ডেইলি নিউজ রিপোর্ট॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার আগের বছরের তুলনায় কমেছে। গত তিন মাসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৬.৬৭ শতাংশ, যা ২০১৮ সালের একই সময়ের তুলনায় ১.৫৮ শতাংশ কম।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে উপস্থাপিত ২০১৯ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বর্তমান সরকারের প্রথম ত্রৈমাসিক (৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ) মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত ৩৬টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ২৪টি বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সরকারের তিন মাসে মন্ত্রিসভার পাঁচটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ৩৬ টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর মধ্যে ২৪ টি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং অপর ১২টি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
শফিউল আলম বলেন, ২০১৮ সালের একই সময়ে মন্ত্রিসভার সাতটি বৈঠকে ৬৩টির মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। ওই সময়ে ৬৩টির মধ্যে ৪৩টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় এবং ২০টি বাস্তবায়নাধীন ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ৬৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। পাশাপাশি এই সময়ে দু’টি নীতিমালা এবং একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে বলে তিনি জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গতবছর এই সময়ে তিনটি নীতিমালা, চারটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি সম্পাদিত হয়। বর্তমান সরকারের প্রথম তিন মাসে সংসদে পাঁচটি বিল পাস হয়। ২০১৮ সালের একই সময়ে পাস হয়েছিল ১৫টি বিল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের এক নম্বর ভবন ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সচিবালয়ের ভবনগুলোতে আগুনের ঝুঁকি কম। যদিও অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ভবনের (১ নম্বর ভবন) ব্যাপারে একটা সতর্কতা আছে যে, এখানে যদি আর্থ কোয়েক (ভূমিকম্প) হয়, এগুলো দুর্বল। এটার বেইজটা অনেক পুরোনো ধরনের, ৬০-৭০ বছর আগে তৈরি করা এ ভবনটি। এটা নিয়ে একটু ঝুঁকি আছে।’ তিনি বলেন, ‘ডাউকিতে (ভারতের মেঘালয়ে) ভূমিকম্পের যে আধুনিক সিগন্যালটি আছে সেটি নাড়া দেওয়ার দুই মিনিট পর আমাদের এখানে আসবে। আর আমরা যদি দুই মিনিট আগে সিগন্যাল পাই তাহলে ভবনটি খালি করতে পারবো। সব লোক মাঠে চলে যাবে, এটা সম্ভব। তবে সিগন্যালটি আসতে হবে।’
শফিউল আলম বলেন, ‘ভৌগলিক কারণেই ডাউকি থেকে ঢাকা ভূমিকম্প পৌঁছাতে দুই মিনিট সময় লাগবে। এই দুই মিনিট সময় পেলেই ঢাকা শহরে যারা আছে তাদের সতর্ক করা যাবে এবং তারা সবাই সরে যেতে পারবে।’ সচিবালয়ের ভবন অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পিডাব্লিউডির বিল্ডিংগুলোতে সার্কিট ব্রেকার আছে। তাই কোনো কারণে শর্টসার্কিট হলে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম। আমাদের ভবনগুলো ম্যাচ বক্সের মতো। আর এফআর টাওয়ার ছিল বাক্সের মতো। এতে কোনো জানলা নেই, কাচ দিয়ে ঘেরা।’
শফিউল আলম বলেন, ‘সচিবালয়ে যে ভবনগুলো নির্মাণ হয়ে গেছে সেগুলোর ক্ষেত্রে কিছু করার নেই। তবে মসজিদের পাশে বড় একটি ভবন হবে। সেটি সব বিষয় বিবেচনায় রেখে নির্মাণ করা হবে।’ সচিবালয়ের ভবনগুলোর অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে বৈঠক ডাকা হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘পিডাব্লিউডি এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছে। ভবনগুলোতে পুরনো যে ফায়ার এক্সটিংগুইসার আছে সেগুলোর মেয়াদ আছে কি না সেটি দেখছে। সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে শিগগিরই বৈঠক ডাকা হবে। আমরা এ বিষয়ে মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত নেবো।’
তিনি বলেন, ‘যেমন ধরুন পুরনো যেসব ফায়ার এক্সটিংগুইশার আছে সেগুলো চেক করে মেয়াদোত্তীর্ণগুলো রিপ্লেস করা হচ্ছে। এগুলো যার যার মত করে করছে। কিন্তু আমরা ইন এ বডি সবার সাথে এটা নিয়ে মিটিং করব খুব তাড়াতাড়ি। তবে এখনও ডেট ঠিক হয়নি’।
গত মন্ত্রিসভার বৈঠক সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বারান্দাগুলো কেন ন্যারো- এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা জেনারেল সমস্যা। আমাদের ভবনগুলো ম্যাচ বক্সের মতো। বনানীর আগুনের ঝুঁকিতে পড়ে গেল, এটা ছিল অনেকটা বাক্সের মতো। এর কোনো জানলা-ব্লক নেই। এটা কাচ দিয়ে ঘেরা, অ্যাসি, অ্যায়ার কন্ডিশন। যে কারণে আপনারা দেখছেন যারা বের হওয়ার জন্য চেষ্টা করেছেন গ্লাস ভেঙে তারপরে বেড়িয়েছেন। এগুলো প্রধানমন্ত্রী বহুবার বলেছেন যে, একটু খোলামেলা করা, বারান্দা রাখা।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বারান্দা রাখলে সুবিধা হতো কী- বারান্দায় গিয়ে একটা কাপড় দিয়ে ঝুলে নেমে যেতে পারতো। কিন্তু বারান্দা নেই। সচিবালয়ের যে ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো তো আর বড় করা যাবে না। মসজিদের পাশে বড় বিল্ডিং হবে ২০ তলা। সেটার মধ্যে এসব বিষয় অ্যাড্রেস করে করা হবে।’
নতুন করে বিল্ডিং নির্মাণ হলে সচিবালয় স্থানান্তরের প্রক্রিয়ার কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সেটা কবে হয় বলা মুশকিল। তবে এটার প্ল্যান প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। মসজিদের পাশে টিনশেডগুলো সরিয়ে ওখানে হাইরাইজ বিল্ডিং করা হবে, এটার প্ল্যান প্রায় শেষ।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত ৪ মার্চ থেকে ৬ মার্চ শিল্পমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফর সম্পর্কেও মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়।