সময় সংবাদ রিপোর্ট:একাদশ সংসদ নির্বাচন কড়া নাড়ছে। অংশগ্রহণের বিষয়ে নানা হিসাব-নিকাশ ঝুলে থাকায় বিএনপি অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। দলের পক্ষ থেকে নেতারা আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে নির্বাচনে যাবে। আবার বলা হচ্ছে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রস্তুত রয়েছে দল। আন্দোলন ও নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের এলাকায় সক্রিয় থাকার নির্দেশনাও রয়েছে কেন্দ্র থেকে। দলটির হাইকমান্ড নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে একাধিক জরিপের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় প্রার্থীদের প্রাথমিকভাবে বাছাই করে রেখেছে বলে বিভিন্ন সময় নেতারা তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনের মাঠে লড়াই করে জয় তুলে আনতে পারবে এমন প্রার্থীকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে তারা জানাচ্ছেন। এমন অবস্থায় কেন্দ্রের গ্রিন সিগন্যাল পেতে নানাভাবে সাংগঠনিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের, বিশেষ করে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের অনেকে অবশ্য মাঠে বেশ সক্রিয়। অনেকে আন্দোলনে নামার আগে তাদের মনোনয়নের নিশ্চয়তা চাচ্ছেন। এসব মনোনয়নপ্রত্যাশীর বেশিরভাগই নতুন মুখ। তবে অনেকে এসেছে আলোচনায় থাকার জন্য। ঢাকা-৩ থেকে মনোনয়ন মোটামুটি চূড়ান্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপির মতো দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকবে এটা স্বাভাবিক। আমরা তো নির্বাচনে যেতে চাই। সে জন্য চাই সমতল মাঠ। এ জন্যই সাত দফা ঘোষণা করেছি। এ দাবি এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে, দেশের জনপ্রিয় নেত্রী মাদার অব ডেমোক্রেসি খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফেরার পরিবেশ পেলে অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেব। যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী তাদেরও একই বক্তব্য। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলের ত্যাগী এবং যোগ্যরাই মনোনয়ন পাবেন।
এ নিয়ে কথা হয় মনোনয়নপ্রত্যাশী আবদুস সালাম আজাদ (মুন্সীগঞ্জ-২), আকন কুদ্দুসুর রহমান (বরিশাল-১) আমিরুল ইসলাম খান আলীম (সিরাজগঞ্জ-৫), তাইফুল ইসলাম টিপু (নাটোর-১), মামুন চৌধুরী স্ট্যালিন (নওগাঁ-৬), শহীদুল আলম তালুকদার ও মুনির হোসন (পটুয়াখালী-২), চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক (নেত্রকোনা-৪), গোমস্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান বাইরুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের (মাদারীপুর-৩) সঙ্গে। তাদের সবার একই ধরনের বক্তব্য। এসব মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে সাত দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে, তা আদায় করতে অতীতের মতো রাজপথে থাকার প্রস্তুতিও তাদের রয়েছে বলে জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু (টাঙ্গাইল-৬) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক আবদুল মতিন (নওগাঁ-৪), মাহবুবুল হক নান্নু (ঝালকাঠি-২) থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের অনুসারীরা মাঠে কাজ করছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী হাসান মামুন (পটুয়াখালী-৩), ওবায়দুল হক নাসির (টাঙ্গাইল-৮), মাহমুদুর রহমান সুমন (নারায়ণগঞ্জ-২), তানভীর আহমেদ রবিন (ঢাকা-৪), কাজী আবুল বাশার (ঢাকা-৬), শিরিন সুলতানা ও আফরোজা আব্বাস (ঢাকা-৯), সাইফুল আলম নীরব (ঢাকা-১২), আতাউর রহমান ঢালী ও আব্দুস সালাম (ঢাকা-১৩), সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও