Header Border

ঢাকা, সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ২৩.৯৬°সে

অবুঝ শিশুর ওপর এ কেমন নৃশংসতা

সময় সংবাদ রিপোর্ট : মাস চারেকের শিশু সূর্য কর্মকার। সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো তার দুহাত। মাথা ও মুখ পুড়েছে অ্যাসিডে। ঝলসে যাওয়া চোখে পৃথিবীর আলোও দেখতে পারছে না সে গত বৃহস্পতিবার থেকে। একটু পরপরই ব্যথায় চিৎকার করছে অবুঝ এই শিশু। আদরের সন্তানকে বুকে তুলে স্তন পান করাতে গেলে মা ও সন্তানের মুখ ব্যথায় কুকড়ে যাচ্ছে। মা বীণা কর্মকারের বুকের বাম পাশটাও পুড়ে গেছে দুর্বৃত্তদের ছোড়া অ্যাসিডে।রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাশাপাশি তিনটি সিটে ভর্তি সূর্য, তার মা বীণা ও দাদি মিতালী কর্মকার। তিনজনের দেহ অ্যাসিডে ঝলসে গেলেও পরিবারের একমাত্র সন্তান সূর্যের বেড ঘিরেই বসে আছেন সবাই। শিশুসন্তানের এমন পরিণতিতে নিজেদের কষ্ট ভুলে কেঁদেই চলেছেন মা, অঝোরে দুচোখে পানি ঝরছে দাদির। চার মাসের শিশুর সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। সে তো কারও ক্ষতিও করতে পারে না।হাসপাতালে বসে গতকাল রবিবার দুপুরে সময় সংবাদ লাইভকে মিতালী কর্মকার জানান, বগুড়ার গাবতলীর তেলিহাটায় তাদের বাড়ি। গ্রামে ৪০টি পরিবারের সবাই হিন্দু। তার দুই সন্তান। বড় ছেলে সাগর কর্মকারের ঘরে চার মাস আগে জন্ম নেয় সূর্য। যৌথ পরিবারের কারোর সঙ্গে কারোর দ্বন্দ্ব নেই। তবে কারা, কেন এভাবে অ্যাসিড ছুড়ে মারল- কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না এই বৃদ্ধা। ঘটনার দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মিতালী কর্মকার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার কীর্তন ছিল। সব শেষ করে রাত ১১টার দিকে ঘুমাতে যাই।টিনশেড ঘরের এক রুমে নাতি ও ছেলের বউকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। আর অন্য রুমে আমার দুই ছেলে এবং তাদের বাবা ঘুমান। শোয়ার পরপরই বীণা (ছেলের বউ) ঘুমিয়ে পড়লেও আমার ঘুম আসে রাত ১টার দিকে। রাত ২টার দিকে উঠে নাতিকে দুধ খাওয়ানোর পর আবার ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ৩টার দিকে ছেলে বউয়ের চিৎকারে ঘুম ভাঙে। পরে বুঝতে পারি আমাদের ওপর অ্যাসিড মারা হয়েছে। রাতেই বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সবাইকে। সেখান থেকে শুক্রবার ঢাকার বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসা হয়েছে।’বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক আবিদ আজাদ সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, ‘শিশুটির শরীরের প্রায় ১০ শতাংশ ঝলসে গেছে। অন্যরা কিছুটা শঙ্কামুক্ত। তবে অ্যাডিসে দগ্ধ হওয়া খুবই বিপজ্জনক। একটি নির্দিষ্ট সময় না যাওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না বিপন্মুুক্ত। অ্যাসিডের চিকিৎসার পর চোখসহ অন্যান্য অঙ্গের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে শিশুটিকে।’দগ্ধ বীণা কর্মকার জানান, ঘরের পূর্বদিকে তিনি, মাঝখানে সন্তান এবং পশ্চিম দিকে তার শাশুড়ি শুয়েছিলেন। রাতে ছেলের চিৎকারে তার ঘুম ভাঙে। দেখেন সন্তানের মুখ ভেজা। দ্রুত তাই শরীরে পানি ঢেলে দেন। চিৎ হয়ে শোয়া ছেলের বুকের ওপর একটি কাথা ছিল। হাত কাথার বাইরে থাকায় মাথা, হাত ও মুখ পুড়েছে। বুকে তেমন ক্ষতি হয়নি। অ্যাসিডে মশারি, বালিশ, বীণার পরনের পোশাক এবং শাশুড়ির গায়ের কাপড়ও পুড়ে গেছে। ঝলসে গেছে তার বুকের বামপাশ ও হাত। আর শাশুড়ির পুড়েছে পিঠের অংশ। বীণা বলেন, ‘রুমের পশ্চিম পাশের জানালাটি খাটের সঙ্গেই লাগানো। পূর্ব পাশের জানালা একটু দূরে। সেই জানালাটি আবার রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া। যে কোনোভাবেই সেটি খুলে অ্যাসিড ছুড়ে মারা হয়েছে। একটি প্লাস্টিকের বোতলে অ্যাসিড ছুড়ে মারা হয়েছিল। ঘরের মধ্যে সেই বোতল পাওয়া গেছে। রুমের মধ্যে লাইট জালানো ছিল।’

