সময় সংবাদ রিপোর্টঃ চার লেনের সড়ক প্রায় প্রস্তুত। পদ্মা সেতুতে এখন চলছে পিচ ঢালাই আর ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ। রঙ আর আলোকসজ্জার কাজ শেষ করে আগামী জুনে সড়কপথ চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। সড়কপথ চালুর পর সেতুতে শুরু হবে রেলপথ বসানোর কাজ। জুলাইয়ের মধ্যে কাজটি শুরুর কথা জানিয়েছেন পদ্মা বহুমুখী সেতু ও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কর্মকর্তারা। রেলপথ বসাতে সময় লাগবে কম-বেশি ছয় মাস। সড়কপথটি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে যান চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে তবে রেলপথ স্থাপনের কাজ চলাকালে ঝুঁকি এড়াতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি রাখা হতে পারে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতু তৈরি করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।অন্যদিকে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত পৃথক প্রকল্পে নতুন ১৬৯ কিলোমিটার ব্রড গেজ রেলপথ তৈরি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। শুরুতে পরিকল্পনা ছিল, পদ্মা সেতুতে যেদিন থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হবে সেদিন থেকেই ট্রেন চালানোর। তবে রেল সংযোগ কাজের ধীরগতির কারণে এ পরিকল্পনা থেকে সরে আসে সরকার।বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী জুনে চালু হবে পদ্মা সেতুর সড়কপথ। রেলপথটির একটি অংশ (ঢাকা-ভাঙ্গা) চালুর লক্ষ্য ধরা হয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। আর পুরো রেলপথটি চালু হবে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে।পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, মূল সেতুতে এখন শেষ মুহূর্তের কিছু কাজ চলমান আছে। জুনের মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। জুন মাসেই সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।দ্বিতল পদ্মা সেতুর ওপর চার লেনের সড়কে চলবে যানবাহন। ট্রেন চলবে নিচতলায় স্প্যানের ভেতর দিয়ে। শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সড়কপথ চালুর পর শুরু করা হবে রেলপথ বসানোর কাজ। কাজটি করবে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। আগামী জুলাইয়ে তাদের সেতুর ওপর রেলপথ বসানোর জন্য সাইট হস্তান্তরের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি জুলাই থেকে পদ্মা সেতুর ওপর রেলপথ স্থাপনের কাজ শুরু হলে পুরো কাজটি শেষ করতে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, মূল সেতুর ওপর রেললাইন স্থাপনের কাজ করার সময় সেতুতে ঝাঁকুনি তৈরি হবে। এ ঝাঁকুনির কারণে ওপর দিয়ে যান চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে। এ সময়ে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল কিছুটা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তারা।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, স্প্যানের ভেতরে রেললাইন স্থাপনের সময় সেতুতে কিছুটা ঝাঁকুনি তৈরি হবে। পরামর্শকরা বলছেন এ ঝাঁকুনিতে যানবাহন চলাচলে তেমন সমস্যা হবে না। তবে পদ্মা সেতুর যে নকশা ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা তাতে বিষয়টি স্পষ্ট করা নেই। আর আমাদের ঠিকাদার (চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড—সিআরইসি) বলছে, যানবাহন চলাচলে সমস্যা হতে পারে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পরিকল্পনা করছি রেলপথ বসানোর কাজ চলার সময় সেতুর ওপর যেসব যানবাহন চলবে, সেগুলোর গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ করার। এজন্য আমরা পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ চলাকালে সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ ছিল, যখন রেলপথ বসানোর কাজ হবে তখন যান চলাচল বন্ধ রাখার। কিন্তু আমরা যান চলাচল বন্ধ করতে চাইছি না। কারণ চালুর পর এক ঘণ্টার জন্যও যদি যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়, তাহলে সেতুর দুই পাশে দীর্ঘ যানজট দেখা দেবে। জনভোগান্তি তৈরি হবে। এ কারণে আমরা পরিকল্পনা করছি রেলপথ স্থাপনের সিংহভাগ কাজ রাতে বাস্তবায়ন করার। কারণ ওই সময় যানবাহনের চাপ কম থাকবে। একইভাবে যখন সেতুতে রেলপথ স্থাপনের কাজ চলবে, তখন ওপর দিয়ে চলা গাড়ির গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে বেঁধে দেয়ার পরিকল্পনাও আমরা করছি। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে কাজ চলাকালে সেতুর ঝাঁকুনি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করার কথা জানান তিনি।
অন্যদিকে যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প কর্তৃপক্ষের ওপর ছেড়ে দেয়ার কথা জানিয়েছেন পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা। প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন রেলপথের কাজ চলাকালে যানবাহন চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না। তার পরও রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা যদি কারিগরি ও প্রকৌশলগত কোনো পরামর্শ আমাদের দেন, তাহলে আমরা অবশ্যই তা রাখব। তারা যদি যানবাহনের গতি কম রাখার পরামর্শ দেয় এবং সেটা যদি কারিগরি ও প্রকৌশলগতভাবে যৌক্তিক হয়, তাহলে সেটা বাস্তবায়ন করতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই প্রসঙ্গত, ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। অন্যদিকে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ৫৪ শতাংশ। একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিনটি আলাদা অংশে বাস্তবায়ন করছে এ প্রকল্প। এর মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৭৭ শতাংশ। ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ।