*সময় সংবাদ লাইভ রির্পোটঃ রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ গুলি ধাওয়া-পালটাধাওয়া, টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় সাংবাদিক, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ ৭০-৮০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন এবং কমপক্ষে ১৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপির ইট পাটকেল নিক্ষেপে তাদের ৮ থেকে ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নবগঠিত কমিটির নেতা-কর্মীদের বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে আসলে পুলিশ এ হামলা চালায় বলে বিএনপি অভিযোগে জানায়। তারা বলেছে, কর্মসূচি পালনে পূর্ব থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি ছিল। তবে পুলিশ বলছে, সেখানে এ কর্মসূচি পালনের জন্য বিএনপি অনুমতি নেয়নি। হামলার পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘটনাস্থলে যান। এরপর তিনিসহ নেতাকর্মীরা দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। হামলার প্রতিবাদে বিএনপি একদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
গত ২ আগস্ট বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার নির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে ঢাকা দক্ষিণে আবদুস সালামকে আহ্বায়ক এবং রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তরে আমান উল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক এবং আমিনুল হককে সদস্য সচিব করা হয়। দলের রীতি অনুযায়ী নতুন কমিটির নেতারা তাদের অনুসারীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।
বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিএনপির মহানগর উত্তরের কমিটির সদস্যসচিব ও জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আমিনুল হকসহ কিছু নেতাকর্মী জিয়া উদ্যানে জড়ো হন। তখন পুলিশ তাদের ভেতরে যেতে বাধা দেয়। এ সময় আমিনুল হকের সঙ্গে পুলিশের তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা শুরু করে। পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়ে। পুলিশ রাবার বুলেটও ছোঁড়ে বলেও অভিযোগ বিএনপির নেতাকর্মীদের।
ঘটনার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের শেরেবাংলা নগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিকই ছিল। আগেও তারা এখানে এসে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু আজ (গতকাল) বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানের পক্ষের উচ্ছৃঙ্খল কয়েকজন এসে হট্টগোল শুরু করে পুলিশের ওপর চড়াও হন। এতে ৮ থেকে ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান বলেন, আজ পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল। সে জন্যই নেতাকর্মীরা জিয়াউর রহমানের কবরে আসেন। তারা সেখানে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতি দেখে পুলিশ মারমুখী হয়ে যায়। বিনা কারণে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। রাবার বুলেট মারে। রাবার বুলেটে আমিনুল হকসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
বিএনপি নেতা আমিনুলের ছোট ভাই কিবরিয়া বলেন, নেতাকর্মীরা জিয়ার মাজারে ফুল দিতে গেলে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় গুলিও ছোঁড়া হয়। এতে আমিনুলের ঘাড়ে, পেটে ও পিঠে তিনটি গুলী লাগে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এর আগে আমিনুল হক বলেন, জিয়ার মাজারে ফুল দিতে এসেছিলাম আমরা। পুলিশের কাছে অনুমতি নেওয়া ছিল। কিন্তু জিয়ার মাজারে ঢুকতে সব পথ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এক পর্যায়ে পুলিশ আমাদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলী করে।
জানা গেছে, তাৎক্ষণিক ভাবে নেতাকর্মীরা চিকিৎসা নিয়েছেন শ্যামলী ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় বেসরকারি হাসপাতালে। ডিবিসি’র সাংবাদিক জাকারিয়া আগারগাঁও নিউরো সাইন্স হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় গিয়েছেন। বিএনপি আইসিটি বিভাগের তিনজন সদস্য বাবু-অপু ও আলমগীর আহত হয়েছেন। তার মধ্যে অপুর হাতে প্রায় ১০টি সেলাই লেগেছে। বিএনপি কমিনিউকেশন টীমের সদস্য নুরুল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় গিয়েছেন। তখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নেতাকর্মীসহ অন্যদের দেখতে গিয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, – সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী এডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ সিনিয়র নেতারা।
