জাল টাকা তৈরী। প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের বাজারে জাল টাকা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে কয়েক কোটি টাকার জাল টাকা বাজারে ছাড়া হয়েছে বলে ধারনা করছেন গোয়েন্দারা। গতকাল রোববার গোয়েন্দরা ৪৬ লাখ টাকা ও জাল টাকা তৈরির সামগ্রীও জব্দ করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে দুই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারসহ চারজনকে। পুলিশ জানিয়েছে, এই টাকা ঈদ বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল চক্রটি।

জানা গেছে, ৫০০ বা ১,০০০ টাকার নোট  বিশেষ করে তা যদি হয় কড়কড়ে নতুন তাহলে সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই নোটগুলো নেড়েচেড়ে দেখেন। তুলে ধরেন সূর্যের দিকে অথবা আলোর দিকে মুখ করে।  কতক্ষণ ঘষেও দেখেন।  তারা নিশ্চিত হতে চান যে নোটটি আসল না নকল।  কারণ তারা জানেন যে বাজারে জাল টাকার ছড়াছড়ি।  চক্রের সদস্যরা যে কোনো সময় জাল টাকা চালান করে দিতে পারে।  আর রাতে এই আতঙ্ক আরো বেশি। সূত্র জানায়, এবার ৫০০ ও ১,০০০ টাকার জাল নোটই বেশি।
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে গত ২৫ এপ্রিল থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের সব দোকানপাট, শপিং মলসহ সব ধরনের মার্কেট। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কেনাকাটার জন্য মার্কেট খোলা রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হলেও পরে তা বাড়ানো হয়। স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে রাজধানীতে প্রতিদিন রাত ৯টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। এর পর থেকে ঈদ সামনে রেখে ক্রেতাদের সমগাম বাড়তে থাকে বিপনিবিতান ও শপিং মলগুলোতে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে জালনোট প্রতারক চক্র। ঈদবাজারে ভিড়ের মধ্যে কৌশলে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে জাল নোট।
এদিকে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে জাল টাকার একটি কারখানা আবিষ্কার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ।  এ ঘটনায় একজন নারীসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এই দলের দুজন আবার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। একটি খ্যাতনামা ফোন কোম্পানিতে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ করতেন তাদের একজন। পুলিশের গোয়েন্দা (গুলশান) বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। দলনেতা জীবন এর আগেও জাল টাকা তৈরির দায়ে দুইবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বেরিয়ে আবার জাল টাকা বানাতে শুরু করেছেন। জীবনকে বেশ কিছুদিন ধরে পুলিশ অনুসরণ করছিল। অবশেষে তিনি ধরা পড়েন। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে জাল ৪৬ লাখ টাকা ও জাল টাকা তৈরির সামগ্রীও জব্দ করেছে পুলিশ। খাটের তলায়, জাজিমের নিচে, আলমারিতে কাপড়চোপড়ের ভেতর থেকে পুলিশ ওই জাল টাকা বের করে আনে।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে পিয়াস ও ইমাম হোসেন বরিশাল পলিটেকনিক থেকে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে ডিপ্লোমা করেছেন। ইমাম নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। অপর আসামি পিয়াস বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক কলেজ থেকে পাওয়ারের ওপর ডিপ্লোমা করেন। বেশি টাকা পাওয়ার লোভে ভালো চাকরি ছেড়ে দিয়ে জাল টাকা তৈরির অবৈধ কাজে জুটে যান দুজনই। পুলিশ জানায়, জাল টাকার কারবারিরা সহজে তাদের ডেরার ব্যাপারে মুখ খোলেন না। জীবনও খুলছিলেন না। কারখানাটির খোঁজে বসিলা চষে ফেলার পর তারা জানতে পারে, জীবনের কারখানা কামরাঙ্গীরচরে। পরে কামরাঙ্গীরচরের একটি বাসায় ঢুকে অন্যদের আটক করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, দুটি প্রিন্টার, হিট মেশিন, বিভিন্ন ধরনের স্ক্রিন, ডাইস, জাল টাকার নিরাপত্তা সুতা, বিভিন্ন ধরনের কালি, আঠা এবং স্কেল কাটারসহ আরও অনেক সামগ্রী উদ্ধার হয়। পুলিশ বলছে, তারা আরও দেড় কোটি জাল টাকা তৈরি করার মতো সরঞ্জাম মজুত করেছিলেন।  এই দুই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের তৈরি জাল টাকার মান উন্নত। খালি চোখে দেখে বোঝারই উপায় নেই এগুলো জাল। ঈদ সামনে রেখে জাল টাকার উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
