Header Border

ঢাকা, মঙ্গলবার, ৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল) ২৪.৪৬°সে

বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্রীর মৃত্যু হতভাগ্য দুই পরিবার ফের শোকের সাগরে।

সময় সংবাদ রিপোর্টঃ  ইমাদ পরিবহনের বাস দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্রীর জীবন। তাঁদের দু’জনের পরিবারে আগেই রয়েছে বেদনাদায়ক কাহিনি। এ অবস্থায় তাঁদের মৃত্যুতে মর্মন্তুদ শোক গ্রাস করেছে পরিবার দুটিকে।

নিহত সুইটি আলম সুরভীর (২২) পাঁচ মাস বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। সে তার নানির সঙ্গে থাকে। সন্তানকে রেখে ঢাকায় ফেরার পথে মৃত্যু হলো তাঁর। কয়েক বছর আগে তাঁর ছোট বোন আত্মহত্যা করেন। সেই শোক আজও ভুলতে পারেনি পরিবারটি। এর মধ্যেই ঘটল বড় বোনের নির্মম মৃত্যু।

অন্যদিকে, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী আফসানা মিমি (২৬) সম্প্রতি স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ছোটবেলায় তিনি তাঁর বাবাকে হারান। তাঁর মা বহু কষ্টে তাঁকে লেখাপড়া শেখান। আশা ছিল, চাকরি করে মায়ের দুঃখ ঘোচাবেন। কিন্তু তা আর হলো না। মাকে চিরদুঃখের সাগরে ভাসিয়ে বিদায় নিয়েছেন তিনি।

শিশু আনাহিতার দুর্ভাগ্য: কন্যাসন্তান আনাহিতা বুঝতেই পারল না, তার মা সুইটি আর তাকে আদর করবেন না।  রোববার বিকেলে সুইটির মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে গোপালগঞ্জ শহরের পাচুড়িয়া এলাকার বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

গতকাল সকালে বাসটিতে সুইটিকে নিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন তাঁর বাবা মাসুদ আলম। দুর্ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান মাসুদ; কিন্তু ফিরলেন মেয়ের মরদেহ নিয়ে। সুইটির ছোট বোন আত্মহত্যা করেছেন চার বছর আগে। এবার বড় মেয়ের মৃত্যুশোকে নির্বাক সুইটির মা বিউটি খানম। তাঁর চোখের জল থামছেই না। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি।

দেড় বছর আগে রংপুরের রেজাউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় সুইটির। রেজাউর ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পড়ালেখা করার কারণে দুই মাস বয়স থেকে আনাহিতাকে মায়ের কাছে রেখে ঢাকার মিরপুরে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন সুইটি। ঢাকার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি।

সহপাঠী তিয়ানা আহমেদ বলেন, আমার এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়– সুইটি নেই! গত শনিবার রাতে আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল কোর্সের পড়াশোনা নিয়ে। সোমবার আমাদের ‘স্পিচ কমিউনিকেশন অ্যান্ড প্রেজেন্টেশন’ কোর্সে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার জন্যই ঢাকায় আসছিল। দুর্ঘটনার খবর শুনে আমরা তার বাড়িতে এসেছি। বিয়ে হওয়ার পর সুইটির সাংসারিক ব্যস্ততা বাড়লেও পড়াশোনা কমায়নি। বিসিএস দিয়ে প্রশাসনে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল তার।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের সমন্বয়ক অধ্যাপক তানজীরী জাহান বলেন, সুইটি খুব ভালো নাচ করত। বিভাগে খুবই পরিচিত মুখ ছিল। হাসিখুশি মেয়ে ছিল। ও নেই– তা মানতে কষ্ট হয়!

সুইটির বাবা মাসুদ আলম গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি থাকেন শহরের পাচুড়িয়া এলাকার বাড়িতে। সুইটির মামা নুরু মিয়া বলেন, তাঁর দুলাভাই মাসুদ এসেনসিয়াল ড্রাগসে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেন।

কষ্টের জীবন ছিল আফসানার: ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী আফসানা মিমির জীবন ছিল নিদারুণ কষ্টের। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। আফসানা হর্টিকালচার থেকে এমএস করেছেন। সার্টিফিকেট আনাতে ময়মনসিংহের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন তিনি।

তাঁর মা কানিজ ফাতেমার আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশও নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। আফসানা গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাংকপাড়ার বাসিন্দা প্রয়াত সরকারি কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামালের বড় মেয়ে।

গতকাল সকালে কানিজ ফাতেমা ও ছোট মেয়ে রুকাইয়া ইসলাম রূপা গোপালগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে থেকে আফসানাকে বাসটিতে তুলে দেন। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

আফসানার বাবা আবু হেনা বিআইডব্লিউটিসির  কর্মকর্তা ছিলেন। আফসানা ও রূপা ছোট থাকতেই প্রায় ২০ বছর আগে তিনি মারা যান। ছোটবেলা থেকে তাঁদের মা দুই মেয়েকে বহু কষ্টে বড় করেছেন। তাঁদের কখনোই বাবার অভাব বুঝতে দেননি। আফসানার বোন রূপা গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।  শনিবারও মায়ের জন্য এক মাসের ওষুধ কিনে দেন আফসানা। মেয়ের স্মৃতিচারণ করে আহাজারি করছেন কানিজ ফাতেমা।

মিমির প্রতিবেশী ও সাবেক কাউন্সিলর জাহেদ মাহমুদ বাপ্পী বলেন, আফসানা অত্যন্ত ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির ছিল। সদা হাসিখুশি এই মেয়েটি সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করত। তাদের সংসারে কোনো পুরুষ ছিল না। তার পরও তারা দুই বোন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যেই বড় হয়েছে। তার এই অসময়ে চলে যাওয়া সংসারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

আফসানার মামা এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানির কর্মকর্তা সাইফুল আলম লিটন বলেন, তাঁর ভাগনি সব সময় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখত। সেভাবেই সে নিজেকে প্রস্তুত করেছিল। ভালো চাকরি ও বাড়ি করবে। তারপরই সে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাবার মতোই বড় অসময়ে চলে গেল আফসানা। আমরা সবাই শোকে ভেঙে পড়েছি।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

মতিঝিল থেকে ২৮ হাজার ইয়াবাসহ শীর্ষ মাদক কারবারি গ্রেফতার
৪৪তম বিসিএসে ৪৩০টি পদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও এতে সায় দেয়নি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
সাবেক ৩ সিইসির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ
মব জাস্টিসের নামে কোন কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না বিএনপি : রিজভী
মাদকের করালগ্রাসে ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম
‘সমাজকে মাদকমুক্ত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে’

আরও খবর