Header Border

ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ৩৭.৯৬°সে

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়  হঠাৎ বেড়েছে নৃশংস হত্যাকাণ্ড

আলমগীর পারভেজ: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়  হঠাৎ নৃশংস হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। কলাবাগানে নিজের বাসায় নারী চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার, মহাখালীতে ময়না মিয়া নামে একজনের গলাকাটা হাত ও পা উদ্ধারের পর গতকাল তার মাথা উদ্ধার, পল্লবীতে সন্তানের সামনে শাহীন উদ্দিন নামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা, দক্ষিণখানে যুবককে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ ছয় টুকরো করে মসজিদের সেপটি কট্যাঙ্কে লুকিয়ে রাখেন ইমাম, ওয়ারীতে প্রেমিককে কুপিয়ে পাঁচ টুকরো করেন নারী, গাজীপুরে ঘুমন্ত স্বামীকে ছয় টুকরো করেন ‘স্ত্রী-প্রেমিক’ ও লামায় প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানসহ ৩ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এভাবে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রমাগত বাড়ছে অপরাধ। পারিবারিক কলহ, পূর্বকত্রুতার জের, সম্পর্কের অবক্ষয়, পরকীয়া, ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিস্বার্থের দ্বন্দ্ব, ছোটখাট বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি, এমনকি ঝগড়া-বিবাদ থামাতে গিয়েও একের পর এক ঘটছে হত্যাকাণ্ড। সারা দেশেই অপ্রীতিকর ঘটনা বাড়ছে। ফলে ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মানুষ।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, যুগ যুগ ধরেই এমন অপরাধ ঘটে আসছে। এ থেকে উত্তরণের যুগসন্ধিক্ষণে আমরা অবস্থান করছি। সমাজের ভেতর পরিবার, প্রতিবেশী, এলাকাভিত্তিক সংস্কৃতির চর্চা ও বন্ধনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে পর্নোগ্রাফির ছোবল ও মাদকাসক্তির মতো বিষয়গুলো মিলে পুঁজিবাদী সমাজের প্রাথমিক অবস্থা বিরাজমান। এ অবস্থায় মানুষের লোভ-লালসা বেড়ে গেছে। উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স, পরকীয়ার মতো বিষয়গুলোও বেড়ে গেছে। সব কিছু মিলিয়ে আগের সামাজিক অনুশাসনগুলো আর কাজ করছে না।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের গত তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে এবং কারা হেফাজতে ২৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজত ও ‘ক্রসফায়ারে’ ১৪ জন এবং কারাগারে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা যান ১৪ জন। আসক এর তথ্যমতে, গত তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ১৬৬টি। এতে বিভিন্ন সময় সংঘাতের কারণে নিহত হয়েছেন ৩৬ জন এবং আহত হয়েছেন ২৪১০ জন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ/গুমের শিকার হন ২ জন। গত তিন মাসে ৭৭ শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকার হয় এবং হত্যার শিকার হয়েছে ১৪৪ শিশু। এ সময়কালে গণপিটুনির ঘটনায় মারা গেছেন মোট ৫ জন।
আসক থেকে বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যকীয়। অন্যথায় বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায় এবং এ ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। করোনার এ সংকটকালীন সময়ে আসক সরকারের কাছে নাগরিকের সব ধরনের মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার দ্রুততার সাথে নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে এ মানবাধিকার সংগঠননের কর্মীরা।
ছেলের সামনে বাবাকে কুপিয়ে হত্যা: গত ১৬ মে বিকেলে জমির বিরোধের মীমাংসার কথা বলে শাহীন উদ্দিনকে পল্লবী থানার ডি-ব্লকের একটি গ্যারেজের ভেতর নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। প্রকাশ্য দিবালোকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা আকলিমা বেগমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ মে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৬ মে বিকেল ৪টার দিকে সুমন ও টিটু নামের দুই যুবক শাহীন উদ্দিনকে জমির বিরোধ মেটানো হবে জানিয়ে ফোন করে ডেকে নেন। শাহীন মোটরসাইকেলে পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর সড়কের ৪০ নম্বর বাসার সামনে গেলে, সুমন ও টিটুসহ ১৪-১৫ জন মিলে তাকে টেনে-হিঁচড়ে ওই বাড়ির গ্যারেজে নিয়ে যান। এ সময় শাহীনের সাত বছরের ছেলে মাশরাফি গেটের বাইরে ছিল। গ্যারেজে ঢুকিয়ে শাহীনকে চাপাতি, চায়নিজ কুড়াল, রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন তারা। এরপর তাকে ওই গ্যারেজ থেকে বের করে ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে আবার কুপিয়ে ফেলে রেখে গেলে ঘটনাস্থলেই শাহীনের মৃত্যু হয়।  আকলিমার অভিযোগ, পল্লবীর সেকশন-১২ বুড়িরটেকের আলীনগর আবাসিক এলাকার হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেডের এমডি এবং লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এম এ আউয়ালের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাড়া করা স্থানীয় সন্ত্রাসীরা শাহীনকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়ালসহ কয়েকজন আসামীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। মামলার দুই আসামী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।

ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন রাজশাহীতে ছোট ভাই শিমুল হোসেনের (১৬) হাতে বড় ভাই সাকিব হোসেন (১৮) খুন হয়েছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ। ২৬ মার্চ রাতে নগরীর উপকণ্ঠ হাড়ুপুর বাগানপাড়া এলাকায় হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে নিজবাড়ি থেকে সাকিবের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সাকিব হোসেনের বাবার নাম হেলিন। পেশায় তিনি একজন ট্রাকচালক।