কেউ তাকে উত্ত্যক্ত করত কিনা কিংবা কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল কিনা- জানতে চাইলে বীণা কর্মকার বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ। সেখানকার একটি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। দুবছর আগে পারিবারিকভাবে বগুড়ার সাগর কর্মকারের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বাড়ির বাইরে কখনো পরিবারের সদস্য ছাড়া যাই না। কারও সঙ্গেই আমার বিরোধ নেই। কেউ উত্ত্যক্তও করত না।’ ঘটনার পর পুলিশ তার মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে বলে জানান বীণা।দগ্ধ শিশুর বাবা সাগর চন্দ্র কর্মকার সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, ‘কারও সঙ্গে আমার বা পরিবারের কারোর কোনো শত্রুতা নেই। কেন পরিবারের ওপর এমন বর্বর হামলা চালানো হলো বুঝতে পারছি না।’ কাউকে সন্দেহ করেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল। এখন দুই ভাই কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যেই পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করছি। এটা দেখে কারও কারও সহ্য না হওয়ায় এ হামলা চালানো হতে পারে বলে আমার ধারণা।’তবে কারও নাম নির্দিষ্ট করে বলতে চাননি এই যুবক। সাগরের ছোট ভাই আনন্দ কর্মকার অবশ্য বলেন, ‘আশপাশের কেউই হয়তো এ হামলা চালিয়েছে। ভাবী চিৎকার করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দুই ভাই জেগে উঠি। প্রতিবেশীরাও ছুটে আসে। বাইরে থেকে কেউ এলে ধরা পড়ত। আশপাশেরই কেউ হওয়ায় অ্যাসিড নিক্ষেপকারী অন্যদের সঙ্গে মিশে গেছে বলে আমার ধারণা।’জানতে চাইলে বগুড়ার গাবতলী মডেল থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, ‘এ ঘটনায় কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি। রবিবার রাতেই মাত্র মামলা হয়েছে। আমরা অনেকগুলো বিষয় নিয়ে তদন্ত এগোচ্ছি। সাধারণত বিশেষ কারণে মেয়েদের লক্ষ্যবস্তু করে অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়। এখানেও টার্গেট করে অ্যাসিড মারা হতে পারে। এ ছাড়া পারিবারিক ও অন্য বিরোধের বিষয়গুলো আছে কিনা, সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

বেপরোয়া মন্ত্রী-এমপিরা ইসির নজরদারিতে
মে মাসে ১৩টি বজ্রঝড়ের আভাস
দেশজুড়ে টানা বৃষ্টির সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস
ঢাকায় আজ তাপমাত্রার সব রেকর্ড ভাঙার শঙ্কা
খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মানতে হবে নির্দেশনা
আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি

আরও খবর