Header Border

ঢাকা, রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ৩৫.৯৬°সে

পছন্দের থানায় যেতে ওসিদের দৌড়ঝাঁপ

সময় সংবাদ রিপোর্টঃ নির্বাচন কমিশন (ইসি) বদলির নির্দেশ দেওয়ার পর পছন্দের থানা পেতে অনেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। সুবিধামতো থানা পেতে নানা ‘মানবিক’ কারণ সামনে আনছেন। অনেকেই নিজের সন্তানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবারের সদস্যদের কারও কারও অসুস্থতার চিত্র তুলে ধরছেন বড় কর্মকর্তাদের কাছে। কেউ কেউ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের কাছেও ছুটছেন তদবির নিয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।

ছয় মাসের বেশি সময় ধরে একই থানায় ওসির দায়িত্বে রয়েছেন—এমন কর্মকর্তাদের অন্য জেলা বা অন্যত্র বদলির জন্য ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়। পুলিশ সূত্র জানায়, এর পরই ছয় মাসের বেশি সময় ধরে একই স্টেশনে থাকা ওসিদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। সে অনুযায়ী গতকাল রোববার পর্যন্ত সারা দেশে ৬৩৬ থানার মধ্যে ৩২৬ ওসিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তারা ছয় মাস থেকে তারও বেশি সময় ধরে একই থানায় দায়িত্ব পালন করছেন। ওই তালিকায় ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) ৩৩ জন ওসি রয়েছেন।

গতকাল রোববার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে ভেবে নির্বাচন কমিশন ওসিদের রদবদলের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তিনি বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনে করেছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে এক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আছেন, তারা কারও প্রতি প্রভাবিত হতে পারেন। এটা নির্বাচন কমিশনের বিবেচনা। সেজন্যই তারা ওসিদের বদলির কথা বলেছেন।’

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের সব থানার ওসিদের বদলির সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের নিমিত্তে সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে বদলি করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের অধিক চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে, তাদের অন্য জেলায় বা অন্যত্র বদলির প্রস্তাব আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করা প্রয়োজন।’

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার আলোকে ওসিদের বদলির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তা ছাড়া পরিদর্শকদের থানায় ওসি হিসেবে পদায়নের একটা নীতিমালা রয়েছে। ইসির নির্দেশনা বাস্তবায়নে সেটিও দেখা হচ্ছে। কারও তদবিরের জোরে পছন্দের জায়গায় বদলির সুযোগ নেই।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার আলোকে তারা ডিএমপির ওসিদের বদলির প্রস্তাবনার কাজ শুরু করেছেন।

গতকাল ডিএমপি থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, গত ৩০ নভেম্বরের নির্বাচন কমিশনের পত্রের আলোকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যেসব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের অধিক চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তাদের অন্যত্র বদলির প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য শিগগির নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাধারণত দুই বছরের জন্য ওসিদের থানায় নিয়োগ দেওয়া হয়। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পরিদর্শকদের বদলি করে মেট্রোপলিটন এবং রেঞ্জে পাঠানো হয়। এরপর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজির আদেশে থানায় ওসিদের পদায়ন হয়। এই ওসি বদলি ও পদায়নে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি নীতিমালা রয়েছে, যা প্রায় সময় পালন করা হয় না। বেশিরভাগ থানাতেই নানা তদবিরে ওসি পদায়ন হয়ে থাকে। অনেক ‘প্রভাবশালী ওসি’ নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ থানাগুলোতেও পদায়ন নেন। অনেক এলাকায় এমপি, মন্ত্রীসহ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা তাদের পছন্দের কর্মকর্তাকে ওসি হিসেবে পোস্টিং করে নিয়ে থাকেন। এজন্য একই জেলা বা মেট্রোপলিটনে ঘুরেফিরে পরিচিত মুখ ওসির দায়িত্ব পালন করে থাকেন। একই জেলা বা মেট্রোপলিটনে বছরের পর বছর ধরে একই ওসিদের দেখা যায়। নিয়ম রক্ষায় শুধু জেলার ভেতরই তাদের থানা বদল করা হয়। এ ধরনের কর্মকর্তারা এবার বিপাকে পড়েছেন। তারা নানা জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করলেও নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকায় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বা রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন না।

কয়েকটি থানার ওসির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ধরনের ‘গণবদলির’ জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন না। বিভিন্ন নির্বাচনের আগে কেবল পক্ষপাতমূলক আচরণ বা দায়িত্ব পালনে সমোলোচনা ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে ওসিসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়েছে। এবারই প্রথম সব থানার ওসিকে বদলির নির্দেশনা আসায় তারা অনেকটা বিস্মিত হয়েছেন।

দুই ওসি জানিয়েছেন, তাদের সাধারণত দুই বছরের জন্য একটি থানায় ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী তারা কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেন। পাশাপাশি সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা এবং থানা এলাকায় বাসা ভাড়া নেওয়ার বিষয়টিও থাকে। এখন হঠাৎ করে এমন বদলিতে তাদের ঝামেলায় পড়তে হতে পারে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, তারা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার আলোকে ওসি বদলির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তবে একসঙ্গে তিন শতাধিক ওসিকে বদলি ও পদায়ন করা কঠিন কাজ হবে। কারণ, একটি নির্বাচনী আসনে একাধিক থানা রয়েছে। এতে চাইলেই ওসিদের থানা বদল করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে হয়তো অনেককে জেলা থেকেই বদলি করতে হবে। সে বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। এজন্য হয়তো ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে তালিকা পাঠানো সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে সময় আবেদন করা হতে পারে।

অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, কোনো থানায় নতুন ওসি গেলে সেই থানার পরিস্থিতি বুঝতেই অনেক সময় লেগে যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট থানার অপরাধের ধরন, গতি-প্রকৃতি বুঝতেও সময় লাগে। এখন নির্বাচনের আগে একসঙ্গে এত ওসি বদলির কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। তবে পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে থাকে।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার
থাইল্যান্ড গেলেন প্রধানমন্ত্রী
তাপদাহে হিট অ্যালার্টের মেয়াদ আরও বাড়াল আবহাওয়া অফিস
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়াল সরকার
উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা
সব বিরোধী দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন

আরও খবর