সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট:প্রায় দুই মাস সারা দেশে কার্যত লকডাউন থাকলেও করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমেনি। বরঞ্চ বেড়েই চলেছে। বর্তমানে প্রতিদিনই বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই হাজারের অধিক হচ্ছে, আরা মারা যাচ্ছে ৩০ জনেরও বেশি মানুষ। তবুও আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে তথ্য অনুযায়ী আজ শনিবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে ৬৩ হাজার ২৬ জনের মাঝে, আর মারা গেছেন ৮৪৬ জন। এ ছাড়া ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, সংক্রমণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ প্রথম ২০টি দেশের তালিকায় ঢুকে পড়েছে।
শুধু বাংলাদেশ নয় ভারত ও পাকিস্তানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সরকারি সংখ্যায় সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার এ তিন দেশে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তবে কম পরীক্ষা হওয়ায় প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না। শুধু ঢাকাতেই হয়তো সাড়ে সাত লাখের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
‘বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে’ শিরোনামে শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইকোনমিস্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিস রিচার্স, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) নির্বাহী পরিচালক জন ক্লেমেনসের হিসাব অনুযায়ী ঢাকায় ইতোমধ্যে সাড়ে সাত লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অথচ সরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ৬০ হাজারের কম।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে অনেকাংশেই লকডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার এ তিনটি দেশে মোট ১৭০ কোটি মানুষের বসবাস, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ। সংক্রমণের এই মুহূর্তে এসে লকডাউন শিথিল করার মানে হলো- ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার ঘটার সুযোগ করে দেওয়া।
দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশে সবমিলিয়ে সাড়ে তিন লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৯ হাজার মানুষের। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সংখ্যা অন্যদের স্বস্তি দিতে পারে। কিন্তু এতে লুকোচুরি রয়েছে। লকডাউন তুলে নেওয়ার আগেই আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছিল। বর্তমানে যে হারে সংক্রমণের গতি বাড়ছে তাতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি দুই সপ্তাহে দ্বিগুণ হচ্ছে। এই হিসেবে কিছু গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের শেষ দিকে অঞ্চলটি সর্বোচ্চ সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছাবে। তখন ৫০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে এবং দেড় লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হবে।
দিন দিন বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে মর্গ, শ্মশান কিংবা কবরস্থানের সংকট তৈরি হচ্ছে বলেও ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম করোনা হটস্পট নারায়ণগঞ্জের পৌর কবরস্থানে গত মে মাসে ৫৭৫ জনকে দাফন করা হয়েছে। অথচ প্রতি মাসে গড়ে কবরস্থানটিতে আড়াইশ জনকে দাফন করা হয়। গত মাসে যে ৫৭৫ জনকে সেখানে দাফন করা হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ৭০ জন সরকারি হিসাবে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামের একটি কবরস্থানের দেখাশোনা করেন ফরিদ। ইকোনমিস্টকে তিনি জানিয়েছেন, ইদানিং অনেক মানুষের জন্য কবর খুঁড়তে হচ্ছে তার দলকে। কবর খোঁড়ার এত চাপ যে, গত কয়েকদিন তারা ঠিকমতো ঘুমাতে পারেননি।