Header Border

ঢাকা, শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ৩৭.৯৬°সে

ভাসানচরের ভবিষ্যৎ কী

সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট: নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার দুই সাংবাদিক ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত আবাসস্থল দেখতে গেছেন বেশ কয়েকবার। সাম্প্রতিক সময়ে সাগর বেশ উত্তাল থাকায় হাতিয়া থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের এই চরে যাওয়ার সাহস করেননি তারা। তাদের মতে, সাগরে ভাসানচর যাওয়া-আসার চ্যানেল ভয়ংকর বিপদসংকুল। প্রায়ই সেখানে জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে। ফলে বর্ষা মৌসুমে উত্তাল সেই পথে স্থানীয়দের চলাচল থাকে না।

দেড় বছর আগে সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন কিরণ ও শামীমুজ্জামান শামীম যখন ভাসানচরে গিয়েছিলেন তখনই সেটি রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত ছিল। সব উন্নয়নযজ্ঞ শেষে রোহিঙ্গাদের অপেক্ষায় প্রহর গুনছিল হাতিয়ার মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা এই চর।

তবে ভাসানচরে নির্মিত নতুন ঘরগুলো দুই বছর ধরে কার্যত শূন্যই পড়ে আছে। শুধু গত মার্চে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে সাগরে ভাসমান থাকা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে দুই দফায় সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা ঝুঁকি এড়াতে তাদের এখানে রাখা হয়েছে। তারা সেখানে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। নৌবাহিনীর সদস্যরা এসব রোহিঙ্গার দেখভাল করছেন। তবে কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গাদের নেওয়া না গেলে ভাসানচরে নির্মিত ঘরগুলো অব্যবহূত থেকে নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস থেকে এই চরের ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে নৌবাহিনী ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করেছে।

এক লাখ রোহিঙ্গাকে রাখার জন্য সেখানে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়। তবে সেখানে যেতে রোহিঙ্গাদের প্রবল অনীহা ও দৃশ্যত আন্তর্জাতিক সমালোচনার কারণে তাদের সেখানে পাঠানোর পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার।

রোহিঙ্গা স্থানান্তর না হলে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ কী, সেই প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, সেখানে যোগাযোগ ও সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। ফলে তাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা না গেলে অন্য কিছু করাও এত সহজ নয়। তবে সরকার চাইলে নৌবাহিনীর ঘাঁটি কিংবা তাদের তত্ত্বাবধানে কৃষিভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে।

উন্নয়ন সংস্থা পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যাকশন নেটওয়ার্কের (প্রান) প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ সমকালকে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা না হলে ভাসানচরে তৈরি অবকাঠামো ব্যবহার করে খুব সহজে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। এতে হাতিয়াসহ বিদ্যুৎ সুবিধাবঞ্চিত দ্বীপগুলোতে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সহজ হবে। পাশাপাশি ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা সরকার গ্রহণ করেছে, তা পূরণও সহজ হবে। তা ছাড়া সেখানকার অবকাঠামো ব্যবহার করে রপ্তানিমুখী মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল গড়ে তোলা যায়। এর মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।

সরকারও অবশ্য এখন বিকল্প ব্যবহারের পথেই হাঁটছে। শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা স্থানান্তর সম্ভব না হলে ভাসানচরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) স্থাপনের কথা ভাবছেন প্রকল্প সংশ্নিষ্ট কেউ কেউ। ভাসানচর প্রকল্প নিয়ে গত বছরের নভেম্বরে আয়োজিত এক সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের পাশাপাশি দেশের ছিন্নমূল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকেও সেখানে জীবিকার ব্যবস্থাসহ পুনর্বাসন করতে চেয়েছিল সরকার। এ লক্ষ্যে গত মার্চে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়ের মাধ্যমে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে ছিন্নমূল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আবেদন করতে বলা হয় ওই চিঠিতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি পরিবারও ভাসানচরে যেতে আবেদন করেনি।

পররাষ্ট্র এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভাসানচরকে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ আবাস হিসেবে গড়ে তুলতে নিরাপত্তা, খাবার সরবরাহ, চিকিৎসাসেবা, জরুরি মানবিক সহায়তা, বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগে সুরক্ষার ব্যবস্থাসহ অন্তত ৫৫টি বিষয় সুরাহা করা উচিত বলে মতামত দিয়েছিল জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো। জাতিসংঘের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সাহায্য সংস্থার জন্য দপ্তর নির্মাণের কথাও বলেছে তারা। নোয়াখালী বা হাতিয়া থেকে ভাসানচরে সরাসরি নৌযোগাযোগের ব্যবস্থাও করতে বলেছে উন্নয়ন সংস্থাগুলো। ভাসানচরকে নিরাপদ ও এখন পর্যন্ত সরকার ওই সুপারিশের ৪৫টি নিশ্চিত করেছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে ভাসানচরের অবকাঠামো নির্মাণ পরিস্থিতি দেখতে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। এর পরই ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর থেকে সরকারের সরে আসার কথা প্রচার হয়।

এনামুর রহমান তখন গণমাধ্যমকে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা ছাড়া ভাসানচরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য খাবার, স্বাস্থ্যসেবাসহ জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করাটা কঠিন। এখন পর্যন্ত ভাসানচর নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আপত্তি দূর হয়নি। তাই আপাতত ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি স্থগিত করার কথা ভাবছে সরকার। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অবশ্য ৫০-৬০ জন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার একটি প্রস্তাব নিয়ে চলতি মাসে দাতা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সভায় আলোচনা হয়। পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গা নেতারা ভাসানচরে যাওয়ার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে পারবেন বলে আশা করা হয় ওই সভায়। তবে পরিদর্শনের তারিখ এখনও ঠিক হয়নি বলে জানান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার। তিনি বলেন, ভাসানচরে স্থানান্তর নয়, তাদের প্রধান অগ্রাধিকার রোহিঙ্গাদের নিজ জন্মস্থান মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার
থাইল্যান্ড গেলেন প্রধানমন্ত্রী
তাপদাহে হিট অ্যালার্টের মেয়াদ আরও বাড়াল আবহাওয়া অফিস
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়াল সরকার
উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা
সব বিরোধী দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন

আরও খবর