সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্টঃ রাজশাহীত ও সিরাজগঞ্জ জেলায় জঙ্গী আস্তানায় জেএমবির আঞ্চলিক আমীর ও সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ আটজনকে আটক করা হয় । নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) আঞ্চলিক আমীর ও সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ পৃথক অভিযান চালিয়ে রাজশাহীতে চারজন এবং সিরাজগঞ্জে চারজনকে আটক করেছে র্যাব।অবস্থান করা বাড়িটি ঘিরে ফেলার পর সিরাজগঞ্জের চারজন আত্মসমর্পণ করে। এদিকে গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের একটি নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে ৩১ টি হাত বোমা উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। এ ঘটনায় দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়।
রাজশাহীতে আটক চারজন হলো- জেএমবির রাজশাহী আঞ্চলিক আমীর নাটোরের বাগাতিপাড়ার জুয়েল আলী ওরফে হাবিবুল্লাহ ওরফে মাহমুদ (৩৩), খুলনার খালিশপুরের আশরাফুল ইসলাম (২৪), পাবনার সাঁথিয়ার আলিফ হোসেন (২০) এবং সাতক্ষীরার নালতার জুয়েল শেখ (২২)। সিরাজগঞ্জে আত্মসমর্পণ করা চারজন হলো- জেএমবির রাজশাহী অঞ্চলের সেকেন্ড ইন কমান্ড পাবনার সাঁথিয়ার কিরণ ওরফে হামিম ওরফে শামিম (২২), একই এলাকার নাইমুল ইসলাম (২১), দিনাজপুরের কতোয়ালির আতিউর রহমান (২২) এবং সাতক্ষীরার তালার আমিনুল ইসলাম ওরফে শান্ত (২৫)।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব-৫ রাজশাহী এবং ঢাকা সদর দপ্তরের সদস্যদের একটি দল রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানা এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখান থেকে আঞ্চলিক আমীরসহ চারজনকে আটক করা হয়। এরপর তাদের দেয়া তথ্য এবং র্যাবের কাছে আগে থেকেই থাকা কিছু তথ্যের সমন্বয়ে গতকাল শুক্রবার ভোরে সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলার উকিলপুর এলাকার একটি বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়। এরপর চূড়ান্ত অভিযানের প্রস্তুতি নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে থাকা জঙ্গীদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। তখন জেএমবির রাজশাহী অঞ্চলের সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ চারজন র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
এদিকে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাজশাহীতে মাসিক সভা করার সময় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শাহজাদপুরের উকিলপাড়ার ওই বাড়ি ঘিরে রাখে র্যাব। প্রাথমিক অবস্থায় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ির ভেতর থেকে চার থেকে পাঁচটি গুলী ছোঁড়া হয়। এ অবস্থায় ওই বাড়ির আশপাশ থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়। সকাল ১০টার দিকে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির ভেতরে থাকা ওই চারজন আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় বাড়িটি থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, গান পাউডার, ফিউজ, জিহাদি বই, বিভিন্ন নির্দেশনামূলক বই, একটি চাপাতি ও দুটি রামদা উদ্ধার করা হয়। আর রাজশাহীতে গ্রেপ্তার চারজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কিছু সংখ্যক জিহাদী বই। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, আটক আট জঙ্গীকে সিরাজগঞ্জে র্যাব-১২ এর কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অভিযান শেষে দুপুর ১২টায় র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার ওই বাড়িটির পাশেই এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় রাজশাহীর শাহ মখদুম এলাকায় এক জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মাহমুদ, জুয়েল ও আশরাফুল নামের তিনজনকে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত ২টার দিকে র্যাবের একটি দল শাহজাদপুর উপজেলা সদরের উকিলপাড়া একটি বাড়ি ঘিরে রাখে। অভিযানে শাহজহাদপুর থানা পুলিশ সহযোগিতা করে। র্যাব-১২-এর মিডিয়া অফিসার (সহকারী পুলিশ সুপার) মুহাম্মদ মহিউদ্দিন মিরাজ জানান, চলতি নভেম্বর মাসের ৫ তারিখে ছাত্র পরিচয়ে তারা শাহজাদপুরের শেরখালির (উকিলপাড়া) ফজলুল হক মাস্টারের এই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। তাবলিগ জামাতের সঙ্গে মিশে তারা নিজেরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। শুক্রবার তাদের সাংগঠনিক মিটিং ছিল। বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় বিষয়টি জানার পরই বাড়িটি ঘিরে ফেলে র্যাব। র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ শুক্রবার ভোররাতে অভিযান শুরু করলে র্যাবের অবস্থান টের পেয়ে জঙ্গীরা র্যাবকে উদ্দেশ্য করে ৪-৫ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে।
এর আগে সকাল নয়টার দিকে র্যাব সদর দফতর থেকে হেলিকপ্টারযোগে শাহজাদপুরে আসেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার। গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীদের র্যাবের সদর দফতরে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এদেরকে শাহজাদপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে র্যাবের মিডিয়া অফিসার জানান। এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই বাড়িটি এখনো (শুক্রবার দুপুর আড়াইটা) ঘিরে রেখেছে র্যাব ও পুলিশ। বাড়িটির আশপাশে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। বাড়িটির পাশ দিয়ে স্থানীয়দের চলাচলও করতে দেয়া হচ্ছে না। স্থানীয় কয়েকজন জানান, শাহজাদপুরে এর আগে জঙ্গী ছিল না। হঠাৎ করে জঙ্গীদের অবস্থান তাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। তারা বলেন, ভয়ংকর জঙ্গীগোষ্ঠী শাহজাদপুরে ঘাপটি মেরে ছিল তারা বুঝতেই পারেনি। তবে বড় ধরনের ক্ষতিসাধনের আগেই র্যাব তাদের গ্রেফতার করায় তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
উত্তরার নির্মাণাধীন ভবনে রাখা ৩১টি হাতবোমা নিষ্ক্রিয়: রাজধানীর উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের একটি নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে ৩১ টি হাত বোমা উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। ভবনটিতে অবিস্ফোরিত বেশ কয়েকটি বোমা রয়েছে এমন খবর পেয়ে পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এরপর একে একে ৩১টি বোমা নিস্ক্রিয় করা হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তরা গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) কাজী শফিকুল আলম জানান, ওই বোমাগুলো মজুতে জড়িত থাকার অভিযোগে তুরাগ থানা এলাকার সুমন ও মামুন নামে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তারা দুজনই স্থানীয় যুবদলের নেতা। তারা কেন সেখানে হাতবোমাগুলো এনেছিল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ঢাকা-১৮ আসনে উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন ওই এলাকায় চারটি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে কামারপাড়া থেকে অবিস্ফোরিত বোমাগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা অবিস্ফোরিত বোমাগুলো উপ-নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন ব্যবহারের কথা ছিল।