সময় সংবাদ লাইভ রির্পোটঃ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ব্যানারে নিউইয়র্ক সিটিতে অন্তত আটটি কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার অন্তত একটি আয়োজনে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে একটিতে বিএনপি সমর্থক বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমানকে আঘাত করা হয়েছে; আরেকটিতে দেখা দেয় উত্তেজনা।
সোমবার লাগোয়ার্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলের বলরুমে ৫০১ সদস্যের ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি’র অনুষ্ঠানে নাজুক অবস্থা তৈরি হয়। ৪৭ যুগ্ম আহবায়ক ও ২৮ যুগ্ম সদস্য-সচিবের মধ্যে মাত্র ১২ জন উপস্থিত হয়েছিলেন সেখানে।
এদিকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে ‘অনাচার’ ও ‘বিগত দিনের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়নের’ অভিযোগ তুলে এই কমিটির বাকিরা পাল্টা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব ও খালেদা জিয়ার আব্দুস সালাম এই কমিটি করেন । তাকে সহায়তা দিয়েছেন লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন।
অনেকে অভিযোগ করছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির বিলুপ্ত কমিটিতে বিগত দিনে নেতৃত্ব প্রদানকারীদের পরামর্শ না নেওয়ায় অনেকে বাদ পড়েন ওই কমিটি থেকে। প্রতিবাদের মুখে আরো ১০০ জনকে পরে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও ইতিমধ্যেই সৃষ্ট ক্ষোভের পরিসমাপ্তি ঘটেনি।
তারই পরিণতি হিসেবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন ঘিরে ‘লংকাকাণ্ড’ ঘটলো বলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মনে করছেন।
সবচেয়ে ‘ন্যাক্কারজনক’ ঘটনা ঘটে ২৯ মে সন্ধ্যায় কাজী আজম ও ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপের অনুষ্ঠানে। সেখানে অতিথির মধ্যে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক কন্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন।
তাকে উদ্দেশ্য করে অনুষ্ঠানের অপর অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মশিউর রহমান বলেছিলেন, “আপনারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পেয়েছেন। অথচ ম্যাডাম আজ কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। আপনাদের উচিত ছিল স্বেচ্ছায় কারাবরণের, সেটি কেউ করেননি।
“অধিকন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এসে অনেকেই বিএনপির কোন্দলে মদদ দিচ্ছেন। প্রবাসের নিষ্ঠাবান কর্মীদেরকে বিভ্রান্ত করছেন। আপনাদের কান পড়ার কারণে ৯ বছর যাবত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি হচ্ছে না।”
মীর মশিউরের এমন বক্তব্যে উপস্থিত এক কর্মী তার প্রতি তেড়ে যান এবং কিল-ঘুষি দিয়ে চেয়ার থেকে ফেলে দেন। এতে তিনি আহত হয়েছেন।
৩০ মে সন্ধ্যায় আলোচনা সভা ও দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করে ৫০১ থেকে ৬০১ সদস্যে বর্ধিত ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি’। সেখানে যুগ্ম আহ্বায়ক, যুগ্ম সদস্য-সচিবদের ১০ শতাংশও উপস্থিত ছিল না।
বিএনপির কর্মকাণ্ডে কখনোই দেখা যায়নি এমন কয়েকজন প্রবাসীকে সেখানে আনা হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ।
বিএনপির কেন্দ্রীয় উদযাপন কমিটির অন্যতম সদস্য গিয়াস ৬০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির দুই শীর্ষ নেতার বিরোধিতায় ২৯ মে স্ন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছিলেন। সেই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাসাসের সেক্রেটারি চিত্রনায়ক হেলাল খান।
ওই দুই নেতার আচরণের প্রতিবাদে ৩০ মে সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করেন ওই কমিটির অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেন বাদল। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।
৩০ মে এই আলোচনা সভা ছাড়াও জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসীর উদ্যোগে দোয়া-মাহফিল ও তবারক বিতরণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ। এ কর্মসূচিতে বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরো ছিলেন নিউইয়র্ক মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি আবুল কাশেম।
৩১ মে সোমবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে ইত্যাদি গার্ডেন পার্টি হলে জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আরেকটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি নেতা বাসেত রহমান এবং পরিচালনা করেন সোহরাব হোসেন।
সময় সংবাদ লাইভ।