*সময় সংবাদ লাইভ রির্পোটঃ জিম্বাবুয়ে সফরে ওয়ানডে সিরিজে জয় দিয়ে শুরু করেছে বাংলাদেশ। গতকাল প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ১৫৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে জিম্বাবুয়েকে। ফলে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যাধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। লিটন দাসের সেঞ্চুরি আর সাকিবের বোলিংয়ে সহজেই জয় পায় টাইগাররা। হারারেতে আগে ব্যাট করে লিটন দাসের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে করে ২৭৬ রান। জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের সামনে টার্গেট দাড়াঁয় ২৭৭ রান। টার্গেটটা জিম্বুয়ের জন্য কঠিনই ছিল। এই কঠিন টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে স্বাগতিকরা। জিম্বাবুয়ে ইনিংসের শুরুতেই আঘাত হানেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে সাইফউদ্দিনের বল কাট করতে চেয়েছিলেন তাদিওয়ানাশে মারুমানি। কিন্তু বল জিম্বাবুয়ে ওপেনারের ব্যাটের কানায় লেগে স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়। এর ২ ওভার পর তাসকিনের বলে বোল্ড হয়ে ৯ রানে ফেরেন জিম্বাবুয়ের ওয়েসলি মাধেভেরে । ফলে ১৩ রানেই ২ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর ডিয়ন মায়ার্স ও অধিনায়ক টেইলরের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু দলীয় সংগ্রহ ৫০ ছোঁয়ার আগেই বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের বলে নিজেদের তৃতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। শরিফুলের করা ইনিংসের দশম ওভারের তৃতীয় বলে খেলতে গিয়ে মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে ১৮ রানে ক্যাচ তুলে দেন মায়ার্স । ৪৯ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিলেন টেলর আর রেগিস চাকাভা। কিন্তু তাদের চতুর্থ উইকেট জুটিটি ২৯ রানের বেশি যেতে দেননি সাকিব আল হাসান। সাকিব দ্বিতীয় স্পেলে এসেই তুলে নিয়েছেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি। জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক টেলর তাকে সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে সাজঘরে ফেরেন ৩১ বলে ২৪ করে। এখানেই থেমে থাকেননি সাকিব। দ্বিতীয় স্পেলে সাকিবের বোলিংয়ে এলোমেলো জিম্বাবুয়ে। প্রথমে ব্রেন্ডন টেইলরকে সাজঘরে পাঠান সাকিব। টেইলের উইকেট নিয়ে সাকিব বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়েন। পেছনে ফেলেন মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। ২১৩ ওয়ানডেতে সাকিবের উইকেট ২৭০টি। শীর্ষে উঠতে সাকিব পেছনে ফেলেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। মাশরাফি ২১৮ ম্যাচে ২৬৯ উইকেট পেয়েছেন। রায়ান বার্ল ও মুজারাবানির উইকেটও নেন বাঁহাতি স্পিনার সাকিব। মাঝে রান আউট হন লুক জংউই। ফলে ১০৭ রানে জিম্বাবুয়ের সাত ব্যাটসম্যান সাজঘরে। অনেক কিছু নির্ভর করছিল রায়ান বার্ল ও চাকাভা জুটির ওপর। তাতে হতাশই করেছেন বার্ল। ১৭ বল খেলে ৬ রানে ক্যাচ উঠিয়ে দেন আফিফ হোসেনকে। এরপর উইকেট হারাতে থাকে একের পর এক। রান আউটে বিদায় নেন লুক জংউই, ব্লেসিং মুজারাবানিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে তৃতীয় উইকেট পকেটে পুড়েন সাকিব। অপরপ্রান্ত আগলে চাকাভা হাফসেঞ্চুরি তুললেও হারের ব্যবধান কমানো ছাড়া সেটি আর কোনও ভূমিকা রাখেনি। হাফসেঞ্চুরিয়ান এই কিপারকেও মেহেদীর তালুবন্দি করিয়েছেন সাকিব। এরপর রিচার্ড এনগারাভাকে গ্লাভসবন্দী করিয়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংসটাই শেষ করে দিয়েছেন তিনি।ব্যাট হাতে দুঃসময় কাটানো এই অলরাউন্ডার বল হাতে পুষিয়ে দিলেন সব অপূর্ণতা। শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়ম ১২১ রানে। দলটি খেলতে পারেনি পুরো ৫০ ওভার। ২৮.৫ ওভারেই মাঠ ছেড়েছে জিম্বাবুয়ে। সাকিব আল হাসান একাই নেন ৫ উইকেট। এর আগে, ব্যাট করতে নেমে লিটনের সেঞ্চুরিসহ ১০২ রানের সঙ্গে আফিফ হোসেনের ৪৫ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৩৩ রানের কল্যাণে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৭৬ রান করে বাংলাদেশ। হারারের স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি টাইগারদের। সাবধানে ব্যাট করতে চেয়েছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন। কিন্তু তৃতীয় ওভারের শুরুর বলে উইকেটের পিছনে চাকাভার হাতে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে ফেরেন তামিম ইকবাল। ভালো করতে পারেননি সাকিব আল হাসানও। ব্লেসিং মুজারাবানির দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন ২৫ বলে ১৯ রান করে। মুশফিকুর রহিমের জায়গায় চার নম্বরে সুযোগ পেয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন। চাতারার বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ১৯ রানে আউট হয়েছেন মিঠুন। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও ৫ রান করে ফিরে গেলে ৭৪ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিপাকে টাইগাররা। দলের এই বিপদে টিকে ছিলেন ওপেনার লিটন দাস। সাবলীল ব্যাটিংয়ে রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। ৭৮ বলে হাফসেঞ্চুরি করার পর সেঞ্চুরিও করেন এই ওপেনার। ওয়েসলে মাধেভেরের করা বল ডিপ মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে সেঞ্চুরির উদযাপনটা করেন লিটন। এছাড়া লিটন-মাহমুদউল্লার পঞ্চম উইকেটের ৯৩ রানের জুটি খেলায় ফেরায় বাংলাদেশকে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৫২ বলে করেন ৩৩ রান। পরে আফিফ হোসেনে সঙ্গে ৫০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ১০২ রান করে আউট হন লিটন। ১১৪ বলের ইনিংসটি সাজান ৮টি চারের সাহায্যে। শেষদিকে আফিফ ৩৫ বলে ৪৫ রান ও মেহেদী হাসান মিরাজের ২৫ বলে ২৬ রানের ইনিংসে ২৭৬ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের হয়ে লুক জংউই ৩টি এবং ২টি করে উইকেট নেন রিচার্ড এনগারাভা ও ব্লেসিং মুজারাবানি।