সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্টঃ চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সম্মুখযোদ্ধাদের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেশে এলে সম্মুখযোদ্ধাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯-এর টিকা প্রদান শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও আমরা দ্রুত টিকা নিয়ে আসতে সব ধরনের চেষ্টা করছি। টিকা আসার পর পরই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সম্মুখসারির যোদ্ধাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকা দেয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদে দুই বছর পূর্তি ও তৃতীয় বছরে পদার্পণ উপলক্ষে তিনি এ ভাষণ দেন।
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে আমাদের বিগত ২০২০ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এবং উপর্যুপরি বন্যা আমাদের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। আমরা সেসব ধকল দৃঢ়তার সঙ্গে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু করোনাভাইরাসজনিত সংকট থেকে বিশ্ব এখনো মুক্ত হয়নি।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের সদস্যসহ সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই মহামারি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ দরিদ্র-অসহায় মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। আমি সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এরই মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে বিভিন্ন নীতি-সহায়তা এবং বিভিন্ন উদার-নৈতিক আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানের মাধ্যমে আমরা অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি যা মোট জিডিপি’র ৪.৩ শতাংশ।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার এখনো প্রণোদনা-সহায়তা অব্যাহত রেখেছে বলেও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় আড়াই কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে আমরা নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সহায়তার আওতায় এনেছি। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, গত অর্থবছরে আমাদের জিডিপি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ হারে বেড়েছে। আমাদের প্রাক্কলন অনুয়ায়ী এ বছর জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান হবে এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী শীর্ষদেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ২০২০-এ মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে।
করোনা মোকাবিলায় সবাইকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুতে আমি আশাবাদ জানিয়ে বলেছিলাম দেশবাসীর সহায়তায় আমরা এই দুর্যোগ সফলভাবে মোকাবিলা করব। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে দেশবাসী এ দুঃসময়ে আমার এবং আমার সরকারের পাশে ছিলেন। আপনারা আমাদের এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছেন। এ ধরনের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভবিষ্যতেও জনগণ সরকারের পাশে থাকবে এমন আশাবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইশতেহার ঘোষণা করেছিলাম। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের মূল প্রতিপাদ্য ছিল দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ নির্মূল করে একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতা মুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ মধ্যম-আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের সমৃদ্ধশালী-মর্যাদাশীল দেশ।
তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহে ২০২১-২০২৫ মেয়াদি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে। যা বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এ মেয়াদে ১ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষে দারিদ্র্যের হার ১৫.৬ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৭.৪ শতাংশে নেমে আসবে। শেষ বছর ২০২৫ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৮.৫১ শতাংশে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ১০টি উদ্যোগ বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য এর আগে আমরা ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ শীর্ষক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। করোনাভাইরাসের মহামারি সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে আমাদের বহুল আরাধ্য নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন পদ্মাসেতুর সর্বশেষ স্প্যান বসানোর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পদ্মাসেতুর ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামি বছর এই স্বপ্নের সেতু যানবাহন এবং রেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হবে। অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পগুলির কাজও পূর্ণোদ্দমে এগিয়ে যাচ্ছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে রেললাইন বসানো হয়েছে। শিগগিরই জাপান থেকে ট্রেন ঢাকায় পৌঁছবে।
তিনি আরও বলেন, এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসে এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজের ৮০ শতাংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময় ২০২৩ সালের এপ্রিল নাগাদ এই ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করবে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলির নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণের কাজও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এই ট্যানেলের ৬২ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।