সময় সংবাদ রিপোর্টঃ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব করা হয়েছে। গতকাল সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এ নিয়োগ দেন। এ ছাড়া পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব পদ থেকে মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী। এ বিষয়ে পার্টির দপ্তর থেকে জানানো হয়, পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারায় দলের চেয়ারম্যানকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কোনো ধরনের শোকজ কিংবা কারণ দর্শনোর নোটিশ ছাড়াই যে কাউকে বহিষ্কার করতে পারবেন।
তবে অব্যাহতি পাওয়া তিন নেতার ভাষ্য, দলের কাউন্সিল ঘোষণার পর কাউকে নিয়োগ দেওয়া বা অব্যাহতি কিংবা বহিষ্কারের এখতিয়ার দলের চেয়ারম্যানের নেই। এ সিদ্ধান্তে দলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নতুন দায়িত্ব পাওয়া মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এটি একটি বিশাল দায়িত্ব। পার্টির চেয়ারম্যান আমার ওপর আস্থা রেখে এ দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই আস্থার মূল্যায়ন করার চেষ্টা করব। সেই সঙ্গে তৃণমূলে দলকে জাগিয়ে তুলতে অনেক গণমুখী কর্মসূচি হাতে নেব।
এর আগে শামীম হায়দার পাটোয়ারী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং অতিরিক্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
এদিকে হঠাৎ পদ থেকে অব্যাহতির বিষয়ে মো. মুজিবুল হক চুন্নু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। জাতীয় কাউন্সিল ডাকার পর পদ থেকে বহিষ্কার করার কোনো এখতিয়ার নেই চেয়ারম্যানের। এটা বেআইনি। উনার সিদ্ধান্ত মানি না। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’
গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক যৌথ বিবৃতিতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত দুই কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, মুজিবুল হক চুন্নুকে বাদ দিয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব নিয়োগ দেওয়া চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং গঠনতন্ত্রের সরাসরি লঙ্ঘন। এটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাচারিতার বহির্প্রকাশ, যা পার্টির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তাদের দাবি, মুজিবুল হক চুন্নুই জাতীয় পার্টির বৈধ মহাসচিব। ঘোষিত কাউন্সিলের আগে চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে কোনো নিয়োগ বা বহিষ্কার কার্যকর নয়।
পার্টির একাধিক নেতার ভাষ্য, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারায় দলের কোনো ধরনের কারণ দর্শনোর নোটিশ ছাড়াই যে কাউকে পদ বা দল থেকে অব্যাহতি বা বহিষ্কার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যানকে, যা নিয়ে জ্যেষ্ঠ ও পুরনো নেতাদের একাংশের ক্ষোভ আছে। তাদের মতে, গঠনতন্ত্রের ওই ধারা পার্টির চেয়ারম্যানকে ‘স্বৈরাচারী’ করে তুলেছে। ঘোষিত কাউন্সিলে এ ধারা পরিবর্তনের বিষয়ে ভাবছে নেতাকর্মীরা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কাউন্সিল ইস্যুতে থেমে আছে দলটি।
দলের আরেক নেতার ভাষ্য, এমনিতেই জুলাই অভ্যুত্থানের পর দল খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে জিএম কাদেরের এ সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হতে পারে, যদি সিদ্ধান্তটি অদৃশ্য জায়গা থেকে না আসে। কারণ অতীতেও দেখা গেছে, নির্বাচনের আগে আগে দলটিতে মিনিটে মিনিটে অদৃশ্য নির্দেশনা আসত।
প্রসঙ্গত, মসিউর রহমান রাঙ্গাকে বহিষ্কার করে ২০২১ সালের ৯ অক্টোবর মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিব করেছিলেন জিএম কাদের।