Header Border

ঢাকা, শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ২৯.৯৬°সে

দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনাকে সচিবালয়ে হেনস্তার পর মামলা

*সময় সংবাদ লাইভ রির্পোটঃ স্বাস্থ্যসচিবের পিএস’র কক্ষ থেকে ‌’গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরি’র অভিযোগে দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে ৫ ঘন্টা আটকে রেখে মামলা দেয়া হয়েছে।গতকাল সোমবার রাত পৌনে ১২টায় এই মামলা দায়ের কথা জানান রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশিদ।

এরআগে রাত ৮টার দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, রোজিনা ইসলাম সচিবের পিএসের কক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলেন। কিছু কাগজপত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

অন্যদিকে দৈনিক প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন করে আলোচনায় আসা সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল সোমবার দুপুরের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে তাকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে এবং রাতে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, গতকাল বেলা তিনটার দিকে সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করা সাংবাদিকেরা জানতে পারেন, রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের পিএস’র কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে। তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই খবর পেয়ে সাংবাদিকেরা সেখানে ছুটে যান। যে কক্ষে রোজিনাকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। কক্ষের বাইরে আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। কয়েকজন সাংবাদিক কক্ষের ভেতরে গেলে রোজিনা ইসলাম বলেন, তাঁকে মিজান নামের এক পুলিশ সদস্য নাজেহাল করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে উপস্থিত সাংবাদিকেরা কয়েক দফা স্বাস্থ্যসেবাসচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি কথা বলতে চাননি। উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখাও করেননি। দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তারাও পরিষ্কার করে সাংবাদিকদের কিছু বলেননি।

কিন্তু একজন নারীকে এভাবে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখার কারণ না বলায় একপর্যায়ে সাংবাদিকেরা ক্ষোভ জানান। তাঁরা রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন। রোজিনা ইসলামকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার জন্যও তাঁরা বলতে থাকেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভেতরে দীর্ঘ সময় আটকে রাখার একপর্যায়ে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। রাত সাড়ে আটটায় তাঁকে ধরাধরি করে নারী পুলিশ সদস্যরা ওই কক্ষ থেকে বের করে নিচে নামিয়ে আনেন এবং গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। এ সময় সাংবাদিকেরা পুলিশের কাছে জানতে চান, রোজিনাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? তখন পুলিশ জানায়, চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর জানা যায়, তাঁকে হাসপাতালে নয়, শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়েছে।

এরপর সাংবাদিকেরা আবারও স্বাস্থ্যসেবাসচিবের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু তখনো তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান সচিবের কক্ষ থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রোজিনা ইসলাম সচিবের পিএসের কক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলেন। কিছু কাগজপত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

তবে রাত ১০টার দিকে শাহবাগ থানায় রোজিনা ইসলামের সঙ্গে দেখা করে এসে তাঁর বোন সাবিনা পারভীন সাংবাদিকদের বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁর বোন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, আটকের পর তাঁর বোনের ব্যাগ কেড়ে নেওয়া হয়। তখন ব্যাগে কিছু ‘ডকুমেন্ট’ ঢুকিয়েও দিয়ে থাকতে পারে। রোজিনা ইসলামের শারীরিক অবস্থা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁর বোন।

রাত পৌনে ১২টায় শাহবাগ থানা থেকে বেরিয়ে রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশিদ জানান, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

প্রথম আলো জানায় রাত আড়াইটা পর্যন্ত শাহবাগ থানায় পুলিশি হেফাজতে ছিলেন রোজিনা ইসলাম।

এ বিষয়ে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেছেন, ‘রোজিনা সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু আলোচিত প্রতিবেদন করেছেন। তিনি নিয়োগ দুর্নীতি নিয়েও প্রতিবেদন করেছেন। ধারণা করছি, এসব প্রতিবেদনের কারণে, রোজিনা ইসলাম কারও কারও আক্রোশের শিকার হয়েছেন।’ তিনি বলেন, বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য রোজিনা ইসলাম কানাডিয়ান অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সিলেন্স ইন বাংলাদেশি জার্নালিজম (২০১১), টিআইবির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার (২০১৫), পিআইবি ও দুদকের উদ্যোগে দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম পুরস্কার বাংলাদেশসহ (২০১৪) বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

দেশজুড়ে টানা বৃষ্টির সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস
ঢাকায় আজ তাপমাত্রার সব রেকর্ড ভাঙার শঙ্কা
খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মানতে হবে নির্দেশনা
আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি
নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার
থাইল্যান্ড গেলেন প্রধানমন্ত্রী

আরও খবর