সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্টঃ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কেউ কেউ কথা ওঠানোর চেষ্টা করছে।’ সবাইকে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সমান সুযোগ নিয়ে চলবে। সব ধর্মের মানুষ এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে রক্ত ঢেলে দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই এদেশের মাটিতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার নিয়েই বসবাস করবে।’ দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল বুধবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। অপর প্রান্তে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফীসহ দলীয় নেতারা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলীয় কার্যালয় থেকে বক্তব্য রাখেন। এসময় কেন্দ্রীয় নেতারাও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন।
দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সবাইকে বলবো, যে কোনও পরিস্থিতি সহনশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়, সেটাই করতে হবে। কে কী বললো, না বললো, সেগুলো শোনার থেকে আমরা কতটুকু দেশের জন্য করতে পারলাম, সেটাই আমাদের চিন্তায় থাকবে। তাহলে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবো, সঠিক কাজ করতে পারবো এবং সেভাবেই আমরা করে যাচ্ছি।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘এই মাটিতে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সকল ধর্ম আছে। অর্থাৎ আমরা এখন মুসলমান সংখ্যা গরিষ্ঠ আছি বলে অন্য ধর্মাবলম্বী যারা, তাদের অবহেলার চোখে দেখবো, তা নয়। কারণ, মনে রাখতে হবে, সকলে এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে একইসঙ্গে রক্ত ঢেলে দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই এদেশের মাটিতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার নিয়েই বাস করবে। যার যার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা সবারই থাকবে এবং সেই চেতনায় আমরা বিশ্বাস করি। ইসলাম আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়ে থাকে। নবী করিমও (সা.) আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়ে থাকেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঠিক বিজয়ের প্রাক্কালে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। ঠিক যখন যুদ্ধটা শুরু, তারপর থেকে এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা শুরু করে। ৮ ও ৯ ডিসেম্বর থেকে তারা শুরু করেছিল এবং ১৪ তারিখ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করি।’ নিজের বাবা-মা, সব ভাই হারোনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি জানি, হারানোর বেদনা কত কঠিন। অনেকে তো লাশও পাননি। আবার ৭৫ এর পর জাতির পিতাকে শুধু হত্যা করেনি, আমাদের আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের বহু নেতাকর্মী তাদেরকেও নির্মমভাবে হত্যা করেছে, অনেকের লাশও পাওয়া যায়নি। এই নির্যাতন তো চলছে অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানাভাবে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, সবকিছু আমরা দেখেছি।’
দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানতে হবে। বিজয় দিবসে এটা প্রতিজ্ঞা হবে জাতির পিতা যে স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন, আমরা জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণ করবো।
তিনি বলেন, জাতির পিতার আদর্শ বুকে নিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করে এদেশের মানুষের পাশে থাকবো। এদেশের মানুষ আর কখনও কারও কাছে মাথা নত করে চলবে না। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে বাঙালি জাতি চলবে, যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল, সেটাই আমরা পূরণ করবো।’ জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে উদ্যোগী হতেও আহ্বান জানান তিনি।