খালি চোখে জাল নোট চেনার উপায়: আসল ব্যাংক নোট ও জাল নোটের মধ্যে পার্থক্য করা অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর সাধারণ মানুষের হাতে জাল নোট চলে আসলে ক্ষতির সম্মুখীন হন তারা। অনেকক্ষেত্রে আইনগত জটিলতাতেও পড়তে হয়। সাধারণ কয়েকটি নিরাপত্তা চিহ্নের ব্যাপারে খেয়াল রাখলে যে কেউ আসল নোট চেনার ব্যাপারে সতর্ক হতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে আসল নোটের কিছু বৈশিষ্ট্য
১. প্রথমত অমসৃণ মুদ্রণের বিষয়টি লক্ষ্য করা। বাংলাদেশের ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের ডানপাশে হেলানো ৭টি সমান্তরাল লাইন থাকে। হেলানো লাইনের নীচে বৃত্তাকার ছাপ দেখা যায়। ১০০০ টাকার নোটে ৫টি, ৫০০ টাকার নোটে ৪টি এবং ১০০ টাকার নোটে ৩টি বৃত্তাকার ছাপ থাকে। এই সমান্তরাল লাইন, বৃত্তাকার ছাপ এবং সামনে-পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংক লেখা ইন্ট্যাগলিও পদ্ধতিতে মুদ্রণ করায় এগুলো অমসৃণ অনুভূত হবে।
২. নোটের বাম পাশে থাকা নিরাপত্তা সূতার দিকে নজর দিতে হবে। নোটের নিরাপত্তা সূতা হলোগ্রাফিক এবং রং পরিবর্তনশীল হয়। অর্থাৎ, নোট নাড়াচাড়া করলে এর রং বদলাবে এবং ছোট ছোট হরফে বাংলাদেশ ব্যাংক লেখাটি ভেসে উঠবে। ১০০০ টাকার লাল নোটটি আলোর বিপরীতে ধরলে নিরাপত্তা সূতায় ‘১০০০ টাকা’ লেখা দেখা যাবে। নিরাপত্তা সূতাটি আসল নোটে এমনভাবে গাঁথা থাকে যে ধারালো কিছু দিয়ে ঘষলেও উঠে আসবে না। জাল নোটে এটা আঠা দিয়ে লাগানো থাকায় সহজেই উঠে আসে।
৩. নোটের জলছাপগুলো খেয়াল করুন। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত নোটগুলো আলোর বিপরীতে ধরলে শেখ মুজিবের ছবি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং উজ্জ্বলভাবে নোটের ইংরেজি মূল্যমান দেখা যাবে। তবে, লাল রঙের ১০০০ টাকার নোটের ক্ষেত্রে শাপলা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম দেখা যাবে। এছাড়া উজ্জ্বল মূল্যমানটি থাকবে শহীদ মিনারের ছবির উপরের দিকে।
৪. ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের প্রত্যেক প্রকার নোটের উপরের ডানদিকে কোনায় ইংরেজি সংখ্যায় লেখা নোটের মূল্যমান রঙ পরিবর্তনশীল কালিতে মুদ্রিত রয়েছে। ১০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট আস্তে আস্তে নড়াচড়া করলে নোটের মূল্যমান লেখাটি সোনালী হতে ক্রমেই সবুজ রঙ এ পরিবর্তিত হয়। একইভাবে ৫০০ টাকা মূল্যমানের নোটে ৫০০ মূল্যমান লেখাটি লালচে হতে পরিবর্তিত হয়ে সবুজ হয়। জালনোটে ব্যবহৃত এ রঙ চকচক করলেও তা পরিবর্তিত হয় না। ১০০০ টাকার নোটের পেছনের বাম অংশে আড়াআড়িভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক লেখাটি হালকাভাবে মুদ্রিত দেখা যাবে। যেটা নাড়াচাড়া করলে বোঝা যাবে।
এটিএম বুথে জাল নোট পেলে করণীয়: টাকা তোলার জন্য এটিএম বুথগুলোকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মনে করা হলেও মাঝেমধ্যেই এখান থেকেও জান নোট পাওয়া যায়। তবে, ব্যাংকের কাছে বিষয়টি প্রমাণ করতে পারলে টাকাটি ফেরত পেতেও পারেন।
এক্ষেত্রে বুথ থেকে জাল টাকা হাতে পাওয়ার বিষয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। নোটের নম্বরটি বুথের সিসিটিভি ক্যামেরার সামনে দেখাতে হবে। এছাড়া বুথের নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীর কাছে বিষয়টি অবহিত করে তাদের সঙ্গে থাকা খাতায় নোটের নম্বর, বিবরণ ও অভিযোগের বিষয়টি লিখে আসতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে এবং কোন বুথে কবে কোন সময় টাকাটি তুলেছেন সেটা জানাতে হবে। প্রচলিত আইনানুযায়ী, জাল নোট যার হাতে থাকে তাকেই বিচারের আওতায় আনা হয়। তাই কোনো নোট নিয়ে সন্দেহ হলে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা অন্য যেকোনো ব্যাংকে অবহিত করা উচিৎ। তবে ওই জাল নোটের বিপরীতে আসল নোট ফেরত পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার
থাইল্যান্ড গেলেন প্রধানমন্ত্রী
তাপদাহে হিট অ্যালার্টের মেয়াদ আরও বাড়াল আবহাওয়া অফিস
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়াল সরকার
উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা
সব বিরোধী দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন

আরও খবর