মামুন হাসান (ঢাকা-১৫), গোলাম রাব্বানী নয়ন বাঙ্গালী, মোয়াজ্জেম হোসেন, আমিনুল ইসলাম (ঢাকা-১৬), জামাল কামাল মোল্লা ও আব্দুল আলীম নকী (ঢাকা-১৭), বাহাউদ্দিন সাদী ও এসএম জাহাঙ্গীর (ঢাকা-১৮)। এসব নেতা নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ রকিবুল ইসলাম বকুল (খুলনা-৩) মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনে আরিফুর রহমান মিঠুও মনোনয়ন চান। সম্প্রতি ঢাকা থেকে নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে জনসংযোগ করেছেন ব্যারিস্টার নওশাদ জমির (পঞ্চগড়-১), ফরহাদ হোসেন আজাদ (পঞ্চগড়-২)। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চান শাহরিন ইসলাম তুহিন (নীলফামারী-১), আমজাদ হোসেন সরকার, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন (নীলফামারী-৪), ওবায়দুর রহমান চন্দন (জয়পুরহাট-২)। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরও রয়েছেন শাহীন শওকত (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১), কবীর হোসেন, মতিউর রহমান মন্টু ও শফিকুল হক মিলন (রাজশাহী-৩), আবু সাঈদ চাঁদ, আনোয়ার হোসেন উজ্জল ও রমেশ দত্ত (রাজশাহী-৬), কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা (সিরাজগঞ্জ-১), সেলিম রেজা হাবিব ও হাসান জাফরি তুহিন (পাবনা-২), অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান, শিমুল বিশ্বাস ও কামরুল হাসান মিন্টু (পাবনা-৫), ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী (কুষ্টিয়া-২), অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান ও জয়ন্ত কুমার কু-ু (ঝিনাইদহ-১), কণ্ঠশিল্পী মনির খান (ঝিনাইদহ-৩), সাইফুল ইসলাম ফিরোজ (ঝিনাইদহ-৪), মফিদুল হাসান তৃপ্তি (যশোর-১), অনিন্দ্য ইসলাম অমিত (যশোর-৩), আজিজুল বারী হেলাল (খুলনা-৪), ফিরোজ আহমেদ (বরগুনা-১), অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও নূরুল ইসলাম মনি (বরগুনা-২), নূরুল ইসলাম নয়ন (ভোলা-৪), ইলিয়াস খান ও রওনাকুল আলম টিপু (বরিশাল-২), রাজীব আহসান ও অ্যাডভোকেট হেলাল (বরিশাল-৪ ), জেবা খান (ঝালকাঠি-২) মনোনয়নপ্রত্যাশী। এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন ময়মনসিংহ-১ সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ময়মনসিংহ-৮ থেকে প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহহেল মাজেদ বাবু, ময়মনসিংহ-১১ মোর্শেদ আলম, নেত্রকোনা-১ ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, মানিকগঞ্জ-৩ আফরোজা খানম রিতা, মুন্সীগঞ্জ-১ মীর শরাফত আলী সপু, মুন্সীগঞ্জ-৩ কামরুজ্জামান রতন, ঢাকা-১ খন্দকার আবু আশফাক, নরসিংদী-৩ অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, আকরামুল হাসান ও প্রয়াত সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার ছেলে নন্দিত নাহিয়ান সজল, নরসিংদী-৪ আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, ফরিদপুর-২ শামা ওবায়েদ, ফরিদপুর-৩ মাহবুব হাসান ভূঁইয়া পিংকু, চুয়াডাঙ্গা-২ মোখলেসুর রহমান, মাদারীপুর-৩ মাশুকুর রহমান মাশুক, সুনামগঞ্জ-৪ আবদুল লতিফ জেপি, কুমিল্লা-১ ড. খন্দকার মারুফ হোসেন, কুমিল্লা-৪ আবদুল আউয়াল খান, কুমিল্লা-৫ শওকত মাহমুদ, ফেনী-২ রেহেনা আক্তার রানু, ফেনী-৩ আবদুল আউয়াল মিন্টু, নোয়াখালী-৩ শামীমা বরকত লাকী, লক্ষ্মীপুর-৪ শফিউল বারী বাবু, চট্টগ্রাম-৩ আসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৪ ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। ঢাকা-১৫ আসনে দল থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমাদের দলে যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী, তাদের বেশিরভাগেরই এলাকায় অবস্থান আছে। অতএব তারা তো মনোনয়ন চাইতেই পারেন।