সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট ঃ সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলন তীব্র হচ্ছে। বিক্ষুব্ধ জনতার টার্গেট- সরকারের প্রতিটি সেক্টরকে অচল করে দিয়ে সামরিক জান্তাকে সরে যেতে বাধ্য করা। গণঅভ্যুত্থানে সেনা উৎখাতই লক্ষ্য বিক্ষোভকারীদের। সে লক্ষ্য নিয়েই দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে সরকারের স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতাকে বাধাগ্রস্ত করাসহ জান্তার আর্থিক উৎসও ক্ষতিগ্রস্ত করা লক্ষ্য। এ অবস্থায় মিলিটারি পুলিশের সপক্ষ ত্যাগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সামরিক জান্তাকে উৎখাত সহজ নয়। সে অভিজ্ঞতা মিয়ানমারবাসীর অনেক বেশি এবং তরতাজা। ফলে তারা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ, আর্থিক সংকট তৈরির পাশাপাশি সম্মুখ আন্দোলনও তীব্র করার কৌশল নিয়েছেন।
আত্মগোপনে থাকা মানবাধিকার কর্মী থিনজার শুনলেই ই বলেন, ‘আমাদের তৎক্ষণাৎ লক্ষ্য হচ্ছে সরকারের ম্যাকানজিমগুলোকে অচল করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে সামরিক জান্তাকে ছুড়ে ফেলা। এতে করে সামরিক জান্তা শাসন চালিয়ে নিতে অক্ষম হয়ে পড়বে।’ মাত্র ১০ বছরের গণতন্ত্রকে ছুড়ে ফেলে ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। দ্বিতীয়বারের মতো বিপুল ভোটে জয়ী দল এনএলডি-প্রধান অং সান সু চিসহ প্রেসিডেন্ট ও জ্যেষ্ঠ নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতার করা হয়। প্রতিক্রিয়া দেখানো নিয়ে প্রথমে সংশয়ে থাকলেও সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার কৌশল নিয়ে আন্দোলনের মাঠে নামে বিক্ষুব্ধ মানুষ। অসহযোগিতা বা সরকারের আদেশ অমান্য করার আন্দোলনে যোগ দেয় হাজারো চাকরিজীবী। এতে ডাক্তার, নার্স, আইনজীবী, রেলকর্মী, সরকারি কর্মী, ব্যাংকার, কৃষক, শ্রমিক এবং কিছু পুলিশ সদস্যও যোগ দিয়েছেন। সবার আশা, এভাবে সরকারি কাজে অচলাবস্থা তৈরি হলে জান্তা সরে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।
বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজে সামরিক শাসক ও সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিবেকহীন’ মানুষ সরকারি কর্মচারীদের কাজে যোগ না দিতে উসকানি দিচ্ছে। বিবৃতিতে ‘যারা কাজে যোগদান থেকে বিরত রয়েছেন, তাদের দেশ ও জনগণের স্বার্থে দ্রুত কাজে যোগদানের’ জন্য অনুরোধ করা হয়। সরকারি কাজ বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি এর মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর আর্থিক সাম্রাজ্যেও আঘাত হানছেন প্রতিবাদীরা। যেমন-চীন সরকার ও সামরিক বাহিনীর যৌথ মালিকানাধীন একটি খনির দুই হাজার শ্রমিক কাজে না যাওয়াতে তারা উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। আংশিক সামরিক মালিকানাধীন মাইটেল টেলিফোন কোম্পানির বহু প্রকৌশলী ও কর্মী কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীরা নিজেদের চাকরিকে হুমকির মুখে ফেলে আন্দোলনের ঝুঁকি নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠনগুলো অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে। কারণ তাদের হাতে কোনো বিকল্প নেই। একজন নেতা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনেই আমরা নিজেদের অধিকার পাই না। সেখানে স্বৈরাচারের আওতায় আমাদের তো কোনো চান্সই নেই।’ নির্মাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী উপসচিব থান টোয়ে অং সোমবার থেকে ধর্মঘটে যোগদানের ঘোষণা দিয়েছেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘সহকর্মীদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি স্বৈরাচার উৎখাতে আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়র জন্য।’ সরকারি কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত মিয়ানমার ইকোনমিক ব্যাংক কর্মীরাও ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন।