*সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্টঃ একনেকে ৭ হাজার ৯৮৫ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রস্তাবিত একশ’ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সোলার পার্কের নামকরণ নিজের নামে করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে এতে সংযুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘একনেক বৈঠক পর্যন্ত এর নাম ছিল শেখ হাসিনা সোলার পার্ক, মাদারগঞ্জ, জামালপুর। প্রধানমন্ত্রী এই নামকরণে ঘোরতর আপত্তি করেছেন। তিনি বলেছেন, এতে তার নাম থাকবে না। কমিটির সদস্যরা তার নামে নামকরণে একাধিকবার অনুরোধ করেন। নামকরণের বিষয়টি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে আগেই অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলেও বৈঠকে জানানো হয়।
তিনি বলেন, সবাই বলেছেন, দেশের সব থেকে বড় সোলার পার্ক এটি, একটি আইকনিক প্রকল্প; এতে আপনার নাম থাকা উচিত। এ জন্য উনাকে বার বার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু জবাবে তিনি বলেছেন, হবে না, হবে না, হবে না। পরে উনার জোর আপত্তির পর শেখ হাসিনা অংশটি বাদ দিয়ে নামকরণ করা হয় “সোলার পার্ক, মাদারগঞ্জ জামালপুর”।’ এই নামটির প্রস্তাবও প্রধানমন্ত্রী করেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান। ভারতীয় ঋণ থেকে এই সোলার পার্ক স্থাপন করা হবে বলেও তিনি জানান। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিদ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
সোলার পার্ক স্থাপনে প্রচুর জমির প্রয়োজন। এই প্রকল্পে সাড়ে তিনশ’ একরের বেশি জমি দরকার হবে। এসব বিবেচনায় এ ধরনের প্রকল্পের যৌক্তিকতা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খান বলেন, ‘সোলার পার্ক স্থাপনে অনেক জমি প্রয়োজন হয়, এটা অস্বীকার করছি না। তবে, এই পুরো জমিটাই খাস এবং অনাবাদি। এখানে কোনও চাষাবাদ হয় না। আর সোলার প্যানেল স্থাপনের পরে জমি অন্য কোনও কাজে লাগানো হবে কিনা এ বিষয়ে কোনও চিন্তা করা হয়নি। ভবিষ্যতে হলে তা জানানো হবে।’অবশ্য এ সোলার পার্কটি বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়ায় স্থাপনের প্রস্তাব হলেও ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে তা নাকচ হয়ে যায়।
এদিকে জুন মাসের তুলনায় সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। জুলাই মাসে এই হার ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। যা জুন মাসে ছিল ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, জুন মাসে লগডাউন ও বিধিনিষেধে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছিল। যার ফলে জুনে সব খাতেই মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভাশেষে এনইসি মিলনায়তন এক সাংবাদিক সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বিবিএসের এই তথ্য জানান। এ সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব জয়নুল বারী, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী, আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এমএ মান্নান বলেন, জুনের পরিবর্তে জুলাই মাসে সবকিছুর দাম হ্রাস পাওয়াতে মূল্যস্ফীতি কমেছে। অন্যান্য মাসে মূল্যস্ফীতি একখাতে কমলে আরেক খাতে বাড়ে। কিন্তু জুলাই মাসে সব খাতেই মূল্যস্ফীতি কমেছে।
বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, খাদ্যে জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ০৮ শতাংশ। যা জুন মাসে ছিল ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত খাতে জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। যা জুন মাসে ছিল ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
বিবিএসের মূল্যস্ফীতির হার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জুলাই মাসে খাদ্য বহির্ভূত ও খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। প্রসাধন সামগ্রী, জুতা, পরিধেয় বস্ত্র, বাড়ি ভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি পণ্য, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণ এবং বিবিধ সেবা খাতের মূল্যস্ফীতির হার কমার ফলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে।
জুলাইয়ে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। জুনে ছিল ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। খাদ্য পণ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশে। যা তার আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। যা তার আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
এদিকে জুলাইয়ে শহরে সার্বিক মূল্যষ্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে। যা তার আগে মাসে ছিল ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশে। যা জুনে ছিল ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমে হয়েছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। যা জুন মাসে ছিল ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ।