Header Border

ঢাকা, শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ৩৩.৯৬°সে

টাকার সঙ্কটে অসহায় ব্যাংক

সময় সংবাদ রিপোর্টঃ  অধিকাংশ ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণ আদায় হচ্ছে না। কিছু গ্রাহক ও ব্যাংকের পরিচালকরা ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না। এতে অসহায় হয়ে পড়েছে কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক। কখনো টাকার সঙ্কটে পড়েনি এমন ব্যাংকও এখন তাদের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দ্বারস্থ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ ধার দিচ্ছে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে। গত ২৫ অক্টোবর সর্বোচ্চ ধার দিয়েছে সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা। গত ২৬ অক্টোবরও ধার দিয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। টাকার সঙ্কটের সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে মুদ্রাবাজারে। বেড়ে যাচ্ছে টাকা ধার নেয়ার খরচ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ উপকরণের মাধ্যমে সঙ্কটে পড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ধার দিচ্ছে। তবে আগে যেখানে তিন চার শতাংশ সুদে এ ধার দেয়া হতো এখন তা সোয়া ৯ শতাংশ পর্যন্ত হারে ধার দেয়া হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোতে বেড়ে যাচ্ছে ধারের খরচ। ধারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো লোকসান সমন্বয় করতে ঋণের সুদহারও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে সঙ্কুুচিত হয়ে পড়ছে বেসরকারি বিনিয়োগ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিযেছে, দেশের ব্যাংকিং খাতে কিছু ব্যাংক কখনো আর্থিক সঙ্কটে পড়েনি। বরং তাদের হাতে সব সময় অলস অর্থ থাকত। কিন্তু ওই সব ব্যাংক থেকে পরিচালকরা নামে-বেনামে ঋণ শুধু নিয়েই যাচ্ছেন, কিন্তু বেশির ভাগই তা ফেরত দিচ্ছেন না। এতেই বিপত্তি দেখা দিয়েছে। এমন কিছু ব্যাংক এখন তীব্র টাকার সঙ্কটে পড়ে গেছে। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বাধ্যতামূলক নগদ জমাও সংরক্ষণ করতে পারছে না। প্রতিদিনই এসএলআর ও সিআরআর ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এ ঘাটতির কারণে ব্যাংকগুলোর জরিমানা গুনতে হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর অতিপ্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ উপকরণের মাধ্যমে নগদ টাকার জোগান দেয়া হচ্ছে। এতেই সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে মুদ্রাবাজারে।

মুদ্রাবাজারে চাহিদার চেয়ে নগদ টাকার সরবরাহ কমে যাওয়ায় সুদহারও বেড়ে যাচ্ছে। গত বছরে ২৫ অক্টোবর কলমানি মার্কেট থেকে ঋণ নিতে প্রতি ১০০ টাকায় ব্যয় করতে হতো ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, সেখানে চলতি ২৫ অক্টোবরে তা বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। শুধু কলমানি মার্কেটেই সুদহার বাড়েনি, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুদহার বেড়ে গেছে। আগে যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেয়ার একটি উপকরণ রেপো ও বিশেষ রেপোর সুদহার ছিল ৪ থেকে ৫ শতাংশ, এখন তা বেড়ে হয়েছে সোয়া সাত থেকে সর্বোচ্চ সোয়া ৯ শতাংশ পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যাংকের ধারের টাকার ব্যয় বাড়লে ঋণের সুদহারও বেড়ে যায়। আর ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে গেলে উদ্যোক্তাদের ব্যবসা ব্যয় বেড়ে যায়। ব্যবসা ব্যয় বাড়লে বেসরকারি বিনিয়োগ সঙ্কোচিত হয়ে পড়ে। কারণ এমনিতেই সবধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ডলার সঙ্কট বিদ্যমান রয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে ঋণের সুদহার বেড়ে গেলে বিনিয়োগ ব্যয় বাড়ে। আর এজন্য ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত আগস্টে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অথচ সুদহারের বিবেচনায় প্রকৃত বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। কারণ ব্যাংকঋণের সুদহার ১০ শতাংশের ওপরে হলে এমনিতেই বছর শেষে ঋণের পরিমাণ সুদ যুক্ত করলে ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। অর্থাৎ ১০০ টাকা ঋণ থাকলে বছর শেষে তা ১১০ টাকা হয়ে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, টাকার প্রবাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ইতোমধ্যে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। সঙ্কট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ধার নেয়ার হার (রেপো) একসাথে পৌনে এক শতাংশ সুদ বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বপক্ষে দাবি হলো বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর অন্যতম উপায় হলো নীতি সুদহার বাড়ানো। আর নীতি সুদহার বাড়ানো হলো ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাড়বে। আর এতে সবধরনের ঋণের সুদহার বাড়বে। ঋণের সুদহার বাড়লে মানুষ কম ব্যয় করবে। এতে মূল্যস্ফীতি কমে যাবে। তবে এর বিপক্ষে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এটা কার্যকর হয় রফতানি বেশি এমন উন্নত দেশগুলোর জন্য। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি তো আমদানিনির্ভর। রফতানির চেয়ে আমদানি হয় বেশি। যেটুকু রফতানি হয় এর একটি বড় অংশ আবার (তৈরী পোশাক) ব্যাক টু ব্যাক এলসির নামে বিদেশে চলে যায়। সুতরাং ঋণের সুদহার বাড়লে পরোক্ষভাবে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আর এক্ষেত্রে উচ্চ মূল্যের কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেড়ে যায়। এতে মূল্যস্ফীতি কমে না বরং উসকে দেয়া হয়।

একজন ব্যবসায়ী বলেন, ব্যাংকগুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য ডলার সংস্থান করতে পারছে না। অনেক সময় প্রতি ডলারের বিপরীতে বেশি ব্যয় করেও চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের এলসি খোলা যায় না। এতে তাদের উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এমনিতেই ডলার সঙ্কট এরওপর ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতি না কমে বরং বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

দেশজুড়ে টানা বৃষ্টির সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস
ঢাকায় আজ তাপমাত্রার সব রেকর্ড ভাঙার শঙ্কা
খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মানতে হবে নির্দেশনা
আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি
নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার
থাইল্যান্ড গেলেন প্রধানমন্ত্রী

আরও খবর