বাবার হাতে ছেলে খুন মাদারীপুরের কালকিনিতে মায়ের পরকীয়ার জেরে ছেলেকে গলাকেটে হত্যা করেছে বাবা। পরে বিষ খাওয়া অবস্থায় বাবাকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় সদর হাসপাতালে। ২৫ এপ্রিল রাত ১০টায় উপজেলার গোপালপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
হত্যার পর ৬ টুকরো করে লাশ সেপটিক ট্যাংকে  গত ২৪ মে রাতে রাজধানীর দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি এলাকার একটি সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তির নাম আজহারুল ইসলাম (৩৭)। তিনি পোশাককর্মী ছিলেন। এ ঘটনায় মসজিদের ইমাম আবদুর রহমান ও নিহতের স্ত্রী আসমা আক্তারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ঘটনার পরিকল্পনাকারী ভুক্তভোগী আজহারের স্ত্রী আসমা আক্তার ও মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমান দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন। রোববার পাঁচ দিনের রিমান্ড চলাকালে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে সম্মত হন তারা। এরপর তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে জবানবন্দী রেকর্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার উপ-পরিদর্শক অনুজ কুমার সরকার।

প্রেমিককে হত্যার পর পাঁচ টুকরো  পরকীয়ার টানে স্বামীর ঘর ছেড়ে পালিয়েছিল শাহনাজ পারভিন। কিন্তু হঠাৎ করেই প্রতারণার আশ্রয় নেয় পরকীয়ার নায়ক সজিব হাসান। অবৈধ মেলামেশার সময় মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে সে। পারভিনকে সেই ভিডিও দিয়ে জিম্মি করা হয়। তার কাছে বায়না ধরে এবার তাকে (শাহনাজ) নয়, মেয়েকে এনে দিতে হবে। একই সঙ্গে স্বামীর কাছ থেকে টাকা এনে দিতে হবে। না হলে লোকজনের মধ্যে ভিডিও ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এনিয়ে দুজনের মধ্যে চলে ঝগড়া ও মারামারি। এক পর্যায় সজিব ঘুমিয়ে পড়েন। এসময় শাহনাজ রান্নাঘর থেকে বটি এনে ঘুমন্ত সজীবকে কোপাতে থাকেন। বিছানার ওপর সজীব নিহত হন। পরে সজিবের শরীর থেকে দুই হাত ও দুই পা বিচ্ছিন্ন করেন। পরে পারভিন নিজেই তার স্বামীর কাছে ফোন দেন। ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সায়েদাবাদ সংলগ্ন ওয়ারির টিকাটুলির ১৭/১ কে এম দাস লেনের ভবনের চারতলার বাসায় ঘটে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।
প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানসহ ৩ জনের লাশ উদ্ধার বান্দরবানের লামায় ঘরের তালা ভেঙে শিশুসহ একই পরিবারের ৩ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২১ মে সন্ধ্যায় উপজেলার চম্পাতলী এলাকার কুয়েত প্রবাসী নুর মোহাম্মদের ঘর থেকে মাসহ দুই মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন- নুর মোহাম্মদের স্ত্রী মাজেদা বেগম (৪০), বড় মেয়ে রাফি (১৩) ও ছোট মেয়ে নুরি (১০ মাস)। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, কুয়েত প্রবাসী নুর মোহাম্মদের স্ত্রী মাজেদা বেগম ৩ সন্তানসহ ১নং ওয়ার্ডের চম্পাতলীর নিজ ঘরে বসবাস করত। সন্ধ্যায় ঘর তালাবদ্ধ দেখে পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশীরা জানালা দিয়ে দেখেন ঘরের মেঝেতে মা ও ছোট মেয়েকে পড়ে আছে।
ঘুমন্ত স্বামীকে ৬ টুকরো করেন ‘স্ত্রী-প্রেমিক’গাজীপুরে স্ত্রী ও তার প্রেমিককে মারধর করার প্রতিশোধ নিতে ঘুমন্ত সুমন মোল্লাকে (২৮) শ্বাসরোধে হত্যার পর ছয় টুকরো করা হয়। পরে লাশের টুকরো, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত করাত ও চাপাতি বিভিন্নস্থানে ফেলে গুম করার চেষ্টা করেন নিহতের স্ত্রী ও তার প্রেমিক। এ ঘটনায় সুমনের স্ত্রী ও দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার নারায়ণপুর এলাকার মৃত আশরাফ আলীর মেয়ে আরিফা (২৪) এবং ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার নরকোনা এলাকার আদিত্য সরকারের ছেলে তনয় সরকারকে (৩১) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার মো. জাকির হাসান রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন। নিহত সুমন মোল্লা (২৮) বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার গোলা বরননী বাজার এলাকার জাফর মোল্লার ছেলে। জিএমপির উপকমিশনার মো. জাকির হাসান জানান, গত ২১ এপ্রিল দুপুরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন সারদাগঞ্জের হাজী মার্কেট পুকুরপাড় এলাকার জামাল উদ্দিনের বাড়ির পাশের খোলা সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে কাঁথা দিয়ে পেঁচানো মাথা ও হাত-পাবিহীন অবস্থায় অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে উদ্ধারকৃত লাশটি সুমনের বলে শনাক্ত করেন স্বজনেরা।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

ঢাকায় আজ তাপমাত্রার সব রেকর্ড ভাঙার শঙ্কা
খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মানতে হবে নির্দেশনা
আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি
নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার
থাইল্যান্ড গেলেন প্রধানমন্ত্রী
তাপদাহে হিট অ্যালার্টের মেয়াদ আরও বাড়াল আবহাওয়া অফিস

আরও খবর