Header Border

ঢাকা, রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ২৭.৯৬°সে

কোভিডকালে ঋণের বোঝা দ্বিগুণ, আয় কমেছে ১৪ শতাংশ: গবেষণা

সময় সংবাদ লাইভ রির্পোটঃ করোনার তাণ্ডবে ঋণের জালে জড়িয়ে এবং সঞ্চয় হারিয়ে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের দৈনন্দিন জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে শহুরে বস্তিবাসীদের অবস্থা বেশ ভয়াবহ। বস্তিতে কোভিডপূর্ব অবস্থার আয়ের চেয়ে এখনকার আয় ১৪ শতাংশ কমেছে।
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশান রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি)-র করা যৌথ গবেষণার তৃতীয় ধাপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
দেশব্যাপী তিন ধাপে করা এই জরিপে কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্যের গতিপ্রকৃতি এবং স্বল্প আয়ের মানুষদের মাঝে এর প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করা হয়েছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তথ্য নিয়ে গবেষণাটি করা হয়।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এই ফলাফল তুলে ধরেন পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন।
মহামারির কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নানান শ্রেণীপেশার মানুষ। এদের মাঝে আছে হতদরিদ্র এবং মাঝারি দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ। এদের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। এছাড়া রয়েছে দরিদ্র নয় কিন্তু ঝুঁকিতে থাকা এক শ্রেণীর মানুষ, যাদের বলা হচ্ছে ভালনারেবল নন পুওর বা ভিএনপি।
গবেষণায় দেখা গেছে, দারিদ্র্যসীমার উপরে কিন্তু মধ্যম জাতীয় আয়সীমার নিচে থাকা এই শ্রেণীর মানুষদের অবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে সবচেয়ে ধীরগতিতে। গত জুনে দরিদ্র নয় কিন্তু সেই ঝুঁকিতে থাকা এই মানুষদের ৭২ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিল। তাদের আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘নতুন দরিদ্র’ হিসেবে। সেই ‘নতুন দরিদ্র’দের ৫০ শতাংশ এখনও ঝুঁকিতে থাকা মানুষের তালিকায় বিদ্যমান। এই হার শহরে ৫৯ শতাংশ এবং গ্রামে ৪৪ শতাংশ। বর্তমানে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ‘নতুন দরিদ্র’দের এই হার বিগত বছরের জুনে ছিল ২১ দশমিক ২ শতাংশ।
যদিও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিগত জুন মাস থেকে উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারপরও কোভিডের পূর্বে কাজ ছিল কিন্তু এখন বেকার এমন মানুষ রয়েছে ৮ শতাংশ। কর্মহীনতার এই ধারা নারীদের জন্য বেশ আশংকাজনক। কোভিডের আগে কর্মজীবী ছিলেন এমন নারীদের এক-তৃতীয়াংশ গত বছর জুন মাস থেকে এখনও বেকার। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার নেমে এসেছে ১৬ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ।
স্বল্প আয় এবং বেকারত্বের পাশাপাশি কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারের প্রকৃতি বদলে যাওয়াটাও একটি বড় চিন্তার বিষয়। কোভিডের কারণে অনেককেই তাদের পেশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এদের অধিকাংশই ‘অদক্ষ শ্রমিক’ হিসেবে নতুন পেশা গ্রহণ করেছে। যেমন- অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিক, বেতনভুক্ত কর্মী এবং কারখানার কর্মীরা দিনমজুর হিসেবে কাজ শুরু করেছে।
ড. ইমরান মতিন তার বক্তব্যে নারীদের কর্মহীনতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, এমনিতেই দেশের শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ কম। আর কোভিডসৃষ্ট এই অবস্থা নারীদের শ্রমবাজার থেকে আরও ছিটকে ফেলতে পারে। তিনি আরও বলেন, পেশা পরিবর্তন করে দিনমজুরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশা গ্রহণ করায় দরিদ্রদের দুরবস্থা আরও বাড়ছে।
শুধু কৃষিখাতই বলা চলে কোভিডপূর্ব অবস্থার মতো ইতিবাচক অবস্থান গড়তে পেরেছে। শহরে আয়ের সুযোগ হ্রাস পাওয়ায় বস্তি থেকে গ্রামে চলে যাওয়ার ঘটনা প্রচুর ঘটেছে। গতবছর ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বস্তিবাসী শহর ছেড়েছিল যাদের ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এখনও ফেরেনি। প্রাক-কোভিড অবস্থার তুলনায় আয় কমলেও খাবারের ব্যয় বাদে দৈনন্দিন যে ব্যয় সেটি গত জুন থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। ভাড়া বাড়িতে থাকা অধিকাংশ শহুরে দরিদ্রদের জন্য এটি নির্মম বাস্তবতা। সবার সঞ্চয় কমে গেছে আশ্চর্যজনকভাবে। ভিএনপি এবং দরিদ্র নয় এমন শ্রেণীর মানুষদের সঞ্চয়ের পরিমাণ কোভিড পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে নিচে নেমে গেছে। একইসাথে সব শ্রেণীতেই ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যদিও কোভিডকালে সামাজিক সুরক্ষা নামমাত্র ভূমিকা পালন করছে কিন্তু এটিকে অগ্রাধিকার দেয়া দরকার। শহরের দরিদ্র শ্রেণী এবং ‘নতুন দরিদ্র’দের জন্য বর্তমানে থাকা সুরক্ষা কর্মসূচির পাশাপাশি কার্যকরী ও প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন ও তাৎপর্যপূর্ণ আরও কর্মসূচি হাতে নেয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন আয়ের ধাক্কা সামলাতে ‘স্মার্ট’ লকডাউন দরকার। এটি স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারও বটে।’
ড. জিল্লুর রহমান দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়া নারী ও ‘নতুন দরিদ্র’দের সহায়তার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জানান, সিএসএমইসহ অর্থনৈতিক দুরবস্থায় পড়া খাতগুলোতে একটি পরিকল্পিত এবং ‘জোর ধাক্কা’ দেয়া প্রয়োজন। শুধু তাই নয় তিনি অতিদ্রুত একটি জাতীয় সিএসএমই পুনরুদ্ধার কর্মসূচি প্রণয়নেরও আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে দেশের বিশিষ্ট গবেষকরাও উপস্থিত ছিলেন।

সময় সংবাদ লাইভ। 

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

দুবাইয়ে গোপন সম্পদের পাহাড়, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশি
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়াল সরকার
চালের দাম বাড়ছে : সবজির দাম কমলেও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মুরগি
হঠাৎ পেঁয়াজের দাম কমে অর্ধেকে
বাংলাদেশী নাবিকদের হত্যার হুমকির জলদস্যুদের
রমজান নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে মাঠপ্রশাসনে কঠোর নির্দেশনা

আরও খবর