সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট: মুক্তিযুদ্ধের ৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ও বীরউত্তম মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্তের মরদেহে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে সর্বস্তরের জনগণ। আজ ১ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার সকালে প্রথমে সিএমএইচের হিমাগার থেকে তার মরদেহ ওল্ড ডিওএইচএসের বাসভবনে নেয়া হয়।
সেখানে আত্মীয়-স্বজনদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর তাকে নেয়া হয় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখানে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এই বীর সেনানীকে সেনাবাহিনীর একটি দল সামরিক কায়দায় গান স্যালুট দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
এরপর তার মরদেহে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।
বেলা ১২টা পর্যন্ত এখানেই সি আর দত্তের মরদেহ রাখা হবে। এরপর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা শেষে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রাজারবাগ মহাশ্মশানে। সেখানেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে।
করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতীয় শহীদ মিনার ও পিতৃভূমি হবিগঞ্জে নেয়া হচ্ছে না সি আর দত্তের মরদেহ।
এর আগে গতকাল ৩১ আগস্ট, সোমবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় সি আর দত্তের মরদেহ। তারপর সেখান থেকে তার মরদেহ রাখা হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমাগারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় গত ২৫ আগস্ট, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার (নিউইয়র্ক সময় সোমবার রাত সাড়ে ১১টা) দিকে মারা যান চিত্ত রঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত) বীর উত্তম। তিনি বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
এর আগের বৃহস্পতিবার নিজ বাসভবনের বাথরুমে পড়ে যান সি আর দত্ত। এতে তার পা ভেঙে গেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ আগস্ট তার মৃত্যু হয়।
পৈতৃক বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি গ্রামে হলেও আসামের শিলংয়ে ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন চিত্ত রঞ্জন দত্ত।
১৯৫১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার কিছুদিন পর ‘সেকেন্ড লেফটেনেন্ট’ পদে কমিশন পান তিনি। সৈনিক জীবনে প্রথম যুদ্ধে চিত্তরঞ্জন দত্ত লড়েন ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে। এ যুদ্ধে আসালংয়ে একটা কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে পুরস্কৃত করে পাকিস্তান সরকার।
পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ যে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত হয়, তার মধ্যে ৪নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন সি আর দত্ত।
সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই শায়স্তাগঞ্জ রেল লাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট ডাউকি সড়ক পর্যন্ত এলাকা নিয়ে গঠিত এই ৪নং সেক্টরে বিশেষ অবদানের জন্য সি আর দত্ত বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন।
মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত বীর উত্তম সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাথে যুক্ত থাকা ছাড়াও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।