Header Border

ঢাকা, রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ৩১.৯৬°সে

যৌন হয়রানির অভিযোগে পদ হারিয়েছেন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন

সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট : বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে পদ হারিয়েছেন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন। এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ২৬ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির জরুরি বৈঠকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে রেজিস্ট্রার পদ থেকে দেলোয়ার হোসেনের এই অব্যাহতিকে লোক দেখানো এবং ভয়ানক অপরাধ থেকে তাকে রক্ষার চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি (সহ-সভাপতি) ভাষা-যোগাযোগ ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র জুয়েল রানা বলেছেন, এমন গুরুতর অভিযোগের শাস্তি হিসেবে কেবল অব্যাহতি দেওয়া যথেষ্ট নয়। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে তার অপকর্মের সকল শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি করেন তিনি। অন্যদিকে, অবিলম্বে দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে তার সকল অনৈতিক আচরণ, দুর্নীতি ও ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মো. নজরুল ইসলাম রলিফ। বিচার দাবিতে ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গ্রুপ খুলে অনলাইনে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।

মো. নজরুল ইসলাম রলিফ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরপরই কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক দেলোয়ার হোসেনের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

দেলোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আস্থাভাজন হিসেবে পরবর্তী সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে আসেন। শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে অফিস কক্ষে যৌন নিপীড়নের‌ চেষ্টাসহ নানা অভিযোগ আসলেও তা ধামাচাপা দেওয়া হয়।

২০১৭ সালেও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত একটি অভিযোগ ইউজিসিতে দাখিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তখন তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগের বিষয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে জবাব চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বলে জানায় ইউজিসি।

এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক নারী শিক্ষক রেজিস্ট্রার কর্তৃক নানাভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করলেও পরবর্তী সময়ে তারা কোনো প্রতিকার পাননি।

সম্প্রতি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে একই প্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রীর অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। ২৬ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ফোনালাপে ওই শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল কথাবার্তা বলেন এবং অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন রেজিস্ট্রার। ফোনালাপ ফাঁসের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাস্টি বোর্ডের সকল সদস্যের সম্মতিক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মেজর এটিএম হায়দার বীরউত্তম মিলনায়তনে জরুরি বৈঠকে বসেন গণ বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা। ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম চৌধুরীসহ আরও অনেকে এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, ভুয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট দিয়ে ২০০২ সালের ৩ আগস্ট গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন দেলোয়ার হোসেন। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা তার স্বভাব ও আচার-আচরণ দেখে শিক্ষা সনদের বিষয়ে সন্দেহ থেকে গোপনে দেলোয়ার হোসেনের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে তদন্ত করেন এবং জানতে পারেন তিনি মাস্টার ডিগ্রিধারী বা গ্রাজুয়েটও নন। তিনি এইচএসসি পাস মাত্র। বায়োডাটায় ভুয়া মাস্টার ডিগ্রি দেখিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়কে ধোঁকা দিয়ে আসছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের গোপন পছন্দের বিষয়টি টের পেয়ে রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন তার অফিসে রক্ষিত ব্যক্তিগত ফাইল গায়েব করে দেন। এমন পরিস্থিতিতে দেলোয়ার হোসেনকে‌ ক্যাশ ভাউচার, আর্থিক যেকোনো অনুমোদন, ব্যাংক চেকে স্বাক্ষরসহ সকল অফিসিয়াল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়। নতুন চেক সিগনেটরী নির্ধারণ করা হয় উপাচার্য ডা. লায়লা বানু ও অ্যাকাউন্স অ্যান্ড ফিন্যান্সের ডেপুটি ডিরেক্টর মো. আব্দুল কাদেরকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) ড. লায়লা পারভীন বানুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সম্প্রতি এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ফাঁস হওয়া অশ্লীল কথোপকথোনের বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে জানান, ট্রাস্টি বোর্ড দেলোয়ার হোসেনকে রেজিস্ট্রার পদে রাখার জন্য আর উপযুক্ত মনে করছে না বলে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেলোয়ার হোসেন চাকরির ধারাবাহিকতায় যোগ দেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিরাপত্তা প্রধানের দায়িত্ব থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উচ্চতর প্রশাসনিক পদে বিশেষ করে পরিচালক প্রশাসন ও নির্বাহী পরিচালকের পদেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে জমি জবর দখলের অভিযোগে বেশকিছু মামলার আসামি হন দেলোয়ার হোসেন।

স্থানীয় সূত্র বলছে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকাকালীন নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন দেলোয়ার হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বিলাসবহুল একটি বাগান বাড়ি তৈরি করে সেখানে তিনি অনেককে আমন্ত্রণ করে নিয়ে যেতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার নিয়ন্ত্রণে কর্মরত অনেক নারীই নিগৃহীত হয়েছেন। তাদের অনেকেই চাকরি হারানো ও সামাজিকতার ভয়ে অভিযোগ না দিয়ে বরং গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্র।

এ বিষয়ে জানতে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরবর্তী সময়ে প্রতিক্রিয়া জানতে মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি তিনি।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মানতে হবে নির্দেশনা
আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি
নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার
থাইল্যান্ড গেলেন প্রধানমন্ত্রী
তাপদাহে হিট অ্যালার্টের মেয়াদ আরও বাড়াল আবহাওয়া অফিস
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়াল সরকার

আরও খবর