এদিকে ঘটনার পর নয়াপল্টনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালাম ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর মাজারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি’র নবগঠিত কমিটির আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দের পুস্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া অনুষ্ঠানের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। এই কর্মসূচি পালনের জন্য পুলিশের কাছ থেকে নিয়মানুযায়ী অনুমতিও নেয়া ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, সাড়ে এগারোটায় অনুষ্ঠিতব্য অনুষ্ঠানের এক ঘন্টা আগে থেকেই পুলিশ শহীদ জিয়ার মাজারের আশে পাশে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে এবং নেতাকর্মীরা মাজারস্থলে জড়ো হওয়ার সাথে সাথে সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশ নেতাকর্মীদেরকে লক্ষ্য করে গুলীবর্ষণ এবং টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এছাড়া নেতাকর্মীদেরকে বেধড়ক লাঠিচার্জে গুরুতর আহত করে। পুলিশী হামলায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ অসংখ্য নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়। পুলিশী হামলায় সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরাও আহত হয়েছেন। আহতরা বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতারও করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকার করোনা মহামারীর মহাদুর্যোগেও নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে করোনা আক্রান্ত মানুষদের দুঃসহ সংকট মোকাবেলা করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়ে এখন বিএনপিকে দমন করতে অতিমাত্রায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। আজকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের নির্দয় হামলা সেটিরই বহিঃপ্রকাশ। সরকারের পায়ের নীচে আর বিন্দুমাত্র মাটি অবশিষ্ট নেই বলেই তারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় বিরোধী দল দমনের মাধ্যমে নিজেদের ভয়াবহ দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী রূপ দিতে যারপরনাই মরিয়া হয়ে উঠেছে। আজকে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের ন্যক্কারজনক ও বর্বরোচিত হামলায় সুস্পষ্ট হলো যে, যেহেতু বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, তাই তারা জনকল্যাণ, গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক অধিকারে বিশ^াসী নয়, বরং হামলা-মামলা, গুম-খুন, অপহরণ ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণকে ভীত সন্ত্রস্ত রেখে দেশ শাসন করতে চায়। তিনি এই হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির জোর দাবি জানান।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন, এ জে এম শামসুল হক, শাহজাহান মিয়া সম্রাট, মোঃ রুবেল, হাফিজ আহমেদ রাতুল, ইব্রাহিম, সোহাগ, রবিউল, জুম্মন, সোলেমান, মুক্তার, মুনির হোসেন, তিউর রহমান প্রমুখ। আহতরা হলেন, আমান উল্লাহ আমান, আমিনুল হক, সদস্য সচিব, শামিমুর রহমান শামীম, ফেরদৌসি আহমেদ মিষ্টি, শহীদুল ইসলাম বাবুল, মকবুল আহমেদ সরদার, মোহাম্মদ নাঈম, মোঃ শরীফ হোসেন, গোলাম মাওলা শাহীন, সাঈদ হাসান মিন্টু, আনন্দ শাহ, আর. টি মামুন, মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, বাপ্পি, সুমন, সুলেমান, জগলুল পাশা পাভেল, আশিকুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, জুয়েল, সাদেক, শরীফ আহমেদ, ইয়াসির ফেরদৌসী মুরাদ, রুবেল, ফারুক, মিন্টু, ইসরাফিল, আব্দুস সোবহান স্বপন, শহিদুল ইসলাম দিপু, শাখাওয়াত হোসেন, গোলাম আজম সৈকত, শাহ আলম তপু, শামীম আহমেদ, নুরনবী ফরাজী মুক্তার, ডাঃ মাহফুজুর রহমান, আবুল কালাম, সাগর, রায়হান আহমেদ, সাহাবুদ্দিন সাবু, ইসমাইল হোসেন বাবু, জামাল হোসেন টুয়েল, মোঃ ফিরোজ, মোঃ মারুফ,আল-আমিন, আক্তার উজ্জামান, গেলদার মোঃ হৃদয়, মোঃ কামাল হোসেন, সুমন সেরনিয়াবাদ, মোঃ শামিম, আনোয়ার,খলিল,রানা, রাজিব, সি এম আনোয়ার, মাহফুজুর রহমান সজিব, ইসমাইল হোসেন বাবু, আল-আমিন তালুকদার, এল রহমান, মনিরুজ্জামান টগর, বোরহানুজ্জামান, জামান, মনোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীর, রহিম, মোস্তাফিজুর রহমান, শাহ আলম, কে এম সোহেল রানা, জসিম উদ্দিন, মোঃ রুবেল, মিজানুর রহমান, এস এম সাইফুল রাজু, জাকির হোসেন খালাসি প্রমুখ। এছাড়া আহত হয়েছে সাংবাদিক জাকারিয়া, বিএনআরসির ক্যামেরাম্যান মোঃ নুরুল আমিন ও বিএনপির অন-লাইন ক্যামেরাম্যান কামরুল হাসান বাবু।
রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপর পুলিশী হামলার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানিয়ে ২০ দলীয় জোট শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি (একাংশ) সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, এই হামলা সরকারের ফ্যাসীবাদী আচরনেরই বহি:প্রকাশ। গুলী করে ফ্যাসীবাদী সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় এসব কথা বলেন। তারা বলেন, চারদিকে ফ্যাসীবাদী সরকারের পতনের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। পতনের আতংকে সরকার চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠছে। কিন্তু, তারা ভুলে গেছে বিরোধী দলের উপর অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে অতীতেও কোন স্বৈরাচারি সরকার তাদের পতন ঠেকাতে পারে নাই, বর্তমান সরকারও পারবে না।
কর্মসূচিঃ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে আসা নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের নির্দেশে পুলিশের নির্মম হামলা, গুলিবর্ষণ, কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি আজ বুধবার ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের থানায় থানায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে উক্ত কর্মসূচি সফল করে সরকারের নির্মম হামলার প্রতিবাদ জানাতে দলের এক বিজ্ঞপ্তিতে আহবান জানানো হয়েছে।